Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নামমাত্র মূল্যে জমি বরাদ্দ : আয় বঞ্চিত রেল

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সরকারি প্রকল্পে, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও নামমাত্র মূল্যে বিভিন্ন সময়ে জমি বরাদ্দ দিয়েছে রেলওয়ে। অথচ রেলওয়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকল্পে বাজারদরে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। বরাদ্দ দেয়া-নেয়ার হিসাবের ফারাকে কোটি কোটি টাকা আয় বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পেই নয়, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও নামমাত্র মূল্যে বিভিন্ন সময়ে জমি বরাদ্দ দিয়েছে রেলওয়ে। অনেক সময় রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তিতে কোটা সুবিধার বিনিময়েও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র মূল্যে জমি দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, স¤প্রতি ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য রেলওয়ের দশমিক ৩৩ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এজন্য ১০০ কোটি টাকা মূল্য চেয়েছিল রেলওয়ে। যদিও মাত্র এক লাখ টাকায় জমিটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণে নারায়ণগঞ্জে ১১ দশমিক শূন্য ২ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরকে। জমির মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি হলেও মাত্র এক কোটি টাকায় তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
২০০৫ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তার স্ত্রীর মালিকানাধীন মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাকে রেলওয়ের দশমিক ২৫ একর জমি বরাদ্দ দেন। সচিবালয়ের পাশে অবস্থিত সে জমির বাজারমূল্য ছিল কয়েক কোটি টাকা। অথচ মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় সে জমি বরাদ্দ দিয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত হন নাজমুল হুদা। এরপর প্রতীকী মূল্যে রেলের জমি বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছিল কিছুদিন। তবে পরবর্তী সময়ে আবারও রেলের জমি প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চার দফা জমি দেয় রেলওয়ে। তবে প্রতিবারই বাণিজ্যিক দরে জমি দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের মতে, রেলের আয় বাড়ানোর জন্য এ ধারা অব্যাহত রাখা উচিত ছিল। কারণ উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া রেলওয়েকেও বিভিন্ন প্রকল্পে বাজারদরে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শীতলক্ষ্যা সেতু ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন প্রকল্পে সওজকে ১৮ একর জমি দিয়েছে রেলওয়ে। বাজারদরে এসব জমির দাম ১০০ কোটি টাকারও বেশি। অথচ এসব জমির প্রতীকী মূল্য ছিল মাত্র এক লাখ টাকা। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভাকে দশমিক ৫০ একর জমি দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকায়। অন্যদিকে, শিক্ষা বোর্ডকে তিন দশমিক ৪৮ একর জমি দেওয়া হয়েছে দুই কোটি টাকায়। এর বাইরে চট্টগ্রামে বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র নির্মাণে দশমিক ৬১ একর জমির প্রতীকী মূল্য নেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা, বিজিএমইএকে দশমিক ৩৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকায় এবং চট্টগ্রামে ইসলামিক মেডিক্যাল মিশন ইউএসটিসিকে এক দশমিক ৫৭ একর জমি দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯৪ হাজার ২০০ টাকায়। এর আগেও তিন দফা ইউএসটিসিকে তিন দশমিক ৭৮ ও দুই দশমিক ৪৩ একর জমি দেওয়া হয়। এগুলোর মূল্য ছিল যথাক্রমে পাঁচ টাকা ও ১০ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, কিডনি ফাউন্ডেশনকে দুই দফায় এক দশমিক ২১ একর জমি দিয়েছে রেলওয়ে। এতে দাম নেওয়া হয় ১১ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিকে দেওয়া এক একর জমির মূল্য রাখা হয় পাঁচ হাজার টাকা। বাংলাদেশে মানসিক প্রতিবন্ধী কল্যাণ ও শিক্ষা সমিতিকে দেওয়া দশমিক ৩২ একর জমির মূল্য রাখা হয় দুই হাজার ৫০০ টাকা। সোসাইটি ফর অ্যাসিসট্যান্ট টু হিয়ারিং ইম্পেয়ার্ড চিলড্রেকে দেওয়া দশমিক ৬০ একর জমির মূল্য রাখা হয় তিন হাজার টাকা। এর বাইরেও আরও ২২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জমি দিয়েছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমান রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক দায়িত্ব নেয়ার পর বেসরকারি খাতে রেলের জমি বরাদ্দ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে নামমাত্র মূল্যে জমি বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ