পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : শিশু জয়নাবকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে পাকিস্তানে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ওই ঘটনা নিয়ে জয়নাবের বাবা মুখ খোলার পর আরও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুরের অন্য অভিভাবকেরা। জিও টেলিভিশনের পক্ষ থেকে কসুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে বলে খবর প্রকাশিত হলেও পাকিস্তানের সামা টেলিভিশন জানিয়েছে, সিন্ধু গণপরিষদের সামনে শুক্রবার বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের অভিনয় শিল্পীরা।
পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম জানায়, সপ্তাহখানেক আগে সাত বছরের ছোট্ট জয়নাবকে পাকিস্তানের কাসুর থেকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। ধারণা করা হচ্ছে, ৪ জানুয়ারি কোরআন ক্লাসে শেষে বাসায় ফেরার পথে জয়নাবকে তুলে নিয়ে যায় দুস্কৃতিকারীরা। ৯ জানুয়ারি শহরের এক আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার হয় জয়নাবের দেহ। তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা পাকিস্তান। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার টেলিভিশন পর্দায় মেয়েকে নিয়ে হাজির হন কিরণ। একই দিনে বিক্ষোভকারীরা কাসুর শহরে পুলিশ প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়। এতে দু’জন নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল শুক্রবারও অব্যাহত ছিল বিক্ষোভ।
জয়নাবের পরিবারের দাবি, তাদের সন্তান নিখোঁজের পরপরই পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্তে¡ও কেন অপরাধীদের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে পাকিস্তানজুড়ে এখন প্রশ্ন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি জয়নাবকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে ওই ব্যক্তির চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। ফুটেজ দেখে পুলিশ ওই ব্যক্তির প্রতিকৃতি এঁকেছে। রাজ্য পুলিশ বলছে, কাসুরে গত দুই বছরে এ রকম ১২টি হত্যাকাÐের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে পাঁচজনের হত্যার ঘটনায় এক ব্যক্তিই সন্দেহ করা হচ্ছে। এসব হত্যায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৯০ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জয়নাবের বাবা। তিনি বলেছেন, তার আর কোনও কথা নাই। ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। জয়নাবের বাবা জানান, বিক্ষোভকারীদের সহিংসতার সঙ্গে তিনি একমত নন। তবে পুলিশের প্রতি ক্ষোভের ন্যায্যতা তার কাছে প্রশ্নাতীত। জয়নাবের বাবার ধারাবাহিকতায় সেখানকার অভিভাবকরাও পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
জিও টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের পর কাসুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এরইমধ্যে ধর্মঘট ডাকা দোকানিরা তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। তবে এখনও কসুরের পথে পথে বিক্ষোভকারীরা রয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে সামা টেলিভিশনের খবরে অভিনয় শিল্পীদের বিক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে। প্রতিবাদীদের ঠেকাতে গুলি পর্যন্ত চালাতে হয়েছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে দুই বিক্ষোভকারীর। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার মেয়েকে কোলে নিয়ে খবর পড়তে সামা টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন কিরণ। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘সঞ্চালক নয়, আজ আমি আপনাদের সামনে এসেছি একজন মা হিসেবে। আর তাই নিজের মেয়েকে সঙ্গে এনেছি। পাকিস্তান আজ প্রচÐ ভারী এক কফিন বইছে। এটা শুধু একটা শিশুর খুন নয়, গোটা সমাজের খুন।’
এক আত্মীয়ের বাড়িতে জয়নাবকে রেখে সউদী আরবে ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন জয়নাবের বাবা-মা। সেই প্রসঙ্গ টেনে কিরণ বলেন, একদিকে বাবা-মা গিয়েছেন মেয়ের জন্য প্রার্থনা করতে, অন্যদিকে তাদের মেয়েকেই অত্যাচার করে নৃশংসভাবে খুন হতে হল। গোটা ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কিরণ। বুধবার সামা টেলিভিশনের সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ প্রচারিত বুলেটিনের প্রথম দেড়মিনিট কিরণ নাজ তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে বসে সংবাদপাঠ করেন। সেই দেড়মিনিট-ই আলোড়ন ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে। বুলেটিনে কিরণ নাজের এই ভাবমর্যাদার প্রশংসায় সরব হয়েছে সব মহল।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জয়নাব হত্যার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। ‘হ্যাশট্যাগ জাস্টিস ফর জয়নাব’ লিখে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন চলচ্চিত্র ও ক্রিকেট তারকারা। এ ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা। পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশে এক টুইটে অভিনেত্রী মাহিরা খান লিখেছেন, খুনিকে খুঁজে বের করতে যা যা করা দরকার তাই করুন। আল্লাহর দোহাই লাগে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। এমন উদাহরণ তৈরি করুন যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করার সাহস কেউ না পায়। টুইটারে ‘জাস্টিস ফর জয়নাব’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে মোহাম্মদ আমির লেখেন, আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। নিঃসঙ্গ ও ঘৃণ্য মনে হচ্ছে। এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে, আমরা কোন সমাজে বাস করছি। শিশুটির মা-বাবার প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই আমার। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।