Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুন্দরী প্রতিযোগিতা বেহায়াপনার নামান্তর

মোস্তফা কামাল গাজী | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইতিহাসের প্রথম সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। প্রাচীন গ্রিসে করিন্থের জনগণের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল নতুন শহর ব্যাসিলিসের উদ্বোধন উপলক্ষে করিন্থের শাসক কিপসেলাস এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। বিচারকরা পক্ষপাতমূলক বিচার করে কিপসেলাসের স্ত্রীকেই সেরা সুন্দরী নির্বাচিত করেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। তখনকার সরকারের রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি প্রতিযোগিতাটি। কিছুদিন পর এর ধরন একটু পরিবর্তন করে ‘ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতা’ নামে নতুন এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এভাবে কিছুদিন চলার পর ১৯২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার শুরু হয়। বর্তমানে ‘মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন’ এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে আসছে। প্রথমদিকে এর ব্যাপ্তি আমেরিকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন প্রতিটি দেশেই এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে বাড়ছে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা আর নোংরামি। মানুষ জড়িয়ে পড়ছে গোমরাহির জালে, হচ্ছে পথভ্রষ্ট।
ইসলাম কখনোই এমন নষ্টামিকে প্রশ্রয় দেয়নি। বরং বরাবরই উপেক্ষা করে আসছে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে শুভ্র-সফেদ জীবন গড়তে এবং বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকতে। ইসলাম পূর্ব যুগেও গোটা আরবে বেহায়াপনার সয়লাব বয়েছিলো। নর্তকী নাচিয়ে আনন্দ-ফুর্তিতে মত্ত থাকতো আরবের মানুষেরা। ইসলাম এসে সকল বেহায়াপনা দূর করে দিয়েছে পর্দার বিধান। নারীদের অঙ্গ প্রদর্শনের ব্যাপারে এসেছে কঠোর হুঁশিয়ারি। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি আপনার পত্মী, কন্যা এবং মুমিন স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে, ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সুরা আহজাব : ৫৯)। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ্যমান, তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে’ (সুরা নুর : ৩১)। অন্যত্র এসেছে, ‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেনা’ (সুরা আহজাব : ৩৩)।
অশালীন পোশাক পরিহার ও উত্তম পোশাক পরিধানের ব্যপারে পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ-সজ্জার পোশাক এবং পরহেজগারির পোশাক, এটিই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে’ (সুরা আরাফ : ২৬)। হজরত আলকামা ইবনে আবু আলকামা তার মা থেকে বর্ণনা করেন, একবার হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান তার ফুফু উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) এর নিকটে এলেন। তখন তার পরনে ছিল একটি পাতলা ওড়না। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং একটি মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন’ (মুয়াত্তা মালেক ২/৯১৩, হাদিস : ৬)।
সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কোনো মুসলিম মেয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে না। কারণ এর মাধ্যমে কাফেরদের অনুকরণ করা হয়। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ‘যে যার অনুসরণ করবে, সে ঐ দলেরই অন্তর্ভুক্ত’ (আবু দাউদ : ৫৫৯)। সুন্দরী প্রতিযোগিতার কারণে অনেক অর্থ-সম্পদ নষ্ট হয়। দেশের মানুষ যেখানে অনাহারে ভোগে সেখানে সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে টাকা-পয়সা নষ্ট করা নিতান্তই অনুচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না’ (সুরা : আরাফ : ৩১)। সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যেও এর খারাপ প্রভাব পড়ে। তারাও এর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে নিজেরাও প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কথা ভাবে। শিশুদের মস্তিষ্কে এমন চিন্তাভাবনা ঢুকিয়ে দেয়ার পেছনে অভিভাবকরাই দায়ী। কেননা, শিশুদের নিয়ে টিভিতে তারাই এসব অনুষ্ঠান দেখে। অথচ কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো’ (সুরা তাহরিম : ৬)। সুন্দরী প্রতিযোগিতার কারণে অসুন্দর নারীদের মনকষ্ট বাড়ে। মুমিন নর-নারীকে কষ্ট না দেয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’ (সুরা আহজাব : ৫৮)। সুন্দরী প্রতিযোগিতা বেহায়াপনা আর অশ্লীলতাকে সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজকে ঠেলে দেয় ধ্বংসের মুখে। অর্ধনগ্ন নারীদেহের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে উঠতি বয়সী কিশোরেরা। পড়ালেখা বাদ দিয়ে এসব নিয়েই পড়ে থাকতে চায়। তাই এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবী। এজন্য প্রথমত অভিভাবগণকে এগিয়ে আসতে হবে। ইসলামি বিদি-বিধান অনুযায়ী জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন