Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শহীদ আসাদ দিবস আজ

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : আজ ২০ জানুয়ারী। ’৬৯’র গণঅভ্যূত্থানের মহানায়ক এএম আসাদুজ্জামান শহীদ আসাদের ৪৯তম শাহাদাত বার্ষিকী। ১৯৬৯ সালের এই দিনে মিছিল করতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলীতে নিহত হন আসাদুজ্জামান আসাদ। এই আসাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশে সংগঠিত হয় ঐতিহাসিক ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান। ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর শহীদ আসাদ হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল পালনকারীদের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা থেকে যে অগ্নিষ্ফুলিঙ্গ নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেই অগ্নিষ্ফুলিঙ্গই ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানের জন্ম দিয়েছিল। ২০ জানুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলীতে আসাদের শহীদ হবার ঘটনা, ২৯ ডিসেম্বর হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল পালনকারীদের উপর পুলিশের গুলীবর্ষণের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। এই ২ টি ঘটনাই বাঙালীর জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ হাতিরদিয়া দিবস ও শহীদ আসাদ দিবস নামে গণঅভ্যূত্থানের দুটি সূচনা দিবস জাতীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ কোন রাজনৈতিক দলই দিবস দুটিকে জাতীয় মর্যাদায় উদযাপন করছে না।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট হচ্ছে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পাকিস্তান সরকারের দমননীতির প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর সারাদেশের হাট-বাজারে হরতাল আহŸান করেছিলেন। মাওলানা ভাসানীর ডাকে সেদিন হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল পালিত হচ্ছিল। এ হরতালের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এএম আসাদুজ্জামান (শহীদ আসাদ), মরহুম অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন শাহজাহান, তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার (বর্তমানে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক), আবদুল হাই প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিদ্দিক মাষ্টার, হাসান আলী, মিয়া চাঁন ও চেরাগ আলী নামে ৪ জন ন্যাপ কর্মী। আহত হয়েছিলেন এএম আসাদুজ্জামান (শহীদ আসাদ), আবদুল হাইসহ আরো অনেকে। গ্রেফতার হয়েছিলেন তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার, অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন শাহজাহানসহ আরো কয়েকজন নেতাকর্মী। আসাদুজ্জামান আসাদ মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে প্রথমে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে হরতালের পিকেটাররা তাকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে মুক্ত করলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। আসাদুজ্জামান পরে আহত অবস্থায় একটি সাইকেল নিয়ে শিবপুর থেকে ঘোড়াশাল যান। সেখান থেকে ট্রেনযোগে তিনি ঢাকায় পৌছান। পরদিন তিনি এই ঘটনা মাওলানা ভাসানীসহ ঢাকা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। একদিন পর এই খবর তৎকালীন দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেদিনই হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল পালনকারীদের উপর পুলিশের গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল হয়। শহীদ আসাদ আইয়ুব খান বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জোরদার করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেন। ৪ জানুয়ারি ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন শহীদ আসাদ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর মোনায়েম খান ১৪৪ ধারা জারী করেন। যাতে করে ৪ জনের বেশী লোক এ একত্রে জড়ো হতে না পারে। ২০ জানুয়ারি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুপুরে ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চাঁন খাঁর পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাদেরকে চাঁন খাঁর পুলের ব্রীজের বাধাঁ দেয় এবং তাদেরকে ফিরে যেতে বলে। কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্ররা দীর্ঘ প্রায় এক ঘন্টা সেখানে অবস্থান গ্রহণ করে। এ সময় আসাদুজ্জামান ও তার সহযোগী ছাত্ররা আইয়ুব খান বিরোধী ¯েøাগান দিতে থাকে। সে সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে খবু কাছে গিয়ে আসাদের বুক লক্ষ্য করে গুলীবর্ষণ করে। এতে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়ে আসাদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সতীর্থ ছাত্ররা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর আসাদুজ্জামানের শহীদ হবার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠে। ছাত্রদের আন্দোলন গণ-আন্দালনে পরিণত হয়। সংগঠিত হয় ’৬৯’র গণঅভ্যূথান। এই ’৬৯’র গণঅভ্যূথানের ফলেই পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খান রাষ্ট্র ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ’৬৯’র গণঅভ্যূথানের প্রেক্ষাপটই হচ্ছে হাতিরদিয়া বাজারের পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটিকে কেউ উদযাপন করছে না। অভিজ্ঞ স্থানীয় রাজনীতিকরা জানিয়েছেন, হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল পালনকালে পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা তথা শহীদ আসাদের আহত হবার ঘটনা না ঘটলে ৬৯’র গণঅভ্যূথান সংগঠিত হতো না।
প্রতিবছর শহীদ আসাদ দিবস এলে তৎকালীন ছাত্রনেতা বর্তমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, হায়দর আকবর খান রনুসহ বিভিন্ন বাম আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ শিবপুরে শহীদ আসাদের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন করতে আসতেন। কিন্তু এখন শহীদ আসাদ দিবস আর তেমন মর্যাদায় পালন করা হয় না। ঢাকা থেকে রাজনীতিকরা খুব একটা আসেন না। স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোও যথাযথভাবে দিনটি পালন করেন না। তবে এ বছর শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস্ এন্ড হাই স্কুল দিনটি উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সকালে কলেজের ছাত্র, শিক্ষ, অভিভাবকদের সমন্বয়ে একটি বিশাল র‌্যালীর আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে একই স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে কুইজ প্রতিযোগিতা ও রচনা প্রতিযোগিতা। এরপর অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ আলোচনা সভা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ