পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দেবার আগেই রোগনির্ণয়? মার্কিন গবেষকরা বলছেন, একটি রক্তপরীক্ষা থেকেই নাকি আট ধরনের ক্যানসার ধরা পড়বে। ডিম্বকোষ, যকৃৎ, পাকস্থলী, প্যানক্রিয়াস, খাদ্যনালী, মলাশয় ও স্তনের ক্যানসারের টিউমার ভবিষ্যতে শুধুমাত্র একটি রক্তপরীক্ষা থেকেই ধরা পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। আরো বড় কথা হলো, এই রক্ত পরীক্ষায় যখন ক্যানসার ধরা পড়বে, তখনও তা ছড়ায়নি বা বিশেষ বড় হয়নি, অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলে কেমোথেরাপির দরকার পড়বে না, একটি ছোট অপারেশনেই টিউমার বাদ দেওয়া চলবে - তা ছড়ানোর আগেই।
বহুবছর ধরে বিজ্ঞানীরা তথাকথিত ‘লিকুইড বায়োপ্সি’-র খোঁজে আছেন -যার অর্থ, শরীরের কোষসমষ্টি পরীক্ষা না করে রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করে টিউমারের উপস্থিতি নির্ধারণ করা। এমনকি এ ধরনের স্ক্রিনিং নিয়মিত হেল্থ চেক-এর অংশ হতে পারে। বালটিমোরের জন হপকিন্স স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার ফলাফল ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশ করেছেন ও সংশ্লিষ্ট রক্ত পরীক্ষাটির নাম দিয়েছেন ‘ক্যানসার-সিক’ (ক্যানসারএসইইকে)।
মাঝে মাঝে কাশি হলে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। কিন্তু ঘনঘন কাশি কিংবা কফের সঙ্গে রক্ত বের হলে, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো ব্যাপার বৈকি! বেশিরভাগ কাশি বিপদের না হলেও কিছুক্ষেত্রে তা ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে দ্রæত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
শরীরের কোষ যখন ক্যানসারগ্রস্ত হয়, তখন সেই কোষের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষটি এমনভাবে বদলে যায় যে, সেই কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে। একটি টিউমার সেল মরলে, তার অবশিষ্টাংশ প্রায়ই রক্ত গিয়ে পড়ে - তখন সেই রক্ত পরীক্ষা করে ক্যানসার-সংক্রান্ত জিন ও প্রোটিনের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয়। ‘ক্যানসার-সিক’ পরীক্ষায় ক্যানসার সেলের আটটি প্রোটিন ও ১৬টি জেনেটিক মিউটেশন বা পরিবর্তন ধরা পড়ে।
শুধু আট ধরনের ক্যানসার কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধটির মূল রচয়িতা জোশুয়া কোহেন জানিয়েছেন যে, তথাকথিত ‘টিউমার মার্কার’-দের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কারণ, এর ফলে টেস্টে ভুল ‘পজিটিভ’ ফলাফল দেখানোর সম্ভাবনা হ্রাস পাবে ও টেস্টটির দামও কম থাকবে - শেষমেষ এই স্ক্রিনিংয়ের খরচ ৫০০ ডলারের কম করার আশা রাখেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই টেস্ট রুটিন চেক-আপের অঙ্গ হয়ে উঠতে এখনও বেশ কিছু সময় লাগবে।
বিভিন্ন পর্যায়ের ক্যানসারযুক্ত মোট ১,০০৫ জন রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেন গবেষকরা। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে আস্থাজনকভাবে ক্যানসার ধরতে সমর্থ হয় ‘ক্যানসার-সিক’ - অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রে এই টেস্ট ক্যানসার নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়।
জার্মান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার নারীর স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা হয়, যার মধ্যে মারা যায় ১৭ হাজার। নারীদের অন্যান্য ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসারেই হয় সবচেয়ে বেশি নারী। এতে মানুষ মারা গেলেও, এ ক্যানসার খুব মারাত্মক নয়। কারণ সময় মতো ধরা পড়লে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। বিশেষ করে স্তনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রতি তিনজন রোগীর মধ্যে মাত্র একজনের ক্ষেত্রে ক্যানসার নির্ণয় করা সম্ভব হয়। অপরদিকে ডিম্বাশয় ও যকৃতের ক্যানসারের ক্ষেত্রে শতকরা ৯৮ ভাগ টিউমার নির্ণয় করে ‘ক্যানসার-সিক’ টেস্ট।
আরো বড় কথা, ‘ক্যানসার-সিক’ যে আট ধরনের ক্যানসার নির্ণয় করতে সক্ষম, তার মধ্যে পাঁচ ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে ক্রিনিং করা, অর্থাৎ ক্যানসার ধরা বর্তমানে সম্ভব নয়। তবে কোলন বা মলাশয়ের ক্ষেত্রে প্রথাগত কোলোনোস্কপিতেই আপাতত প্রাথমিক পর্যায়ের কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে।
বিজ্ঞানীরা সেই সঙ্গে ৮০০ জনের বেশি সুস্থ মানুষের রক্ত পরীক্ষা করে দেখেছেন, কেননা টেস্টে কতবার বা কী পরিমাণ ভুল ফলাফল দেখানো হচ্ছে, সেটাও জানা দরকার। সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে মাত্র সাত জনের ক্ষেত্রে - অর্থাৎ মাত্র এক শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল ‘পজিটিভ’ ফলাফল দেখিয়েছে ‘ক্যানসার-সিক।’
তবুও ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা এই টেস্ট থেকে বেশি প্রত্যাশা করা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন। বিশেষ করে গোড়ার দিকের টিউমার ধরার ক্ষেত্রে ‘ক্যানসার-সিক’ অর্ধেকের কম টিউমার ধরতে পেরেছে। ক্যানসার পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়ার পরেই যদি শুধু ‘ক্যানসার-সিক’ স্ক্রিনিংয়ে তা ধরা পড়ে - যখন রোগের অন্যান্য লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে - তাহলে এই পরীক্ষার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বৈকি।
‘ক্যানসার-সিক’ টেস্টে ভুল ‘পজিটিভ’ ফল দেখানোর সম্ভাবনা বাস্তবে আরো বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। কেননা, ক্রনিক বা দীর্ঘকাল ধরে অপরাপর রোগে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হয়। অথচ ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহের রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে প্রায়ই এমন একটি প্রোটিন পাওয়া যা যা ‘ক্যানসার-সিক’ টেস্টেও ধরা পড়ে।
কাজেই আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন ও তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। ৬৫ থেকে ৭৫ বছরের ৫০ হাজার মহিলা, যারা কোনোদিন ক্যানসারে ভোগেননি, তাদের নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন পেনসিলভানিয়ার গেইজিঙ্গার হেল্থ সিস্টেম ও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।