Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রকাশনা মালিকদের সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


মালেক মল্লিক : সরকারি অনুমোদনহীন নোট, গাইড বই প্রকাশনা মালিকদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে পাঁচটি প্রকাশনী সংস্থার বরাবর ব্যাংকের লেনদেন সংক্রান্ত হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। আর ১৭ প্রকাশনী মালিকদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। সরকারি বিভিন্ন দফতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে প্রকাশনা সংস্থাগুলো অবৈধভাবে নোট ও গাইড ছাপা ও বাজারজাতের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করেছে রাষ্ট্রের একমাত্র দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা দুদক। যাদের নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কমিশন। ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে অবাধে নোট, গাইড বই সরবরাহ করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে বাধাগ্রস্তের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এর আগে কোচিংবাণিজ্য ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা কোচিংবাণিজ্যের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালায় দুদক।
প্রকাশনীর মালিকদের সম্পদের হিসাব বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিভিন্œ প্রকাশনীর মালিকদের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। অনুসন্ধানের জন্য একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে বলেও তিনি জানান। ১৯৮০ সালের নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইন বিদ্যমান রয়েছে। এই আইন অনুসারে গাইড ও নোট বই ছাপা ও বাজারজাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীদের শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদÐ ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে। এ ছাড়া ২০০৭ সালে নোট ও গাইড বই বিক্রি বন্ধের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত নির্দেশ দেয়া হয়। যদিও ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন পেশ করেছিলেন প্রকাশনী মালিক সমিতির নেতারা।
দুদক সূত্রে জানা যায়, সরকারি অনুমোদনহীন নোট, গাইড বই ছাপিয়ে ও বিক্রি করে ট্যাক্স, ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে প্রকাশনীর মালিকদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ স¤প্রতি দুদকে আসে। অভিযোগে বলা হয়, আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে নোট, গাইড বই প্রকাশনীর মালিকরা বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদের নামে-বেনামে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমিসহ অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু সংখ্যক শিক্ষক অনৈতিকভাবে নোট, গাইড বইয়ের ব্যবসা থেকে সুবিধা নিচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগে। এতে আরো বলা হয়, ওইসব অসাধু শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে সৃজনশীলতার সঙ্গে পাঠদান না করে শিক্ষার্থীদের ঠেলে দিচ্ছেন ভুলে ভরা নোট, গাইড বইয়ের দিকে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ধাবিত করা হচ্ছে মুখস্থ বিদ্যার দিকে। ইতোমধ্যে ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী নোট, গাইডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পরে অভিযোগটি যাচাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এরপর ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ারের নেতৃত্বে চার সদস্যের বিশেষ টিম অভিযোগটির অনুসন্ধান শুরু করে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম, সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ ও মাসুদুর রহমান। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর দুদকের একটি বিশেষ টিম আকস্মিকভাবে নীলক্ষেতের হজরত শাহজালাল মার্কেট, বাবুপুরা মার্কেট, বাকুশাহ মার্কেট, ইসলামীয়া মার্কেটের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে অনুসন্ধান চালায়। এতে দেখা যায়, বাজারের প্রতিটি দোকানে অননুমোদিত নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন নামে বিভিন্ন কোম্পানির গাইড বই বিক্রি হচ্ছে।
পাঁচ প্রকাশনীর কাছে দুদকের চিঠি : ব্যাংক লেনদেন ও ট্যাক্স, ভ্যাট সংক্রান্ত হিসাব চেয়ে এরই মধ্যে পাঁচ প্রকাশনীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এগুলো হলোÑ পাঞ্জেরী, লেকচার, অনুপম, রয়েল ও জুপিটার। চলতি সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে ওইসব হিসাব পেশ করতে হবে। অভিযুক্ত ২২ প্রকাশনীর মধ্যে পাঁচটির সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। বাকি ১৭ প্রকাশনার মধ্যে রয়েছেÑ আল ফাতাহ, হাসান বুক ডিপো, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন, গ্যালাক্সি, জননী, আদিল, দিগন্ত ক্যামব্রিয়ান, গেøাবাল, ক্যাপ্টেন, ক্লাসিক, জ্ঞানগৃহ, মিজান লাইব্রেরি, কাজল ব্রাদার্স, পপি, দি রয়েল সায়েন্টিফিক ও নবদূত। পর্যায়ক্রমে এসব প্রকাশনীর সম্পদের অনুসন্ধান করা হবে। ১৯৮০ সালে আইন প্রণয়ন করে নোট বই নিষিদ্ধ করে। আইন অমান্যকারীদের শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদÐ ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে। পরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নোট বই, গাইড বই বিক্রি বন্ধের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত নির্দেশ দেয়া হয় ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন পেশ করেছিলেন। একই বছরের ১৩ মার্চ হাইকোর্টের এক রায়ে নোট বইয়ের সঙ্গে গাইড বইও নিষিদ্ধ করা হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ