Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের আহŸান

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি আহŸান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে নিরলস প্রয়াস চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্নখাতে বিশ^ব্যাপী উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত হচ্ছে। দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়াই হোক সবার অঙ্গীকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনের দরবার হলে বাংলা একাডেমী আয়োজিত প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন রচিত ‘১৯৭১:রেজিস্ট্যান্স, রেজিলিয়েন্স এন্ড রিডেমসন’ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তিও চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্যে সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে অগ্রগতির সে যাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়।
ইতিহাস বিকৃতিকারীরাই ইতিহাসের আস্তকুুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয় মন্তব্য করে প্রেসিডেন্ট বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও এদেশের মানুষ পরিপূর্ণভাবে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি চক্র এখনও সুযোগ পেলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে উঠে পড়ে লাগে। অতীতেও এ চক্রটি আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বারবার বদলাতে অপচেষ্টা করেছে। সাময়িকভাবে এ চেষ্টা সফল হলেও চূড়ান্তভাবে তারা পরাস্ত হয়। তিনি বলেন, ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলে। কেউ তা বদলাতে পারে না। বরং যারা এই চেষ্টা করে, তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। তাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজš§ যাতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে তা নিশ্চিত করা সবার পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বাঙালীর মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি আলোকপাত করে আবদুল হামিদ বলেন, মুুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় অধ্যায়। আর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বিজয়ের মহানায়ক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে একদিনে হয়নি। এর পেছনে রয়েছে পাকিস্তানী শাসকদের শোষনের ২৪ বছরের নানা বঞ্চনা আর বেদনার ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এগিয়ে যায়। এসব আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন তৎকালীন পূর্ববাংলার আপোষহীন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। এজন্য তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়। সহ্য করতে হয় অমানুষিক নির্যাতন।
মেজর জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন রচিত বইটিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসংবলিত একটি ঐতিহাসিক দলিল আখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, এতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার অনেক উপকরণ রয়েছে। তার আশা, প্রাজ্ঞ লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সিক্ত আগ্রহীরা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে গবেষণা চলাবেন। এতে প্রজšে§র পর প্রজš§ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ করতে পারবে। তাহলেই দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী আলোচ্য বইটিকে মুক্তিযুদ্ধের ওপর অসামান্য গ্রন্থ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রচুর কাজ হয়েছে। আশা করি, আরও প্রচুর কাজ হবে। তিনি বলেন, অনেকেই বলার চেষ্টা করেন একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। বিশেষ করে ভারতীয় ও পাকিস্তানীদের মধ্যে এ দাবির প্রবণতা বেশি। এই বই পড়ে আমরা বুঝতে পারি, সেটি ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপিরচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন- একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়নি। তিনি বলেন, মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেনের বইটি অত্যন্ত উপাদেয়। এই বইয়ে অনেক নিষ্ঠা, শ্রম ও তথ্য আছে- যা অন্য অনেক বইয়ে নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক ইতিহাসের জন্য আমরা এখনো অপেক্ষমান। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তিও কাজ করে। এটিতে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। সরোয়ার হোসেনের বইয়ের পাতায় পাতায় সেই জনযুদ্ধই উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন সংযোজন।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সব বিতর্কের অবসান হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে আরেক আলোচক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সাল নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। কোনো জাতির মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ ধরনের অকারণ বিতর্ক দেখা যায় না। তিনি বলেন, সরোয়ার হোসেন তার বইয়ে ঐতিহাসিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় তুলে ধরেছেন।
গ্রন্থটির লেখক প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স সাত বছর ছিল। সে সময় বাবার চাকরি সূত্রে পাকিস্তাানের করাচি থাকায় তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। বাঙালির জন্য স্মরণীয় মুহুর্ত এই মুক্তিযুদ্ধকে ধরে রাখতেই তিনি বইটি লিখেছেন। যা তার দীর্ঘ গবেষণার ফসল। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি নতুন প্রজšে§র সামনে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরগাঁথা তুলে ধরার প্রচেষ্টা নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে ‘১৯৭১:রেজিস্ট্যান্স, রেজিলিয়েন্স এন্ড রিডেমসন’ গ্রন্থের বইটির মোড়ক উšে§াচন করেন। এ সময় লেখক ও বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক প্রেসিডেন্টের হাতে বইয়ের কপি তুলে দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ