পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভাগ্য চিঠি চালাচালি, বৈঠকের পর বৈঠক, সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর প্রত্যাখ্যানের মধ্যেই আটকে আছে। গত চার বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে মতবিরোধের কারণে আলোর মুখ দেখেনি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই প্রকল্প। সরকারের দুই বিভাগের মধ্যে এমন মতবিরোধের জেরে বিভিন্ন শহরে রাস্তায় রাস্তায় বর্জ্যরে ভাগাড়ের পাশ দিয়ে হাটতে মানুষকে নাকে রুমাল দিয়ে হাটতে হয়।
সংশিষ্টরা বলছেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলে পরিচ্ছন্ন নগরী পেত শহরবাসী। পাশাপাশি পাওয়া যেতো বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে ২০১৩ সালে ইতালিয়ান কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্স এসআরএলের সঙ্গে চুক্তি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ঢাকার বর্জ্য দিয়ে দৈনিক ৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা ছিল কোম্পানিটির। পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে ১০০ মেগাওয়াট করার পরিকল্পনাও ছিল।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতালিয়ান কোম্পানিটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করায় ভেস্তে যায় প্রকল্পটি। এরপর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি গঠন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলো সভা হয়। ২০১৫ সালে এসে আবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সংগ্রহ করা বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই পরিকল্পনা এখনও আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ।
স¤প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সবগুলো সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বৈঠক সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ ছাড়া অন্য কোনও সিটি কর্পোরেশন এই বর্জ্য দিতে রাজি হয়নি। সিটি কর্পোরেশনগুলো নিজেরাই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেই বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে।
বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ছাড়া অন্য সিটি কর্পোরেশনগুলো নিজেরাই বিদ্যুৎকেন্দ্র করার আগ্রহ জানায়।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি নামে আলাদা একটি কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব উঠলেও পরে তা বাতিল করা হয়। এছাড়া, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমিন বাজার ও মাতুয়াইলের ডাম্পিং স্টেশনের জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সিটি কর্পোরেশনকে। প্রথম দিকে ঢাকার দুই মেয়রের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নিয়ে বৈঠকে করে বিদ্যুৎ বিভাগ। শুরুতে রাজি হলেও পরে আবার চিঠি দিয়ে মেয়ররা কর্পোরেশনের উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা জানান।
স¤প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সারসংক্ষেপে দেখা যায়, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জাপান, কোরিয়া ও চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে সিটি কর্পোরেশনগুলোর কাছে প্রস্তাব এসেছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সিটি কর্পোরেশনগুলো এগিয়ে আসছে না। তারা নিজেরাই বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করতে চায়। এ কারণে পিডিবির অধীনে কেরানীগঞ্জে একটি প্যান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে আরও একটি প্যান্ট করা হবে। কারণ সেখানকার মেয়র আইভি রহমান তার এলাকার বর্জ্য দিতে রাজি হয়েছেন।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। আর কোরবানির ঈদের দিন উৎপাদন হয় আরও অন্তত পাঁচ হাজার টন বর্জ্য। বিশাল পরিমাণের এই বর্জ্য নিয়ে ফেলা হয় আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ডাম্পিং স্টেশনে। ঢাকার এই বর্জ্য দিয়ে অন্তত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে জানান সংশিষ্টরা।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, পাইলট প্রকল্প হিসেবে কেরানীগঞ্জে বর্জ্যভিত্তিক এক মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সঙ্গে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি চুক্তিও সই হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৮ মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মরহুম আনিসুল হকও নিজেদের উদ্যোগে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছিলেন। এ কারণে গত বছরের এপ্রিল মাসে চীন ও থাইল্যান্ডের দুইটি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শনও করেছিলেন তিনি।
এর বিপরীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভি রহমান বলেন, বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও রয়েছে। তিনি বলেন, শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শহরকে বর্জ্যমুক্ত রাখা জরুরি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই বর্জ্য ব্যবহার করা গেলে সেটা সম্ভব হবে। এ থেকে বিদ্যুৎও আসবে। তাই আমরা বর্জ্য দিতে রাজি হয়েছি।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এই ধরনের উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুতের দাম একটু বেশি পড়লেও বিদ্যুৎ তো পাওয়া যাবে। পাশাপাশি শহরও পরিচ্ছন্ন থাকবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত দ্রæত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। বারবার সভা না করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। ঢাকা এখন আধুনিক শহর। এই শহরে এই ময়লা-আবর্জনা মানায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।