Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্ধশতাধিক আসন পূর্বের সীমানায় ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সরকারি দল চায় ২০১৩ সালের : বিএনপি চায় ২০০৮ সালের
 চলতি বছরের অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার আগে দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে এবার অর্ধশতাধিক আসন পূর্বের সীমানায় ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ শুরু করেছে কমিশন। বাকি আসনগুলোর সীমানা অপরিবর্তিত থাকবে। এরকম খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আগামী মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে এসব কার্যক্রম শেষ করতে চায় কমিশন।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নতুন সীমানায় বড় পরিবর্তন চাইছে না। অপর দিকে, ২০০৮ সালের আগে যেভাবে সংসদীয় আসন ছিল সেটাকে ফিরিয়ে চায় বিএনপি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজে হাত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার ৬৩টি আসনকে চিহ্নিত করেছে। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও উপজেলা এলাকার সীমানা অক্ষুণœ রেখে এবার অর্ধশতাধিক আসনের সীমানায় রদবদল আনতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আমাদের প্রস্তাব কমিশনকে আগেই দিয়েছি। কমিশন যদি কোনো সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করতে চায়, তা হলে তাকে আদমশুমারি হওয়ার পরপর করতে হবে। সেটি আর কমিশনের হাতে সময় নেই। তারপর তারা কিভাবে করতে চায়, এ আমার জানা নেই। তবে ছিটমহল এলাকাগুলোতে ভোটারদের সংযুক্ত করতে পারে। তবে এখনই সীমানা পুনর্নির্ধারণ নয়। এখন তাদের ২০১৩ সালেরটা দিয়ে নির্বাচন করতে হবে।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, রকিবউদ্দীন কমিশনের মতো যদি এবার সীমানা পরিবর্তনের কাজ করে, তাহলে জনগণের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। একটি আসন ৯০ কিলোমিটার আর একটি আসনের ভোটার ৯০ হাজা, আবার একটি আসনে চার-পাঁচ লাখ ভোটার এমন যেন না হয়। ২০০৮ সালের আগে যেভাবে সংসদীয় আসন ছিল, সেটাকে ফিরিয়ে চাই। তা না হলে জনসংখ্যা, ভোটার ও সংসদীয় এলাকার আয়তন বিবেচনায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা।
কমিশন সভায় সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া অনুমোদন করলে তা খসড়া তালিকা হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি। ওই তালিকার উপর দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ দেয়া হবে। ওই সব দাবি-আপত্তির উপর শুনানির আয়োজন করবে কমিশন। শুনানির পরই তিনশ’ আসনের চ‚ড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে এসব কার্যক্রম শেষ করতে চায় কমিশন। ২০১৩ সালে রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সীমানা পরিবর্তনের জন্য ৮৭টি আসনের প্রাথমিক তালিকা পরে রাজনৈতিক সুপারিশের কারণে শেষ পর্যন্ত ৫৩ আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জনসংখ্যা, ভোটার ও সংসদীয় এলাকার আয়তন বিবেচনায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার ঘোষণা দিয়েছিল কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। এদিকে ইতোমধ্যে সরকারি দলের সংসদ সদ্যরা ২০১৩ সালের সংসদীয় এলাকা রাখার দাবি করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মানিকগঞ্জ-২ আসনের সরকার দলীয় এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সীমানা নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। কমিশন নতুন আইন প্রণয়নের জন্য যে প্রস্তাব বা প্রস্তুতি গ্রহণ করছে, তা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ের জন্য। সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে রোডম্যাপের সর্বশেষ সময়ও পার হয়ে গেছে গত ডিসেম্বরেই। রোডম্যাপ অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং আইন প্রণয়নের কথা কিন্তু তা করতে পারেনি। ফলে রোডম্যাপ থেকে পিছিয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। সীমানা নির্ধারণে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সীমানায় বড় পরিবর্তন চাইছে না। অন্য দিকে, ২০০৮ সালের আগে যেভাবে সংসদীয় আসন ছিল, সেটা চায় বিএনপি। জানা গেছে, কমিশনের রোডম্যাপ অনুসারে গত বছর জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা করার কথা। সে লক্ষ্যে আগস্টে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমস (জিআইএস) সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করার কথা ছিল। অক্টোবরের মধ্যে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রকাশের কথা বলা হয়েছিল। নভেম্বরে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি, আপত্তি, সুপারিশের আহŸান এবং ডিসেম্বরের মধ্যে আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি শেষে সেসব নিষ্পত্তি করে ৩০০ আসনের সীমানা চ‚ড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করার কথা থাকলে তা করতে পারেনি। সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান নির্বাচন কশিমনার মো. রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে সীমানা নির্ধারণের কাজ এগিয়ে এনেছি। নতুন ছিটমহল যুক্ত হওয়া ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের কারণে কিছু আসনের পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তবে এর সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কুমিল্লার একটি আসনের সীমানা নিয়ে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। কমিশন ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আপিলের রায় পাওয়ার পর তিনশ’ সংসদীয় আসনের সীমানা চ‚ড়ান্ত করতে পারব। ইসি কর্মকর্তারা জানান, কমিশন সভায় সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া অনুমোদন করলে তা খসড়া তালিকা হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি। ওই তালিকার উপর দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ দেয়া হবে। ওই সব দাবি-আপত্তির উপর শুনানির আয়োজন করবে কমিশন। শুনানির পরই তিনশ’ আসনের চ‚ড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে এসব কার্যক্রম শেষ করতে চায় কমিশন। বিদ্যমান সীমানা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উপজেলা অখন্ডতা রাখা হলে দেশের ৬৩টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সংসদীয় আসনের অখন্ডতা ধরে রাখা ও ভোটার সংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে কমবেশি ১০টি আসনের উপজেলার অখন্ডতা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সেগুলোর মধ্যে যশোর-৩ ও ৪, নড়াইল-১ ও ২ এবং চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২-সহ কয়েকটি আসন রয়েছে। কমিটি এসব আসনের ভৌগলিক অখন্ডতা, জনসংখ্যা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে এতে পরিবর্তন না করার বিষয়ে একমত হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড অখন্ড রাখতে গিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কয়েকটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। নতুন ছিটমহল যুক্ত হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের কয়েকটি আসনের সীমানায়ও পরিবর্তন আসবে। উপজেলা অখন্ড রাখার কারণে অর্ধশত সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন আসতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাঁও-২ ও ৩, নীলফামারী-৩ ও ৪, রংপুর-৩ ও ৪, কুড়িগ্রাম-৩ ও ৪, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, পাবনা-১ ও ২, চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২, ঝিনাইদহ-২ ও ৪, মাগুরা-১ ও ২ এবং খুলনা-৩ ও ৫। একই অবস্থা সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, জামালপুর-৪ ও ৫, মানিকগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ৩ ও ৫, নরসিংদী-১ ও ২, ফরিদপুর-২ ও ৪, গোপালগঞ্জ-১ ও ২, মাদারীপুর-২ ও ৩, সিলেট-২ ও ৩, মৌলভীবাজার- ২ ও ৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ও ৬, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫ এবং চট্টগ্রাম-৭, ৮, ১৪ ও ১৫ আসন। সীমানা পুননির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ল²ীপুর-৩ আসনের সঙ্গে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ যুক্ত হবে। এসব ইউনিয়ন পরিষদ ল²ীপুর-২ আসন থেকে বেরিয়ে যাবে। এ জেলার জন্য এটি বড় পরিবর্তন। এবার সাভার উপজেলার ইউনিয়নগুলো একই আসনের আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে ঢাকা-২, ৩, ১৪ ও ১৯ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসবে। ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকইল উপজেলা খন্ডিত অবস্থায় দু’টি আসনের মধ্যে ছিল। নতুন খসড়ায় একত্রিত করে একটি আসনে আনা হবে। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলাও বর্তমানে খন্ডি রয়েছে। চিলমারী উপজেলা আগের সীমানায় চলে যেতে পারে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী খন্ডিত অবস্থায় দু’টি আসনে থাকলেও এখন একত্রিত করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ