Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতারক হজ এজেন্সি’র বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ জারি

প্রতারণার শিকার ১৬ হজযাত্রী এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 শামসুল ইসলাম : প্রতারণার শিকার রংপুরের ১৬ জন হজযাত্রী এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। চলতি বছরেও তারা হজে যেতে পারবে কিনা তা’নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সাউথ এশিয়ান ট্রাভেলস (লাইসেন্স নং -১২২৩)-এর স্বত্বাধিকারী সালেহ আকবারের কাছে গত বছর হজে যাওয়ার জন্য রংপুরের হজযাত্রী স্কুল শিক্ষক নূর আলম সিদ্দিকী, নূরুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল শাহ তার স্ত্রী বেগম হোসনে আরা, খোরশেদ আলম, জেসমিন পারভীন নাছিমা, এস এম নজরুল ইসলাম, নুরন্নাহার বেগম, সুলতান মিয়া, খাইরুজ্জামান, সেলিনা ডেইজি, শাহিদার রহমান, মোসলেম উদ্দিন আজাদীসহ ১৬ জন হজযাত্রী হজে যাওয়ার জন্য ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা প্রদান করে। সালেহ আকবর আল-সাফা এয়ার ট্রাভেলস (২৩৩) হজ এজেন্সি’র মালিক ইউসুফ মিয়ার মাধ্যমে এসব হজযাত্রীদের হজ ভিসাসহ হজে যাওয়ার অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রতারক হজ এজেন্সি’র মালিক তাদেরকে বিমানের টিকিট না দিয়ে হাজী ক্যাম্পে ফেলে সউদী আরবে পালিয়ে যায়। প্রতারণার শিকার এসব হজযাত্রী হাজী ক্যাম্পে অনাহার অনিদ্রায় কান্না-কাটি করে হজে যেতে না পেরে নিজ নিজ বাড়ী ফিরে যান। এ ব্যাপারে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় লেখা লেখিও হয়েছে। প্রতারণার শিকার হজযাত্রীরা তাদের গ্রæপ লিডার রংপুরের খলিফাপাড়ার মো: হাফিজুর রহমানের মাধ্যমে ত্রিশ দিনের মধ্যে হজযাত্রীদের পাওনা ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য গত ১০ জানুয়ারী চেক জালিয়াতির কথা উল্লেখ করে হজ এজেন্সি’র মালিক সালেহ আকবরকে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেছে। 

গত ডিসেম্বর মাসে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন কক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি’র প্রধান যুগ্ন-সচিব (হজ) মো: হাফিজ উদ্দিন ও যুগ্ন-সচিব এ বিএম আমিন উল্লাহ নবী রংপুরের প্রতারণার শিকার ১৬ জন হজযাত্রীকে চলতি বছর সরকারী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হজে পাঠানোর জন্য ৩ দিনের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সাউথ এশিয়ান ট্রাভেলসের (১২২৩) স্বত্বাধিকারী সালেহ আকবরকে নিদের্শ দেন। প্রতারণার শিকার হজযাত্রীদের ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা দ্রæত ফেরত দেয়ার নিদের্শ দেয় তদন্ত কমিটি। কিন্ত প্রতারণার শিকার উল্লেখিত হজযাত্রীদের ২০১৮ সালে সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজে প্রেরণের জন্য অদ্যাবধি নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন না করে সালেহ আকবর গা-ঢাকা দিয়েছে বলে দু’জন হজযাত্রীর ছেলে নাজিম অভিযোগ করেছেন। গত ১০ ডিসেম্বর হজ এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারী সালেহ আকবার ১৬ জন হজযাত্রী’র পাওনা ৪৪ হাজার ৩৬ হাজার টাকার একটি চেক রংপুর সদরের হজযাত্রীদের গ্রæপ লিডার হাফিজুর রহমানকে প্রদান করে। কিন্ত উক্ত চেক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে ডিজঅর্নার হয়েছে। হজযাত্রীদের গ্রæপ লিডার হাফিজুর রহমান জানান, প্রতারণার শিকার ১৬ হজযাত্রীকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছর হজে প্রেরণের জন্য প্রতারক সালেহ আকবর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে টালবাহানা করে বেড়াচ্ছে। সে হজযাত্রীদের সাথে কোনো যোগাযোগ না করে চরম হতাশার মাঝে ফেলেছে হজযাত্রীদের। হজ এজেন্সি’র স্বত্বাধিকারী সালেহ আকবর রাতে ইনকিলাবকে বলেন, রংপুরের ১৬ জন হজযাত্রীর সাথে প্রতারণা করে আমি পালিয়ে যাইনি। পালিয়ে গেলে তিন কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতাম। তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন। এক প্রশ্নের জবাবে সালেহ আকবর বলেন, হজযাত্রীদের সাথে জালিয়াতি করলে তারা মামলা দায়ের করলে বা উকিল নোটিশ করলে জবাব দিবে বলেও উল্লেখ করেন। তবে ২০১৭ সালে ঝামেলায় পড়ার অযুহাত তুলে তাদের হজে পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিদের্শে সরকারীভাবে ১৬ জন হজযাত্রীকে হজে প্রেরণের চেষ্টা করছেন বলেও তিনি দাবী করেন। রংপুর থেকে হজযাত্রীদের গ্রæপ লিডার হাফিজুর রহমান রাতে ইনকিলাবকে বলেন, হজ এজেন্সি’র মালিক সালেহ আকবর গত ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৬ জন হজযাত্রীর পুরো টাকা পরিশোধের লিখিত অঙ্গীকার করেও তা’ পরিশোধ না করে প্রতারণা করেছে। গত ১০ ডিসেম্বরের পর হজযাত্রীদের টাকা পরিশোধ না করলে ক্ষতিপূরণের টাকাসহ দিতে বাধ্য থাকবে বলে সালেহ আকবর অঙ্গীকার করেছে। এসব হজযাত্রী’র সরকারী ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করার জন্য সে মাত্র ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। যা’ মাত্র ২ জনের নিবন্ধন করাও সম্ভব নয়। সালেহ আকবর একজন বিশ্ব চিটার বলে উল্লেখ করে গ্রæপ লিডার হাফিজুর রহমান বলেন, এসব নিরীহ হজযাত্রী হাজী ক্যাম্পে এহরামের কাপড় পড়ে যেভাবে কেঁদেছেন যা’ কেয়ামতের দৃশ্য দেখেছি। আমি নিজেও এহরামের কাপড় পড়ে প্রতারণার শিকার হজযাত্রীদের সাথে কেঁদেছি। হজযাত্রীদের টাকা নিয়ে সে অন্য পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে সালেহ আকবর। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি’র কর্মকর্তারা সালেহ আকবরকে যেভাবে অপমান অপদস্ত করেছেন তা’ কাউকে বলা যায় না । এর পরেও সালেহ আকবরের বোধদয় হচ্ছে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ