Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গ্রেফতার রায়পুরার ৪ পুলিশ রিমান্ডে

এসআই সাখাওয়াতের নৌ-ডাকাতিসহ বহু অপরাধের বিচার হয়নি

| প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : ডিবি পরিচয়ে স্ব-শরীরে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার রায়পুরা থানার এসআই সাখাওয়াত ও এসআই আজহার আলীসহ ৭ ডাকাতকে রিমান্ড নিয়েছে ডিবি পুলিশ। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই আবদুল গাফ্ফার গ্রেফতার ৪ পুলিশসহ ৭ ডাকাতের ৭ দিন করে রিমান্ড দাবী করে আদালতে আবেদন পেশ করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন ও কোর্ট পুলিশের বক্তব্য শুনানীশেষে নরসিংদী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনা আক্তার ৪ পুলিশকে ৩ দিন ও ৩ ডাকাতকে ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে রায়পুরা থানার ২ এসআইসহ ৪ পুলিশের ডাকাতির ঘটনা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশের পর নরসিংদীসহ সারাদেশে জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ডাকাতি মামলায় ২ এসআইসহ ৪ পুলিশকে গ্রেফতার ও মামলার ঘটনা নরসিংদীতে ‘টক অব দি টাউনে’ পরিণত হয়েছে। মানুষ বলছে রক্ষকরা ভক্ষক হলে এ ভক্ষকদের বিচার কে করবে ? যারা ডাকাত গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার কথা, তারা যদি ডাকাতি করে তবে ডাকাতি বন্ধ হবার কোন পথ থাকে না। রাষ্ট্রের অঙ্গীকার, জনগণ রাষ্ট্রকে ট্যাক্স দিবে, বিনিময়ে রাষ্ট্র জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করবে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তার শপথ নিয়ে পুলিশ নিজেরাই যদি জানমালের জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায় তবে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার ভঙ্গ হয়ে যায়। রায়পুরা থানার দুই এসআই’র ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতারের খবর প্রচারিত হবার পর রায়পুরার ভূক্তভোগী জনগণের মধ্যে সবচে বেশী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছে, প্রবাসী সোহেল মিয়ার গাড়ীতে ডাকাতির ঘটনার সাথে এসআই সাখাওয়াত, এসআই আজহার আলীসহ শুধু ৪ পুলিশ জড়িত নয়। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণকারী আরো কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখতে হবে। এসআই সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে গত বছরের শেষ দিকে রায়পুরার মেঘনায় ২৯ জন গরু ব্যবসায়ীর নৌকা থেকে ৭০ লক্ষ টাকা ডাকাতির অভিযোগ উঠেছিল। ব্যাপারটি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় ব্যাপকভাবে লেখালেখি হয়েছে। তখন রায়পুরা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে এসআই সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগে কোন তদন্ত হয়েছে বলে জানা যায়নি। কিছুদিন পূর্বে কোন এক প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসআই সাখাওয়াত নরসিংদী থেকে আমিনুল হক খোকা নামে এক ব্যবাসায়ীকে গ্রেফতার করে রায়পুরা নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার নিকট থেকে নগদ ১ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এরপরও তাকে একটি হত্যা মামলায় ঢুকিয়ে কোর্টে চালান করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ঘটনারও কোন তদন্ত হয়েছে বলে জানা যায়নি। অতি সম্প্রতি এসআই সাখাওয়াত, বজলুর রহমান নামে নিলক্ষার এক ব্যক্তিকে বাড়ী থেকে ধরে এনে তাকে গুম করে ফেলে বলে তার স্ত্রী অভিযোগ করে। এ ব্যাপারে নরসিংদীর আইনজীবীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। এরপরও এসআই সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হতে দেখা যায়নি। নরসিংদী থানায় ঢুকে ডাকাতির ঘটনা তার সর্বশেষ অপরাধ। এমনিভাবে এসআই সাখাওয়াত রায়পুরার বহুসংখ্যক মানুষের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহণসহ ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এসআই সাখাওয়াত ও তার নিয়ন্ত্রকদের ভয়ে থানায় অভিযোগ করতেও সাহস পায়নি। রায়পুরার সচেতন জনগণ বলছে, থানা থেকে কোন পুলিশ কর্মকর্তা আসামী ধরা বা কোন কাজে বের হলে থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়ে যাবার বিধান রয়েছে। কর্মকর্তারা থানা থেকে বেরিয়ে সঠিক জায়গায় গিয়েছে কি না তা মনিটরিং করার বিধানও রয়েছে। এক্ষেত্রে এসআই সাখাওয়াত বার বার তার নিজের এলাকা ছেড়ে বাইরের থানায় গিয়ে ডাকাতি করা বা লোকজন ধরে নিয়ে টাকা আদায় করার সুযোগ কিভাবে পায় তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। জনগণ বলছে, এসআই সাখাওয়াত ও এসআই আজহার আলীসহ ৪ পুলিশের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হলেও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হবার বিধান রয়েছে। এরপরও পুলিশ হয়ে সরাসরি ডাকাতির করার ঘটনা তদন্তের জন্য প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন করা একান্ত প্রয়োজন। তারা আরো বলেন, ডিবি পরিচয়ে এসআই সাখাওয়াত যেমন ডাকাতি করেছে, তেমনি ডিবি পরিচয়ে মনোহরদী, রায়পুরা, মাধবদীসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বাড়ী, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষকে আটক করে টাকা আদায় করার ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ ডিবি পুলিশ আতংকে দিন কাটাচ্ছে। একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করে এ ব্যাপারে এখনই তদন্ত করার মোক্ষম সময়। এতে ডিবি পরিচয়দারী পুলিশ যেমন নিজস্ব সীমা অতিক্রম করার সুযোগ পাবে না, তেমনি প্রশাসনিক ভাবমর্যাদা আরো উজ্জ্বল হবে। জনসাধারণ জানমালের নিরাপত্তা পাবে। সরকাররের প্রতি মানুষের আস্থা আরো জোরদার হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ