পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভিসির কক্ষে আন্দোলনের সমন্বয়ককে ছাত্রলীগের টর্চার
সম্প্রতি ঢাবি অধিভুক্ত হওয়া সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে এবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করেছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। এসময় আন্দোলনের সমন্বয়ক বিশ^বিদ্যালয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান সাদিককে ঘটনাস্থল থেকে টেনে-হেঁচড়ে ভিসির কক্ষে নিয়ে টর্চার করে ছাত্রলীগ নেতারা। লাঞ্ছিত করা হয় দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার মামুন তুষারকে। এছাড়াও গত সোমবার রাত থেকে আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এসময় ছাত্রলীগের নেতারা আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে বলেও অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সকাল থেকে ক্লাস বর্জনসহ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। অবরোধ করা হয় রাজু ভাস্কর্যের সামনের সড়ক। দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে তাদের ঠেকাতে সেখানে আসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ধাক্কা দিয়ে সরানো হয় বিক্ষুব্ধদের।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে সেখানে আসেন কেন্দ্রীয় ও বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী। এসময় হলসমূহ থেকেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ডেকে আনা হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন যে, ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগের নেতাদের সরাসরি ব্যবহার করেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দিকে গেলে সেসময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সেক্রেটারি এস এম জাকির হোসাইন এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান সেক্রেটারী মোতাহার হোসেন প্রিন্স ভিসির সাথে দেখা করেন এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর সাথে পরামর্শ করেন।
সাক্ষাৎ শেষে ভিসির কক্ষ থেকে বের হয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে এসে বিষয়টির সমাধানে ভিসির সঙ্গে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে কথা বলার আশ^াস দেন। কিন্তু তাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজি না হয়ে ভিসিকে ঘটনাস্থলে আসার দাবি করেন। তখন ছাত্রলীগ নেতারা আন্দোলনকারীদের হুমকির সুরে বলেন, ‘তোমরা না আসলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মশিউর রহমান সাদিকের মুখে হাত দিয়ে টেনে হেঁচড়ে আন্দোলনকারীদের থেকে ভিসির কক্ষে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমানসহ অন্যান্য হলের নেতা-নেত্রীরা। এসময় ভিসির কক্ষে রেখে ওই ছেলেকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়। জোর প্রয়োগ করে কেড়ে নেয়া হয় তার মুঠোফোন।
এসময় এ ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে ছাত্রলীগের তিন নেত্রী ও এক নেতার হাতে লাঞ্ছিত হন ক্যাম্পাসে কর্মরত দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের রিপোর্টার মামুন তুষার, এসময় তার মোবাইল কেড়ে নেয়াসহ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করে তারা। সাংবাদিক পরিচয় দিলেও আরো ক্ষেপে গালাগালি করেন বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের হল শাখার তিন নেত্রী হলেন- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি, রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা।
এর আগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনকারীরা। বেশির ভাগ বিভাগেই ক্লাস হয়নি। সকাল সাড়ে ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে বেলা ১১টার দিকে একটি মিছিল কলা ভবন, ব্যবসায়ে শিক্ষা অনুষদ হয়ে সূর্যসেন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, শহীদ মিনার হয়ে কার্জন এসে এখানকার বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে পুনরায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে সাড়ে ১১টা থেকে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। এসময় আস পাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘তারা চারজন (ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ^বিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন।’ ছাত্রলীগের অন্যরা কেন এসেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা কেউ দেখতে এসেছে এবং যেহেতু সবাই এখানকার ছাত্র, তাই যার যার কাজে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে এসেছে।’
আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়া ও হেনস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাউকে হেনস্তা করা হয়নি। সমন্বয়ককে ধাক্কা দিয়ে সরানোর কোন সুযোগ নেই। এছাড়াও ছাত্রলীগ কাউকে উত্তক্ত করে বলে আমি বিশ^াস করি না। যদি করে থাকে তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, ‘যদি করে থাকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আন্দোলনের নামে তারা বিশ^বিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করেছে, তখনতো আমরা বসে থাকতে পারি না।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে, সেগুলো আমরা আরো জোরদার করবো। তাদের সব সমস্যা মেনে নিয়ে আমরা সেগুলো সমাধানের কথা আগেও বলেছি এখনও বলছি।’ শিক্ষার্থীদের হেনস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন এভাবে দুই তিন দিন যাবৎ এরকম চলতে থাকে তখন অনেক সময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। আর নারীদের উত্তক্তের বিষয়টি ঠিক জানি না।’ আন্দোলন প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘ছাত্রলীগ ব্যবস্থা নিয়েছে এটা বলা যাবে না। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ছিল। ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার কথা বলার কোন কারণ নেই। তারা আমার কাছে এসে বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে জানতে চাইছে।’
নারীদের উত্যক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থী সবাই আমাদের ছাত্র-ছাত্রী। এখন কোন মেয়ে শিক্ষার্থীকে কী করা হয়েছে সে বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডির মধ্য দিয়ে খতিয়ে দেখবো।’ নিজের কক্ষে ছাত্রলীগ কর্তৃক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে টর্চারের বিষয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তখন আমি পাশের রুমে ছিলাম। আমি তো জানি না। একটি ছেলে আমার কাছে এসেছে, সে হাসি মুখে এখান থেকে চলে গেছে। আমি তাকে আমার বিষয়গুলো ব্রিফ করেছি। তাকে বলেছি যেন সে এগুলো অন্যদেরও বলে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।