Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিক্ষোভ করলেই সরকারের পক্ষে দাবি পূরণ সম্ভব নয় প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিক্ষোভ করলেই সরকারের পক্ষে দাবি পূরণ সম্ভব নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারণ সরকার পরিকল্পনা এবং বাজেট ছাড়া দাবি পূরণ করতে পারে না। দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষকদের একটি অংশের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সরকারের শেষ বছরে এসে কেউ যদি মনে করেন সরকারের এটা শেষ বছর কাজেই দাবি করলেই আমরা সব শুনে ফেলবো, সেটা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের একটা বাজেট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে চলতে হয়।
গতকাল রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহ¯্রাধিক কলেজ অধ্যক্ষের অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘শিক্ষা সমাবেশে’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথায় কোথায় সরকারীকরণ করতে হবে, কোন নীতিমালার ভিত্তিতে করতে হবে, সেটাওতো একটা নীতিমালার ভিত্তিতেই হতে হবে। যখন-তখন যে কেউ দাবি করলে সেটাতো পূরণ করা সম্ভব নয়। সেটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। দেশের সম্পদের সীমাবন্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, দিলেই আরো দাও আরো দাও করলে আমরা দিতে অপারগ হবো। কারণ আমাদের একটা বাজেট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে চলতে হয়।
ক্ষমতায় থাকার জন্যই কেবল রাজনীতি করেন না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। আপনাদের হাতেই রয়েছে জাতির ভবিষ্যত। একজন শিক্ষকের কাছে আমি এটুকুই চাই, আপনারা কতটুকু দিতে পারলেন; করতে পারলেন। কি ধরনের শিক্ষাটা আপনারা দিয়ে যেতে পারলেন যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, দেশকে আরো উন্নত করতে পারবে- সেটাই হচ্ছে বড় কথা।
বর্তমান সরকার দেশের বাজেট ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের বেতন-ভাতা অনুদান তার সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারী-বেসরকারী সব জায়গায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না।
জাতির জনকের স্বপ্ন অনুয়ায়ী দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তার লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নিজের বা দলের সম্পদ গড়ে তোলা বা নিজেরা সম্পদশালী হওয়া তার নীতি নয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেদের (তার এবং ছোট বোন শেখ রেহানার) সামান্য সম্পদটুকুও রাষ্ট্রের জন্য ট্রাষ্ট করে দান করে দেয়া এবং তাদের সন্তানরা নিজেদের উপার্জিত অর্থ দিয়েই অত্যন্ত কষ্টকরে লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষকদের আরো আধুনিক হতে হবে। শিক্ষিত জাতি ছাড়া একটা দেশে উন্নয়ন সম্ভব নয়। মেধাশুন্য দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার দিক নির্দেশনায় প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীতি-আদর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ‘একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা’, ‘নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান’ এবং ‘সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ’ করার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে দেশের সাক্ষরতার হার তার সরকারের রেখে যাওয়া ৬৫ দশমিক ৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে নিয়ে আসে। অথচ, বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আরো বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তোলার সময়ই প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছিলেন। তিনি নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তাদের শিক্ষাও অবৈতনিক করেছিলেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা সকল দল-মত নির্বিশেষ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা আর অন্তত ৩ বা ৪ বছর সময় পেলেই বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার দেখানো পথেই তার সরকার ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করেছে।
১৯৭২ সালে জাতির পিতা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে চেয়ারম্যান করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন বঙ্গবন্ধুর হাতে রিপোর্ট পর্যন্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতির পিতা পদক্ষেপ নেয়ার সময় পাননি। তার আগেই তাকে হত্যা করা হয়।
জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলে বিএনপির দেয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা দেশকে কিছু দিতে পারে না। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে যুদ্ধাপরাধী, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়াটাই যদি বহুদলীয় গণতন্ত্র হয় তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুবিধা বঞ্চিত বিশেষ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী কিংবা ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠ দান, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সহায়ক সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষার সময় বাড়িয়ে দেয়া, আনন্দ স্কুলসহ বিশেষায়িত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্র স¤প্রসারণ ও মানোন্নয়নসহ সবক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসেইন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ভবন, প্রকল্প ও স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
###



 

Show all comments
  • বিপ্লব ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৫৮ এএম says : 0
    আসলেই এই বিষয়টি সবার বুঝা উচিত।
    Total Reply(1) Reply
    • Mohammad Ibrahim ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:১৬ এএম says : 4
      আন্দোলনের বিষয়টি যথাযত যুক্তিসঙ্গত কিনা দেখতে হবে
  • আমিনুল ইসলাম ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৫৯ এএম says : 0
    বিষয়টি স্পষ্ট করে বলে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • এইচ এম মাকসুদ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:২২ এএম says : 0
    পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস করে নকল করে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে নীতিবান মহৎ অশিক্ষিত ব্যক্তি অনেক ভাল।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সালাউদ্দিন ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:২২ এএম says : 0
    প্রশ্ন ফাঁস হওয়া পরিক্ষায় উত্তীর্ণ জাতী কখনোই দেশ দশের জন্য ভালো কিছু করতে পারেনা
    Total Reply(0) Reply
  • শামিম ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:০১ এএম says : 0
    কিছু মানুষের বেতন দ্বিগুন করে অন্যদেরকে বঞ্চিত করা সুষ্ঠু নীতি হতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Faiz Bulbul ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:৪১ পিএম says : 0
    Beton aro komao.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ