পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : কিছু ব্যাংক গুরুতর সংকটে পড়েছে। ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া কোনো গ্রুপ যেমন ব্যস্ত তেমনি খেলাপি ঋণে জর্জরিত হয়েছে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অনেকেই এখন মালিকানা পরিবর্তনের জন্যে চেষ্টা করছেন। এ ধরনের পর্যবেক্ষণ খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের যা তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে পাঠিয়েছেন। এসব ব্যাংককে একীভূত করা যায় কিনা সে বিবেচনা করতেও তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সম্প্রতি এ ধরনের এক চিঠি গভর্নরের কাছে পাঠিয়েছেন মুহিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমস্যাবহুল ব্যাংকগুলোর পরিচালক রদবদল করেছে। এমডিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী বলেন, উদ্যোক্তরাই ফার্মার্স ব্যাংকের সংকটের জন্যে দায়ী। তিনি চান, অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হোক এ ব্যাংকটিকে। গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের কাছেও এ ধরনের মত প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা করবে। এ পরিস্থিতিতে আমার পরামর্শ এটাই। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরো তিনটি ব্যাংককে লাইসেন্স প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে বাংলা ব্যাংক, পিপলস ইসলামি ব্যাংক ও পুলিশ ব্যাংক’কে লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।
যদিও দেশে বেসরকারি খাতে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতে নতুন আর কোন ব্যাংক অনুমোদন না দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, স¤প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ‘দি সিটিজেন ব্যাংক লিমিটেড’ নামে বেসরকারি খাতে একটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চাওয়া হয়। কিন্তু দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন করে বেসরকারি খাতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া উচিত হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মোহাম্মদ ইকবাল নামের এক উদ্যোক্তা প্রস্তাবিত সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে এই ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে আবেদন করলে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রীর দেয়া চিঠির উত্তরে স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নতুন করে বেসরকারি খাতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন দেয়া ব্যাংকগুলো লাইসেন্সের শর্ত পরিপালন করছে না। নতুন ব্যাংকগুলো ৩ বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ইস্যু, মোট ঋণ ও অগ্রীমের অন্তত ৫ শতাংশ কৃষি ও পল্লী ঋণখাতে বিনিয়োগ করার ইত্যাদি শর্ত প্রদান করা হলেও ব্যাংকগুলো তা পরিপালন করতে সক্ষম হয়নি। এখন এই প্রেক্ষাপটে ও বিরাজমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে আরও নতুন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সহায়ক হবে না।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, একদিকে ব্যাংকগুলোকে একীভূত এবং নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, জোর করে কোনো ব্যাংককে একীভূত করার কোনো আইন দেশে নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কিছু করার নেই। আর্থিকভাবে কোনো শক্তিশালী ব্যাংক দুর্বল কোনো ব্যাংককে একীভূত করতে চায় না।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মানসুর বলেন, দুই বা ততোধিক ব্যাংককে একীভূত করার প্রচেষ্টা বর্তমান ব্যাংকিং পরিবেশের সঙ্গে খাপখাওয়ার যোগ্য। নজিরবিহীনও বটে। ৫৭টি ব্যাংক থাকার পরও এ পরিস্থিতিতে আরো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানকে তিনি অগ্রহণযোগ্য মনে করেন। ব্যাংক বিধি ও ব্যাংকিং আইনের বেশকিছু লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে।
এ ধরনের বিভিন্ন ত্রুটির কারণে ফার্মার্স ব্যাংক এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ফার্মার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও এর অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতিকে গত ২৭ নভেম্বর সরে যেতে বাধ্য করে। অপসারণ করা হয় ব্যাংকটির এমডি একেএম শামীমকেও।
গত ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংকের এমডি দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণ করার নির্দেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে ৭’শ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। এনআরবিসি ও ফার্মার্স ব্যাংক দুটির পরিচালনা পরিষদ নতুন করে গঠন করা হয়। এছাড়া গত বছর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সোস্যাল ইসলামি ব্যাংকে হস্তক্ষেপের বিষয়টি বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।