Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

‘স্বীকৃতি আর নাগরিকত্বেই’ রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান

রাখাইনে ‘গণহত্যার আলামত’

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের মানবাধিকার-বিষয়ক জাতিসংঘ দূত ইয়াংহি লি বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত সেনা অভিযানে ‘গণহত্যার আলামত’ পাওয়া যাচ্ছে। দিনকে দিন সেই আলামত স্পষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। জোর করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানোর আহŸান জানিয়ে তিনি বলেছেন, তাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে জাতিগত স্বীকৃতি এবং নাগরিকত্ব নিশ্চিতকেই মূল বিবেচনায় রাখা উচিত। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে সরেজমিনে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখার পর বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়াংহি লি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের বার্তা সংস্থা ইউএনবি এবং ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি লি’র বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে এসব কথা জানিয়েছে।

পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে গত ডিসেম্বরে মিয়ানমারের মানবাধিকার-বিষয়ক বিশেষ জাতিসংঘ দূত ইয়াংহি লির রাখাইন সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকার। রাখাইন ঘুরে তার বাংলাদেশে প্রবেশের কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ১৮ জানুয়ারি থেকে এক সপ্তাহের জন্য রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আসেন। সে সময় কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন তিনি।
থাইল্যান্ড হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ফিরে ইয়াংহি লি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিশ্বাসযোগ্য কোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত তিনি গণহত্যার ব্যাপারে সরাসরি কোনো ঘোষণা দিতে পারেন না। অবশ্য তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের আলামত দেখছি এবং ধীরে ধীরে তা জোরালো হচ্ছে।’
২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমারে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালান। বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয় তারা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে ইয়াংহি লি মার্চের জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বৈঠকে প্রতিবেদন দেবেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে থাকা কোনও রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না। এই মুর্হর্তেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আহŸান জানিয়েছেন লি। বলেছেন, প্রত্যাবাসন হতে হবে ‘রোহিঙ্গাদের জাতিগত স্বীকৃতি আর নাগরিকত্বের নিশ্চয়তাকে মূলনীতি আর প্রধানতম বিবেচনা হিসেবে নিয়ে’।
এপির অনুসন্ধানে মিয়ানমারে নতুন পাঁচটি গণকবর চিহ্নিত হয়েছে। রাখাইনের গু দার পাইনের একই এলাকার ওই পাঁচ গণকবরে চার শতাধিক মানুষের মরদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২৪ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নতুন গণকবরের সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এপি। নিপীড়নের অভিযোগকারীদের কেউ কেউ নিজেদের দাবির পক্ষে সময়-চিহ্নিত ভিডিও সরবরাহ করেছেন। পরে নির্দিষ্ট ওই অঞ্চলে গিয়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেও প্রবেশাধিকার না থাকায় ব্যর্থ হয় এপি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইয়াংহি লি বলেন, তার কাছে ওই গ্রামের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই। তবে এ ঘটনায় একধরনের নমুনা পাওয়া যায়। এ ধরনের প্রতিবেদনকে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এ জন্যই আমরা উত্তর রাখাইনে তথ্য অনুসন্ধানী মিশন ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রবেশের আহŸান জানিয়েছি। মিয়ানমারের পদক্ষেপ মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। এসব গণহত্যার বৈশিষ্ট্যের অংশ।’
জাতিসংঘের বিশেষ দূত মনে করেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দূর করার স্বার্থে দেশটির দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও তাদের পরিবারের প্রতেক্যেরই একটা উত্তর পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই সব ধরনের পদক্ষেপ দরকার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ