Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চল মাছের উদ্বৃত্ত এলাকা

ইলিশ উৎপাদন সারা দেশের ৬০ ভাগ

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


নাছিম উল আলম : নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল সম্ভবনাময় মৎস সেক্টরে নানা সীমাবদ্ধতায় কাঙ্খিত স¤প্রসারণ বাধাগ্রস্থ হলেও গত পাঁচ বছরে মাছের উৎপাদন প্রায় ৩৫ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশে প্রাণীজ আমিষের বড় যোগান দিচ্ছে এ অঞ্চলের মাছ। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল ইতোমধ্যেই মাছের উদ্বৃত্ত এলাকায় পারিনত হলেও মৎস সেক্টরে আজ পর্যন্ত কোন গবেষনা প্রতিষ্ঠান ও আধুনিক মৎস অবতরণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেই। এমনকি সারাদেশে উৎপাদিত ও আহরণকৃত ইলিশের ৬০ভাগেরও বেশী বরিশাল অঞ্চলে আহরিত হলেও আজ পর্যন্ত এ অঞ্চলে কোন ইলিশ গবেষনা কার্যক্রমও অনুপস্থিত। উপরন্তু মৎস অধিদপ্তরে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় মঞ্জুরীকৃত জনবল যেমনি কাঙ্খিত মাত্রার চেয়ে কম, তেমনি মঞ্জুরীকৃত পদের প্রায় ৬০ভাগই এখনো শূন্য পড়ে আছে। অথচ এ অঞ্চলসহ সারা দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস সেক্টরের যথেষ্ঠ অবদান রয়েছে।
এককালের মাছেÑভাতে বাঙলীর এ দেশে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মোট মাছের উৎপাদন ছিল প্রায় ৩৮লাখ টনের মত। যারমধ্যে নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলে মাছের উৎপাদন ও সহনীয় আহরণ ছিল প্রায় ৪লাখ ৬৫হাজার টন। যা এ অঞ্চলে চাহিদার চেয়ে প্রায় দেড় লাখ টন বেশী। এমনকি গতবছর দেশে যে প্রায় ৫লাখ টনের কাছাকাছি ইলিশ উৎপাদিত হয়, তার ২.৭৮লাখ টনই উৎপাদিত হয় শুধুমাত্র দক্ষিণাঞ্চলে। মৎস সেক্টরে ইলিশের একক অবদান প্রায় ১২ভাগ। জিডিপিতে এ মাছের অবদান প্রায় ১ভাগ। অথচ ইলিশ নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন গবেষনা কেন্দ্র দেশে গড়ে ওঠেনি। এমনকি ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও জাটকা সংরক্ষণ নিয়েও গত দুবছর ধরে দেশে কোন উন্নয়ন প্রকল্প নেই। বরিশাল অঞ্চলে একটি ইলিশ গবেষনা কেন্ত্র স্থাপনের দীর্ঘদিনের দাবী আজও সরকারের বিবেচনা লাভ করেনি।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২৭হাজার হেক্টরের ৪লাখ ২৭হাজারটি পুকুর ও দীঘি, ৯০টি প্রবাহমান নদ-নদী, ৪৩টি বিল, ১টি বাওড়, প্রায় দেড় হাজার খাল, ৬২৮টি প্লাবনভূমী ও ৬৬৭টি বরোপীট ছাড়াও দেড় সহশ্রাধীক বেসরকারী বাণিজ্যিক মৎস খামার এবং সাগর উপক’লে গতবছর ৪লাখ ৬৫হাজার টনের মত মাছ আহরিত হয়েছে। উৎপাদিত ও আহরিত এসব মাছের মধ্যে ইলিশের পরিমাণ ছিল ২লাখ ৭৮হাজার টনের মত। যার মধ্যে সাগর ও তার উপক’লভাগ থেকে প্রায় ১লাখ ৬৩হাজার টন ইলিশ আহরণ করা হয়। এখন সারা দেশের মোট উৎপাদিত ও সহনীয় আহরণকৃত ইলিশের ৬০ভাগই দক্ষিণাঞ্চলে ।
ইলিশের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অনেক অপ্রচলিত মৎস পণ্য উৎপাদন ও বিপনন হচ্ছে। হাংগর, কাকড়া ও কুচিয়া রপ্তানীতেও দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক অবদান রয়েছে। এমনকি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিপুল পরিমান ইলিশ রফ্তানী হত। উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ইলিশের চাহিদা এখনো দক্ষিণাঞ্চল থেকেই মেটান হচ্ছে।
তবে এখনো দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রকৃতির অপার দান ইলিশ নিয়ে কোন গবেষনা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। অনুরূপভাবে মৎস গবেষনা ইনস্টিউটি-এর একটি উপকেন্দ্র ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলে কোন পূর্ণাঙ্গ গবেষনাগার স্থাপনের উদ্যোগও নেই। এমসনকি এ অঞ্চলের মৎস সম্পদ উন্নয়নে আজ পর্যন্ত বড় মাপের কোন প্রকল্পও বাস্তবায়ন হয়নি।
উপরন্তু এঅঞ্চলে মৎস অধিদফ্তরের জনবল সংকট প্রকট। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় মৎস অধিদপ্তরের ১৬৮টি কর্মকর্তার পদের বিপরিতে কর্মরত মাত্র ৮১জন। ৮৭টি পদই শূন্য পড়ে আছে লোকবলের অভাবে। ২শটি বিভিন্নস্তরের কর্মচারীর পাদের বিপরিতে কর্মরত আছে ১২৪, ৭৬টি পদের বিপরিতে কোন জনবল নেই। ৪২টি উপজেলা মৎস কর্মকতার পদের ১২টি শূন্য। ৭টি সিনিয়র সহকারী পরিচালকের ৪টি পদ শূন্য। একমাত্র সহকারী পরিচালকের পদটিও শূন্য। মৎস স¤প্রসারণ ও মান নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তার ৩৭টি পদের সবগুলোই শূন্য। ৪২টি সহকারী মৎস কর্মকর্তার ১১টি পদ শূন্য।
তবে এসব কিছুর পরেও গত ১থেকে ২২অক্টোবর মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমে সহশ্রাধীক অভিযান পরিচালনা সহ প্রায় সাড়ে ৯শ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। এসব অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ১০টন মা ইলিশ ও ৪০লাখ মিটার জাল আটক করা হয়। যার দাম প্রায় ৯কোটি টাকা। এসময় ৭শতাধিক মামলা দায়ের ছাড়াও ১৬লাখ টাকা জরিমানা আদায় সহ ৫৮০জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। গত ১নভেম্বর থেকে আগামী ৩০জুন পর্যন্ত যে জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচী চলছে তার আওতায় ইতোমধ্যে ১৫৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ছাড়াও প্রায় সোয়া ৩শ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রায় ৩১টন জাটকাসহ ৩টন অন্যান্য মাছ আটক করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রায় সাড়ে ৩কোটি টাকা মূল্যের ৪৩লাখ মিটার জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসময় ১৩০টি মামলা দায়ের করেছে মৎস অধিদফ্তর। প্রায় ৪০লাখ টাকা জরিমানা আদায়সহ ৪১জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ডও প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতবছরের মত চলতি বছরও গত ১৫জানুয়ারী থেকে কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জালসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জাল ও মৎস আহরণ উপকরনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে। গত ১থেকে ২২অক্টোবর পর্যন্ত প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণকালীন সময়ে বেকার প্রায় ২লাখ ২৮হাজার জেলে পরিবারের মধ্যে ২০কেজি প্রায় সাড়ে ৪হাজার টন চাল বিতরন করা হয় দক্ষিণাঞ্চলে।
মৎস সেক্টরে বর্তমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে প্রায় ৫লাখটন মাছ উৎপাদন ও সহনীয় আহরণ সম্ভব হতে পারে বলে আশাবাদী মৎস অধিদফ্তরের দায়িত্বশীল মহল।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ