Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সামান্যতেই বাড়ছে অসহিষ্ণুতা

ওয়ারীতে পিটিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত ২ জন রিমান্ডে

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন : সামাজিক বন্ধন, আইন প্রয়োগে ধীরগতি ও সচেতনতার অভাবে সামান্য কারণেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সাধারণ মানুষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে গান-বাজনার প্রতিবাদ করায় রাজধানীর ওয়ারীর রামকৃষ্ণ মিশন রোডে গত ১৯ জানুয়ারি নাজমুল হক (৬৫) নামে একব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। এ ঘটনায় পুলিশ এরই মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের গতকাল আদালতে হাজির করে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ২ জনকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এবং বাকি দু’জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এসআই হারুন উর রশীদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গ্রেফতারকৃত সাজ্জাদ হোসেন ও জাহিদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তারা নিহতকে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন। আলতাব ও রাইয়ান ইয়াসমিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিত সকলেরই। এ জন্য প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ। প্রশাসনকে আরো বেশি পরিমাণে সক্রিয় হতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমনটি যেন না হয় যে মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলছে। প্রশাসনের পাশাপাশি অপরাধমূলক ঘটনায় সমাজের সকলকেই একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। যারা আইনভঙ্গ করে বা আইন হাতে তোলে নেয় তাদের চিহ্নিত করা সমাজের সকলের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার আব্দুল বাতেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কেউ কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করলে কাউকে আইন হাতে তুলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আইনের প্রতি সকলকেই শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে ছাড় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সিহত নাজমুল হকের ছেলে নাসিমুল অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় আমাকে যখন মারধর করা হচ্ছিল, তখন বাবা ছাড়াতে এগিয়ে আসেন। এ সময় তাকেও মারধর করা হয়। এতে তিনি পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে বাবা মারা যান। উচ্চ শব্দে গান-বাজনা এবং আর কে মিশন রোডের মৃত্যুকে সমাজে বিরাজমান আগ্রাসী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাহ আহসান হাবীব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সামাজিকভাবে মান্যতা বিষয়টি কমে যাচ্ছে। আর আইন অমান্য করলে ক্ষমতা থাকলে শাস্তি হবে না, এমন বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে যাওয়ার কারণেও এসব ঘটছে। সূত্র জানায়, বিভিন্ন এলাকায় শব্দের মানমাত্রা উল্লেখ আছে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এ। বিধিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের বেলায় সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবেল শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। ওই বিধিমালা অনুযায়ী, খোলা জায়গায়, বিয়ে বা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যাত্রানুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারে। তবে এসব অনুষ্ঠান কোনো আবাসিক এলাকায় করা যাবে না। এসব অনুষ্ঠান করতে গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে অনুমতি নিতে হবে। এসব অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে অনুষ্ঠানগুলো অবশ্যই রাত ১০টার মধ্যে শেষ করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর জন উপদ্রব সৃষ্টিকারী উচ্চস্বরে শব্দযন্ত্র বাজানোর ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে পারে। নিতে পারে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ