পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আব্দুল্লাহ আল ফারুক, ইবি থেকে : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবা গত রাত পৌনে চারটার দিকে ঝিনাইদহের গড়াগঞ্জের বড়দাহ নামক এলাকায় এঘটনা ঘটে। তবে কে বা কারা হামলা করেছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে পুলিশের সহায়তায় ভিসি ক্যাম্পাসে আসেন। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেও তার মানিব্যাগ ও মোবাইল হারিয়ে গেছে বলে জানা যায়। বর্তমানে তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।
ভিসির ভাষ্য মতে, ঢাকায় প্রোগ্রাম শেষে রাত সোয়া ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। আমি সাধারণত পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ফেরি ঘাট দিয়ে পার হয়ে রাজবাড়ি-কুষ্টিয়া রুটে ক্যাম্পাসে আসি। তবে আমার সাথে ব্যক্তিগত সহকারী রেজাউল করিম থাকায় তাকে বাসায় নামিয়ে দেওয়ার জন্য এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিজের যাতায়াতের সাধারণ রুট পরিবর্তন করে নতুন রুট ঝিনাইদহ দিয়ে প্রবেশ করে ক্যাম্পাসে আসার সিদ্ধান্ত নেই। রেজাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমরা ক্যাম্পাসের দিকে আসতে থাকি। গাড়াগঞ্জ পার হওয়ার পর হঠাৎ আমার গাড়ি সামনে একটি গাছের গুড়ি দেখতে পেয়ে গাড়ি থামিয়ে দেন চালক। বিপদ বুঝতে পরে হর্ণ দেয় এবং গাড়ি ঘুরিয়ে পিছন দিকে যাওয়ার চেষ্ট করে চালক। কিন্তু রাস্তায় ট্রাক থাকায় গাড়ি ঘোরাতে ব্যর্থ হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে গাড়ির বাম পাশের গøাসে আঘাত করতে থাকে কে বা কারা। গাড়িতে হামলা হয়েছে বুঝতে পেরে চালক ঝুকি নিয়ে গাড়ি টান দিয়ে গাছের গুড়ির নিকটে নিয়ে যায় গাড়ি। গাছ টপকিয়ে আসতে চাইলেও গাছটি মোটা হওয়াতে তা সম্ভব হয় না। এতক্ষণে হামলা কারীরা বেশ খানিকটা পিছনে পড়ে যায়। আমি ঠিক কি করব তা বুঝতে পারছিলাম না। এই ফাঁকে আমার চালক বলেন ‘স্যার আপনি গাড়ি থেকে বের হয়ে পালান।’ চালকের কথা শুনে আমার বুঝ ফিরে আসে। আমি প্রাণ বাঁচাতে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেই। কিন্তু হামলাকারীরা আমাকে খুজে পেয়ে যায়। তারা আমার দিকে শক্তিশালী টর্চলাইট ধরে এগুতে থাকে। এ সময় আমি তাদের হাতে রামদা দেখতে পাই। তখন আমি মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম। রামদা দেখে আমি শেষ বারের মতো আল্লাহর নাম নিলাম। তারা আমার কাছে এসে টাকা দাবি করে। তখন আমি দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে আশ্বস্থ হই। এরপর আমি তাদের জানাই আমার গাড়িতে টাকা আছে। তারা আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু তখন আমি গাড়ির ভেতর মানি ব্যাগ পাই না। আমার মনে হয় তারা আগেই আমার মানি ব্যাগ নিয়েছে। ‘মানি ব্যাগ পাচ্ছি না’ একথা শুনে তারা গালমন্দ করতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে ল্যাপটপ দিতে চাইলাম। কিন্তু তারা ল্যাপটপ নিল না। এতক্ষনে আমার গাড়ি পেছনে বেশ কিছু ট্রাক এসে জমেছে। অনেক গাড়ি হর্ণ বাজাচ্ছে। হামলা কারীরা আমাকে গাড়ি পাশে রেখে বলে ‘এক পা নড়াচড়া করবি না’। এরপর তারা আমার গাড়ির পেছনে দিকে চলে যায়। আমি গাড়ি মধ্যে আবার উঠে বসি। আবার হামলা হতে পারে এই ভয়ে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি সামনের দিকে দৌড় দেই। মিনিট খানেক দৌড়ানোর পর একটি বাড়ি দেখতে পাই। বাড়ি প্রবেশ করে ডাকা ডাকি করলে আমাকে তারা সাহায্য করে। পরে তারা কয়েক বাড়ি পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি ওই কর্মকর্তার বাড়িতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে খবর দিতে বলি। তারা প্রক্টরকে খরব দেয়। এই পুরো ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় আধাঘন্টা ধরে। ঘটনা শুরুর প্রায় ঘন্টা ঘানেক পর ইবি থানা থেকে পুলিশ গিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। ভোর ৪টা ৫৪ মিনিটে আমি ক্যাম্পাসে পৌছি।’
প্রক্টর প্রফেসর ড.মাহবুবর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি রাত ৩টা ৪৬ মিনিটে ভিসির গাড়ি চালক ফরহাদের মোবাইল থেকে একটি কল পাই। রিসিভ করে হামলার ঘটনা জানতে পারি। সাথে সাথে আমি ইবি থানা এবং শৈলকুপা থানায় যোগাযোগ করি। তবে ভিসি স্যারের ফোন বন্ধ থাকায় তার অবস্থান জানতে পারি না। কিছু সময় পর অপরিচিত একটি কল আসে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানায় ভিসি স্যার তার বাড়িতে নিরাপদে আছে। পরে ইবি থানার পুলিশ ভিসি স্যারকে নিরাপদে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় অংশ নিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় গিয়েছিলেন ভিসি। ফেরার পথে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনায় সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ভিসি। এসময় ভিসিকে অনেকটাই মানুষিকভাবে বিপর্যস্থ মনে হয়েছে। ভিসির উপর হামলার ঘটনায় পৃথক পৃথক ভাবে নিন্দা এবং সুষ্ট বিচার দাবি করেছেন ইবি শিক্ষক সমিতি, শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শাপলা ফোরাম, জিয়া পরিষদ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং ইংরেজি বিভাগ। এছাড়াও সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইবি সাংবাদিক সমিতি ও প্রেসক্লাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।