পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চাকরিজীবী এক ছেলে ছুটিতে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শহরতলী চরমুরারীদহে গেলে তার বৃদ্ধ বাবা পাবদা মাছ খেতে চাইলেন। বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে ছেলে আশেপাশের কয়েকটি হাটবাজারে খোঁজ করেও পেলেন না পাবদা মাছ। বৃদ্ধের আফসোস, আগে অল্প খেলেও অনেক সুস্বাদু মাছ খেতাম। এখন অনেক মাছ খাই, কিন্তু তৃপ্তি মেটে না। আসলেই এখন নির্দিষ্ট কিছু সময় ছাড়া আগের মতো সবসময় প্রাকৃতিক সুস্বাদু মাছ পাওয়া দুষ্কর। শুধু পাবদা নয়, বাজারে প্রাকৃতিক মাছের দেখা মেলা ভার। দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয় ক্রমাগত পানিশূন্য হচ্ছে। এ কারণে দুষ্প্রাপ্যতা বাড়ছে প্রাকৃতিক মাছের। বর্ষাকালে কিছুটা দেখা মিললেও বছরের বাকি সময়টাতে বাজারে প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া যায় না বললেই চলে। প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেই। অবশ্য মৎস্য অধিদফতর দাবি করেছে, প্রাকৃতিক সুস্বাদু মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন যতটুকু পাওয়া যায়, নিকট ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া খুবই কঠিন হবে। কারণ প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের দিকে মোটেও নজর নেই। সূত্র মতে, জেনেটিক্যালি মোডিফাইড করে বিভিন্ন জাতের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারে অতিমাত্রায় জোর দেয়া হয়েছে। পোলট্র্রি মুরগির মতো চাষ করা মাছ দিয়ে চাহিদা মিটছে ঠিকই, কিন্তু তাতে মানবদেহে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকছে। কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেননি। মৎস্য কর্মকর্তা মো. অলিয়ার রহমান জানান, নানা জাতের প্রাকৃতিক মাছের দুষ্প্রাপ্যতা দিন দিন বাড়ছেই।
তিনি জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মাছের চাহিদা বহুগুণে বেড়েছে। চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জেনেটিক্যালি মোডিফাইড করে চাষ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে মাছের উৎপাদন ওভারঅল ভালো। কিন্তু প্রাকৃতিক মাছ যেমনÑ পুটি, ট্যাংরা, খলসে, চ্যাং, রয়না, কই, বাইলা, টাকি, পাবদা, মায়া, মলা ও মাগুরসহ ছোট জাতের স্বাদের মাছ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক স্বাদের মাছ দুষ্প্রাপ্যতার কারণ খাল-বিলে পানি নেই। তা ছাড়া যে পানি আছে, তাতে কীটনাশকের কারণে মাছের বংশ বৃদ্ধির সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে খাল-বিল থেকে পানি সরিয়ে একেবারে সব মাছ তুলে নেয়ার ঘটনাও বহুমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে মা মাছের প্রজনন হচ্ছে না প্রাকৃতিকভাবে। অথচ নিকট অতীতেও হাতের নাগালেই পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির সুস্বাদু হরেকরকম মাছ। এখন কয়েকটি বাজার ঘুরেও দেশি মাছের দেখা মেলে না। বেশির ভাগই পাওয়া চাষ করা মাছ। তাতে তেমন স্বাদ নেই। তবুও মাছের নাম অন্তত খাবারের তালিকায় থাকছে কোনোরকমে। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে তাও কঠিন হবে এমন আশঙ্কা প্রবল।
দেশের বিল-বাঁওড়ে চীন ও ভিয়েতনামের মতো ‘কম্পার্টমেন্টালাইজেশন’ পদ্ধতিতে লাগসই ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদা পূরণসহ মৎস্য সেক্টরে বিপ্লব ঘটানোর অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেই। এই তথ্য বিল-বাঁওড় উন্নয়ন প্রকল্প ও মৎস্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্র এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের। সূত্র জানায়, চীন ও ভিয়েতনামে প্রতি হেক্টর জলাশয়ে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১০ মেট্রিক টন। আর বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র এক মেট্রিক টন। মাঠপর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তারা বলেছেন, লাগসই প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে বিল-বাঁওড় ও পুকুরসহ জলাশয়ে মাছ চাষ করা হলে বিরাট বিপ্লব ঘটবে। তাতে প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চীন ও ভিয়েতনামের মতো বিশাল সফলতা না এলেও প্রতি হেক্টর জলাশয়ে ১০ মেট্রিক টনের স্থলে খুব সহজেই ন্যূনতম পাঁচ মেট্রিক টন উৎপাদন করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে মাছের মোট চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে সব মিলিয়ে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। ঘাটতি রয়েছে মাত্র ছয় লাখ মেট্রিক টন। শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬০৩টি বাঁওড়ের ব্যবস্থাপনা উন্নত করে পরিকল্পিতভাবে মাছ উৎপাদন করে এই ঘাটতির বেশির ভাগই পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে তা হচ্ছে না। বিল-বাঁওড়ের রুই, কাতলা, মৃগেল বেশ সুস্বাদু। সূত্র জানায়, বিল ও বাঁওড় ছাড়াও যশোর, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও নড়াইলসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় নদ-নদী এবং অসংখ্য খাল-বিল ও পুকুর রয়েছে। উন্মুক্ত এসব জলাশয়ে মাছ চাষ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে মাছ উৎপাদনে অপ্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে। বর্তমানে শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেই পাঁচ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জলাশয়ে ছয় শতাধিক বাঁওড় রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৪টি বাঁওড়-বিল ও বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছে। বাকি বাঁওড়গুলো বিভিন্ন সময় প্রভাবশালীদের তদবিরে নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেয়া হয়। বাঁওড় রক্ষা ও পরিচর্যার অভাবে ওই বাঁওড়গুলো মাছ উৎপাদনে ক্রমেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি বাঁওড়ের জীববৈচিত্রও নষ্ট হচ্ছে খুব দ্রুত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।