পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : অতীত গৌরব ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করে নব-উদীয়মান জাহাজ নির্মাণ শিল্পখাত বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ধীরগতিতে এগিয়ে চলেছে। এ শিল্পের গতি জোরদার করতে সময় থাকতেই উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়া জরুরি। অন্যথায় সৌভাগ্যের পায়রা যাবে উড়ে। অন্যান্য দেশ জাহাজের বাজার দখলে নিয়ে নেবে। শিপিং সার্কেলের অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, সরকারকে এই খাতের অর্থনৈতিক অবদান (জিডিপিতে কমপক্ষে ২ শতাংশ) নিশ্চিত করতে হলে এখনই সমন্বিতভাবে অগ্রাধিকারমূলক নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া প্রয়োজন চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল, খুলনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক মানস¤ম্পন্ন ইয়ার্ড। তাহলেই জাহাজ নির্মাণ খাতে ঘটবে প্রত্যাশিত বিপ্লব। এই সম্ভাবনা কাগুজে ব্যাপার নয়। চীন, ভিয়েতনামের সাফল্যই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। গার্মেন্টসে ভারত বাংলাদেশের প্রতিযোগী হলেও জাহাজ নির্মাণে তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বরং ভারত ঝুঁকছে বাংলাদেশ থেকে প্রতিযোগিতামূলক কম দামে ভাল মানের জাহাজ, নৌযান ক্রয়ে। ভারত ইতোমধ্যে কয়েকটি জাহাজের ফরমায়েশ দিয়েছে।
রফতানিযোগ্য আন্তর্জাতিক কারিগরি মানসম্পন্ন সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরীর জন্য সুদক্ষ, কর্মনিষ্ঠ ও মেধাবী মেরিন প্রকৌশলী, মাস্টার মেরিনার, নেভাল আর্কিটেক্ট এবং পরিশ্রমী কর্মপটু শ্রমিক বাংলাদেশে আছেন যথেষ্ট সংখ্যক। সস্তা শ্রম এই শিল্পে প্রধান সহায়ক। উদ্যোক্তারা বলছেন, এ শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের তরফে সরাসরি আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন নেই। প্রথমত একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা চাই। দ্বিতীয়ত দরকার ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাসসহ বিশেষ কিছু সহায়ক প্রণোদনা। সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় উৎসাহ এবং পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। জাহাজনির্মাণ খাত সম্ভাবনার ঝিলিক তুলেছে। যথাসময়ে কাজে লাগাতে না পারলে এ শিল্প টিকবে না। বরং স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
জাহাজনির্মাণ শিল্পখাতের নিশ্চিত সম্ভাবনা যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় এরজন্য আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে ৮ থেকে ১৫টি মানসম্মত শিপইয়ার্ড স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া প্রয়োজন। প্রত্যেক ইয়ার্ডে মাঝারি সাইজের সমুদ্রগামী মানসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণের অবকাঠামো স¤প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করতে হবে। মাঝারি ও বড় আকারের জাহাজ নির্মাণে কর্মসংস্থান, রফতানিতে মূল্যসংযোজন আয় হবে অনেক বেশিহারে। রফতানিমুখী জাহাজনির্মাণ শিল্পখাতের জন্য আমদানি কাঁচামাল, একসেসরিজ সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত করা, এরজন্য পোশাক শিল্পের কাঁচামালের মতোই স্বতন্ত্র বন্ডেড ওয়্যার হাউস স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় ব্যাংক ঋণ প্রদান, ঋণের শর্ত শিথিল করাসহ জটিলতা সহজীকরণ প্রয়োজন। জাহাজনির্মাণ শিল্পের উপযোগী কাঁচামাল, একসেসরিজ তৈরীর ব্যাপারে ভবিষ্যতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে তৈরি জাহাজ কিনতে ডেনমার্ক, জার্মানী, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও আফ্রিকান বিভিন্ন দেশ মুখিয়ে আছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সরকারের সমন্বিত সহযোগিতা ও সুনির্দিষ্ট সহায়তার আশ্বাস প্রদান করা হয় গতবছর শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমুর সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে। রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণশিল্প মালিকদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপবিল্ডিং অব বাংলাদেশ (এইওএসআইবি) নেতাদের সাথে শিল্পমন্ত্রীর এ সভায় জাহাজনির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগকৃত মূলধনের উচ্চহারে সুদে গৃহীত ঋণের ভর্তুকি প্রদানের জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করা হয়। এইওএসআইবি’র জেনারেল সেক্রেটারী ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জাহাজ নির্মাণশিল্পের বর্তমান অবস্থা, বিশ্ব বাজারের আলোকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং বিগত বছরগুলোতে দেশের অথনৈতিক উন্নয়নে এ খাতের অর্জন ও অবদান তুলে ধরে জানান, এ শিল্প অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা ধারণ করে আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তৈরি পোষাক শিল্পের মতোই আরও একটি প্রধান রফতানি খাতে পরিণত হয়েছে জাহাজ-নির্মাণ শিল্প। এটি স্বল্প সময়েই বিশ্ববাজারে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।
কিন্তু আশাব্যঞ্জক ফলাফল সত্তে¡ও বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আর্থিক সমস্যা মোকাবেলা করে যেতে হচ্ছে। এ শিল্পে যারা অবকাঠামোগত বিনিয়োগ করেছেন তারা সবাই এখন সঙ্কটে আছেন। সরকার ভর্তুকি না দিলে এসব প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা কঠিন হবে। বিশেষ করে অবকাঠামোগত বিনিয়োগে ব্যাংকঋণের সুদের হার ৪ শতাংশে এবং ২০ বছর মেয়াদে বিবেচিত হলে এ উদীয়মান শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ পাবে। জাহাজ তৈরি ও রফতানিকারক চীন, কোরিয়া, ভারতসহ অন্যসব দেশের জাহাজ নির্মাতারা মূলধন বিনিয়োগে সরকারের কাছ থেকে নামেমাত্র সুদে ঋণ সুবিধা, ভতুকি ও বিশেষ রফতানি সহায়তা (ইনসেনটিভ) পেয়ে থাকে। যেমন- জাপান, কোরিয়া, চীনে প্রায় ২৫ বছর মেয়াদে ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। ভারত ১০ বছর মেয়াদে ২০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। বিকাশমান জাহাজ শিল্প সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতেই তা সহায়ক হবে। বাংলাদেশকে মধ্যআয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য অর্জনের পথ সুগম হবে।
জাতিসংঘের অঙ্গ নৌ-সংস্থা আইএমও’র আইএসপিএস কোড (জাহাজ ও বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতকররণ)সহ বিভিন্ন বিধি-প্রবিধান ও কনভেনশন অনুযায়ী, জাহাজ-ট্যাংকার স্টিমারের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে উন্নততর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত লে-আউটের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এরজন্য ২৫ বছরের বেশি পুরনো জাহাজসমূহ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে এর পরিবর্তে প্রত্যেক দেশের নতুন জাহাজ প্রতিস্থাপনের বাধ্যবাধকতা আরোপিত হচ্ছে। এতে শুধু ইউরোপীয় দেশগুলোকেই বছরে প্রায় ৩ হাজার জাহাজের পরিবর্তে নতুন জাহাজ যোগ করতে হবে। এ অবস্থায় চীন, ভিয়েতনামের সবক’টি শিপইয়ার্ড গত ৫ বছরে অগ্রিম বুকড হয়ে গেছে। তবে সেসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সুলভে সুদক্ষ, অর্ধদক্ষ ও অদক্ষ শ্রমসুবিধা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর উপকূল ও নদ-নদী অববাহিকায় অনুকূল ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক অবস্থানগত সুবিধা জাহাজ-নির্মাণের ইয়ার্ড স্থাপনে সহায়ক। ফলে ইউরোপের নামীদামী শিপিং লাইন ও কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকেছে।
জাহাজ নির্মাণশিল্প বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এনামুল বাকী বলেছেন, জাহাজ নির্মাণ ও রফতানিখাত হচ্ছে বিশ্বের সেরা বাণিজ্য। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য এ শিল্পের বিকাশ প্রয়োজন। কেননা এটি একটি মাদার ইন্ডাষ্ট্রি। একে ঘিরে অনেক ধরনের উপখাত, লিংকেজ সহজেই গড়ে উঠবে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের পথ সহজেই খুলে যাবে। সাগর উপকূল ঘেরা ও নদীমাতৃক দেশ হওয়ার কারণে এদেশে মানসম্মত সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের উপযোগী শিপইয়ার্ড স্থাপন সুবিধাজনক। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম প্রতিযোগী হলেও বাংলাদেশ জাহাজনির্মাণ খাতে সুবিধাজনক অবস্থানে উঠে আসার সুযোগ রয়েছে। তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।