Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বাঁধ রক্ষায় পাউবোর বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

ঢাকায় তৃতীয় জাতীয় জলবায়ু শুনানি অনুষ্ঠিত

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১১ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮


স্টাফ রিপোর্টার : দেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা রয়েছেÑ এমন অভিযোগ তুলে এ দায়িত্ব স্থানীয় সরকারকে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে গ্রামীণ জীবনযাত্রায় স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) আয়োজিত তৃতীয় জাতীয় জলবায়ু শুনানিতে জনপ্রতিনিধি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এই সুপারিশ করেন।
শুনানিতে জনপ্রতিনিধি প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন কয়রা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ মÐল ও গাইবান্ধার পৌরসভার কাউন্সিলর দিলরুবা পারভীন ঝর্ণা।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পৌনঃপুনিক বন্যার কারণে মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে বাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বলে অভিযোগ তোলেন এই প্রতিনিধিগণ। যেহেতু যে কোনো দুর্যোগের প্রথম ধাক্কাটা স্থানীয় সরকারকেই সামলাতে হয়, তাই বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের ওপর দেয়ার দাবি তোলেন তারা।
পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও প্রফেসর এমিরেটাস আইনুন নিশাত ঝুঁঁকিপ্রবণ অঞ্চলে বাঁধগুলোর উচ্চতা বাড়ানোর কথা বলেন। সে ক্ষেত্রে সময়মতো ‘প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি’ গঠন করা ও কাজটি সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
শুনানিতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী টেকসই উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, কাউকে পেছনে ফেলে যাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে উপক‚লীয় মানুষের কথা ভাবতে হবে। বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের ভ‚মিকা থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়াও সংসদে শুনানি হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং কার্যকর অ্যাকশন প্ল্যান ও নাগরিক কমিটি গঠন করতে হবে, যাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
শুনানিতে বাংলাদেশ বাঁধ ব্যবস্থাপনার আদ্যোপান্ত ও করণীয় বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা ও নারী-শিশুর সম্মানজনক পুনর্বাসনে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নগদ অর্থ সহায়তার ব্যাপারেও সরকারের দৃষ্টি দেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তারা। এ ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনানুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি তোলেন বিশেষজ্ঞরা।
তৃতীয় জাতীয় জলবায়ু শুনানি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বার্থ রক্ষায় আট দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সিএসআরএল সভাপতি কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ শুনানি শেষে প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো পড়ে শোনান। আট দফা সুপারিশগুলো হলোÑ বাংলাদেশ সংবিধান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মানুষের জীবন-জীবিকা টেকসই করার ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের আর্থসামাজিত অগ্রগতির সুফল ন্যায্যভাবে সবার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টেকসই উন্নয়নে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত হরতে হবে; কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। উপক‚ল ও নদী তীর ও অন্যান্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের পারিপার্শ্বিকতা ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে তাদের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত মোকাবেলায় প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার কতে হবে। বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। বেড়িবাঁধসহ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে নির্মাণব্যয়ের সাথে সাথে যৌক্তিক ব্যবহারের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে। স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের বেড়িবাঁধসহ স্থানীয় অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে সম্পৃক্ত করা জরুরি। ভুক্তভোগী স্থানীয় মানুষেরও সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। দ্রæত পরিবর্তনশীল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন চিন্তার ও নতুন পদ্ধতিতে কাজ করা প্রয়োজন। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করতে হবে; বাঁধ মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করতে হবে।
শুনানিতে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালরিবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক মাহবুবা নাসরীন, ইউনিভার্সিটি অব গেøাবাল ভিলেজের ভাইস চ্যান্সেলর জাহাঙ্গীর আলম খান, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এ আতিক রহমান এবং জলবায়ু অভিযোজন ও তহবিল বিশেষজ্ঞ আহসান উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়াও বাঁধ অব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজনও এতে অংশ নেন।
শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সিএসআরএল সভাপতি কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। শুনানি শেষে তিনি বিভিন্ন প্যানেল থেকে প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো পড়ে শোনান। শুনানি সঞ্চালনা করেন সিএসআরএলের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক মুক্তা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ