পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অন্যান্য ধানের মতো এ ধান চাষে কৃষকের ঝুঁকি নেই : হেক্টরপ্রতি ফলন হবে বেশি : মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের তদারকি বাড়াতে হবে : গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠবে : চাল আমদানি কমবে
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দক্ষতায় এসেছে কৃষির উন্নয়নে বিশাল সাফল্য। এ সাফল্য কেবল দেশের জন্য নয়, তৃণমূল অর্থনীতির উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে, আর হাসি ফোটাবে কৃষকের। নতুন এ ৫টি ধান জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সর্বোচ্চ মেধা কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য এ সাফল্য বোয়ে এনেছেন। এটি সমৃদ্ধ উৎপাদনের হাতছানি বলে মনে করছেন অনেকে। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের বিশাল কৃষি জমি ব্যবহৃত হচ্ছে ধান চাষে। কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসলি জমির উৎপাদিত ধান নানা স্তর পার হয়ে চাল হিসাবে বাজারে আসছে। এ উৎপাদনের পেছনে রয়েছে হতদরিদ্র ঋণগ্রস্ত অসংখ্য কৃষকের হাত। অন্যদিকে কৃষি গবেষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ ৫ জাতের ঝুঁকিবিহীন ধান উদ্ভাবিত হয়েছে। এটি কেবল কৃষি সেক্টরের জন্য সুখবরই নয়, হতদরিদ্র, ঋণগ্রস্থ কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে। গ্রামীণ ও তৃণমূল পর্যায়ের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সাফল্য বয়ে আনবে। বাংলাদেশ রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউট ব্রি’র মাধ্যমে এ সাফল্য এসেছে।
ব্রি’র উদ্ভাবিত এ ৫ জাতের ধান নিয়েই কৃষকদের মাঝে ব্যাপক গণসচেনতা গড়ে তুলতে পারলে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারবে বাংলাদেশ। ৫টি ধানের একটি হল, ব্রি-৮৬/ডি, এতে ব্যবহার করা হয়েছে জীব প্রযুক্তি, এ ধান থেকে পাওয়া চাল বাংলাদেশের ১৩৫ মিলিয়ন মানুষের প্রধান খাদ্য গ্রামে কর্মসংস্থানের প্রায় ৫০-৬০ ভাগ মানুষ ধান চাষের উপর নির্ভরশীল, পাশাপাশি এ ধান মানুষের ক্যালরি ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করছে। কৃষিজ জিডিপির অর্ধেক এবং বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের এক শতাংশ ধানের ওপরই নির্ভরশীল। বাংলাদেশের ৭৮ দশমিক ৪ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমির প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগই ধান চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের ১৩ মিলিয়ন কৃষিজীবী পরিবার ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেচ দেয়া হয় এমন জমি শতকরা ৮০ ভাগের বেশি এবং ফসলি জমির ৭৫ ভাগই ধান চাষ হয়ে থাকে। ধান বাংলাদেশের মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
বাংলাদেশের মানুষের খাবার জোগানোর জন্য বর্তমানে দেশে ২৫ মিলিয়ন মেট্র্রিক টন ধান উৎপাদন হচ্ছে। ২০২০ সালে দেশে প্রায় ২৭ দশমিক ২৬ মিলিয়ন টন ধান প্রয়োজন হবে।
জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। খাদ্য চাহিদাও বাড়ছে, এ জন্য হেক্টর প্রতি ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে কমপক্ষে ২ দশমিক ৭৪ থেকে ৩ দশমিক ৭৪ পর্যন্ত। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বীজ ব্যবহার, উচ্চ মানসম্পন্ন বীজ ও যান্ত্রিকের মাধ্যমে ফসল তোলার মত আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার বয়ে আনতে পারে লক্ষমাত্রা অর্জনের সমাধান।
বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বা ব্রি’র বিজ্ঞানীরা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এ ধানের নতুন ৫টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন। এ ধানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ব্রি-৮২, বি-৮৩, ব্রি-৮৪, ব্রি-৮৫ এবং ব্রি-৮৬। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর এ ধানগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
এ বিষয়ে ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মুহাম্মদ শাহাজাহান কবির ইনকিলাবকে বলেছেন, উদ্ভাবিত নতুন ৫টি জাতের মধ্যে তিনটি আউশ মৌসুমের ও ২টি বোরো মৌসুমের। আউশ মৌসুমকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সে জন্যই আউশের উপর জোর দেয়া হয়েছে বেশি, অনুমোদিত ধানের মধ্যে ব্রি-৮২, ৮৩, ৮৪ আউশ ধানের প্রকার এবং ব্রি-৮৫ ও ৮৬’র রয়েছে আবদ্ধ পানিতে টিকে থাকার ক্ষমতা। এ পাঁচটি সদ্য অনুমোদিত ধানসহ ব্রি’র উদ্ভাবিত ধানের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৯১টি। এর মধ্যে একটি জীব প্রযুক্তি জাত, ৬টি হাইব্রিড বা সঙ্কর এবং বাকিগুলো উচ্চ ফলনশীল পারস্পরিক।
প্রজননক্রমে প্রাপ্ত প্রকরণ দেশের ধান উৎপাদনের কৃষিজমির শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকায় ব্রি উদ্ভাবিত ধানের চাষ হচ্ছে। এটি দেশের উৎপাদিত চালের শতকরা প্রায় ৯১ ভাগ।
ব্রি ৮৬ : অনুমোদন পাওয়া ব্রি-৮৬’র কান্ড বেশ শক্ত ও মোটা এবং যান্ত্রিক ফসল কাটা যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই একে কাটা যায়। ফসল তোলার যন্ত্র ব্যবহারের মজুরির কমতি এবং যান্ত্রিক ফসল তোলার জটিলতা যে সকল কৃষকের দুশ্চিন্তার কারণ, তাদের জন্য এ ধান সুবিধাজনক বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রি-ধান ৮৬-এ ব্যবহার করা হয়েছে জীব প্রযুক্তি। এন্থার কালচার নামক জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে ইরানি ধানের জাত থেকে তৈরি হয় এটি।
বর্তমান দেশের সর্বোচ্চ উৎপাদিত ব্রি-ধান ২৮ এর মতোই এ ধান জনপ্রিয়তা পাবে এবং হেক্টর প্রতি প্রায় আধা টন বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এন্থার পরাগধানীর কালচার (কৃত্রিম খাদ্যের যোগান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বৃদ্ধি করানো) বাংলাদেশে এ প্রথম ব্যবহার করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে অপরিপক্ব পরাগ রেণুকে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিবেশে কৃত্রিম উপায়ে খাদ্যের জোগান দিয়ে বিভাজিত হতে দেয়া হয়। এভাবেই এটির আকার বৃদ্ধি পেয়ে কোষলায় পরিণত হয়। এ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শক্ত কিংবা তরল উভয় মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
তরুণ ধান বিজ্ঞানী মোঃ সাজ্জাদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, জীব প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্রি’র গবেষকগণ সম্ভাবনাময় ধানের জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন যা গতানুগতিক প্রজনন প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এ প্রযুক্তির গবেষণার ফল পেতে আরও বেশি সময় লাগতো।
ব্রি ধান-৮৬’র উৎপাদন গড়ে ৬-৬ দশমিক ৫ টন এবং উপযুক্ত পরিবেশে তা ৮ টন পর্যন্ত সম্ভব। ব্রি ধান-৮৬ হতে প্রাপ্ত চালে এ মাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫ ভাগ। ঝরঝরে ও সুস্বাদু ভাতের যোগান দেয়া এ ধানের চাক লম্বা চিকন ও সাদা চালের দানায় প্রোটিন প্রায় শতকরা ১০ ভাগ। এর জীবনের মেয়াদ ১৪০-১৪২ দিন, গাছ প্রতি গুছির সংখ্যা ৯-১০টি এবং ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ৩ গ্রাম।
ব্রি ধান-৮২ : এ ধান রোপা আউশ মৌসুমের একটি ধান। হেক্টর প্রতি গড়ে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ টন উৎপাদনের এ ধানের জীবনকাল ১০০-১০৫ দিন। এ ধান থেকে প্রাপ্ত চালে এমাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৮ ভাগ। সাদা রঙের মাঝারি মোটা এ চালের ভাত হবে ঝরঝরে এবং প্রতিটি দানায় প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭ দশমিক ৬ ভাগ। এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন ২৩ দশমিক ৮৪ গ্রাম, আউশ মৌসুমের প্রচলিত ধান ব্রি-৪৮’র থেকে ব্রি-ধান-৮২-এর জীবনকাল ৪-৫ দিন কম। ফলে রোপা আউশ মৌসুমে এ ধান চাষের পরও আমন ধান চাষাবাদের সুযোগ পাওয়া যাবে। যার ফলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
ব্রি ধান-৮৩ : এ ধান আউশ মৌসুমের একটি ধানের জাত, যার জীবনকাল ১০০-১০৫ দিন। এ ধানের গড় উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৫ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। যা প্রচলিত ব্রি-ধান ৪৩ এর চেয়ে ১টন বেশি উৎপাদন হবে। ১০৫ সে.মি. উচ্চতার ধান গাছের চাল মাঝারি মোটা ও সাদা রঙ্গের এবং এ চালের ভাত হবে ঝর ঝরে। যথাক্রমে শতকরা ২৬ ভাগ ও শতকরা ৭ ভাগ এমাইলোজ ও প্রোটিন রয়েছে এ চালে।
ব্রি ধান- ৮৪ : এ ধানে বোরো মৌসুমের একটি জাত, যা উচ্চ ফলনশীল, জিংক সমৃদ্ধ এবং স্বল্পস্থায়ী, হেক্টরপ্রতি গড়ে ৬-৬ দশমিক ৫ টন। ফলনের এ ধানের গাছের উচ্চতা ৯৬ সেঃমিঃ এবং জীবনকাল ১৪০-১৪৫ দিন। লম্বা, চিকন, ও লালচে-বাদামী এ ধানের চালের ভাতও হয় ঝরঝরে এবং এ চালে এমাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫ দশমিক ৫ ভাগ। এছাড়াও এতে জিংক এর পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ৩ ভাগ। এর জীবনকাল বোরো মৌসুমের জনপ্রিয়। ব্রি ধান-২৮ এর মতোই স্বল্প হওয়ায় এ ধান বোরো মৌসুমে আবাদের পরও পাট চাষের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত জিংযুক্ত ধানের ছয়টি জাতের মধ্যে এ ধানেই সর্বোচ্চ পরিমাণ জিংক রয়েছে। এ ছাড়া ব্রি ধান- ৮৪ তে কিছু পরিমাণে আয়রণও রয়েছে।
ব্রি ধান-৮৫ : এ ধান রোপা আউশ মৌসুমের নতুন জাতের ধান থেকে লম্বা, মাঝারি, চিকন ও সাদা রঙের চাল হচ্ছে। দানা প্রতি প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ১ ভাগ, এমাইলোজ শতকরা ২৫ দশমিক ২ ভাগ এবং এক হাজার পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২২ দশমিক ৩ গ্রাম। এ ধানের জীবনকাল ১০৬-১১০ দিন, গাছের উচ্চতা ১১০ সেঃ মিঃ এবং গড়ে ফলন ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ টন। বাংলাদেশের মাটিতে মিশে আছে কৃষি ও কৃষিজ পণ্যের নাম, কৃষকের শ্রম-ঘাম, কৃষিবিদ ও বিজ্ঞানীরদের উদ্ভাবিত নতুন ধানের এ পাঁচটি জাত কৃষি বিপ্লব, জাতীয় অর্থনীতি ও কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে বিশাল ভূমিকা রাখবে এবং কৃষি বিভাগ এটিকে কৃষকের কাছে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে প্রচার ও পরামর্শ দিতে পারলেই বাংলাদেশ হবে খাদ্য স্বয়ংস¤পূর্ণ এটি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।