Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাড়ে ছয় কোটি ডলার উদ্ধার অনিশ্চিত দীর্ঘ সময়ে প্রকাশ করা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন, শাস্তির আওতায় আসেনি দায়ীরা

রিজার্ভ চুরির দু’বছর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির দুই বছর পূর্ণ হলেও চুরি হওয়া সম্পূর্ণ অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে মাত্র এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি। এই টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনকি এই দীর্ঘ সময়ে প্রকাশ করা হয়নি এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনও।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি হ্যাকিংয়ের এই ঘটনা ঘটে। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার জন্য তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও কর্মকর্তাকেই এখন পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। যদিও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি)। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেনÑ এত সময় পার হওয়ার পরও অর্থ উদ্ধার সম্ভব না হওয়া দু:খজনক। যেহেতু ঘটনাটি আন্তর্জাতিকভাবে ঘটেছে তাই আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা।
চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফিরে আসে গত দুই বছরে, আর ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ফিরে এসেছে মাত্র ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। স¤প্রতি মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির জানিয়েছেন, আরও ১২ লাখ ডলার ফেরত আনার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে অগ্রগতি আছে। সে জন্য গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি প্রতিনিধি দল বর্তমান ফিলিপাইনে অবস্থান করছে। তবে বাকি প্রায় ৬ কোটি ডলার উদ্ধার হবে কিনা, হলেও সেটি কবে তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য নেই।
‘বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, অর্থ উদ্ধারে মামলা করতে আইনি নানা দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে’, জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।
অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপাইন সরকারের সংশ্লিষ্টরা শুরুতে সব ধরণের সহযোগিতা দিয়ে আসলেও হঠাৎ রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক করপোরেশন (আরসিবিসি) বলেছে, এর দায় বাংলাদেশের। এরপরই বলতে গেলে বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধার প্রক্রিয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন বলেন, ২ বছরেও অর্থ উদ্ধার হয়নি, এটি দু:খজনক। এখন অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে দ্রæত আইনি প্রক্রিয়ায় এগোতে হবে। এর বিকল্প নেই। তবে এর আগে ফিলিপাইনের সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
এখন পর্যন্ত জানা গেছে, ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে যে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার গেছে তা ফিলিপাইনের আদালত ফ্রিজ করে দিয়েছে। এটি দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং এর দুইজন কর্মচারীর হিসাবে ১২ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। সে দেশের আদালতের আদেশ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট হিসাব হতে কেউ ওই অর্থ উত্তোলন করতে পারবে না। এ পরিমান অর্থ বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি ম্যানিলার রিজিওনাল কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানীর অধীনে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার রয়েছে। এ অর্থ উদ্ধারের জন্য ফিলিপাইন সরকারের দায়ের করা মামলাটি বিচারাধীন। ইতোমধ্যে দায়ীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সনাক্ত করা হয়েছে। বাকি অর্থের সন্ধান মেলেনি।
অন্যদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার এক মাস পরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও আজও তা প্রকাশ করেনি সরকার। এছাড়া ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে ফরেনসিক অনুসন্ধানও শেষ হয়েছে। একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে এই অনুসন্ধান করা হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, ফরেনসিক অনুসন্ধানের সঙ্গে অর্থ উদ্ধারের কোন সম্পর্ক নেই। মূলত কারিগরি বিষয়ের জন্য ওই অনুসন্ধান করা হয়।
এছাড়া অর্থ ফেরত আনতে সরকারের একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। ২ বছরে টাস্কফোর্সের ৫ টি বৈঠক হয়েছে। এতে ১৫টি সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ৯টি বাস্তবায়ন হয়নি। ওই ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাস্কফোর্স থেকে এই মামলার তদন্ত দ্রæত করার তাগিদ দেয়া হলেও তদন্তের তেমন অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সংরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরি হলে তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন।#######



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজার্ভ চুরি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ