ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
বিদ্যুত ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভ‚ত হয়েছে সব সময়। তেমনিভাবে বিকল্প শক্তি অনুসন্ধানের তাকিদও অনুভূত হয়েছে। গ্যাস ও তেলশক্তির সাহায্যে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের দ্রুত যোগান নিশ্চিত করা সহজসাধ্য নয় বলেই বিকল্প বিদ্যুত শক্তির প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা বেশি করে সামনে এসেছে। এই প্রয়োজন মেটাতেই সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা নিয়ে এসেছে সৌর বিদ্যুত।
তেল ও গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে দিনে দিনে আমাদের দেশের খনিজ সম্পদের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে কোন জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। ফলে সম্পদের ঘাটতির প্রশ্ন আসে না। এই বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কোন লোডশেডিং নেই এমনকি কোন প্রকার বিল দিতে হয় না।
ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে বাড়ির যে কোন রৌদ্রময় স্থানে সহজেই এটি স্থাপন করা যায়। এই বিদ্যুতে উচ্চ ভোল্টেজ না থাকায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট বা তড়িতাহত হবার আশঙ্কা নেই। সৌর প্যানেলের উপর ভিত্তি করে এটি প্রায় বিশ বছর পর্যন্ত সেবা দিতে পারে। এছাড়াও রয়েছে শক্তিশালী চার্জার, যা অতিরিক্ত ভোল্টেজ, কম ভোল্টেজ এবং সর্ট সার্কিট থেকে সকল প্রকার বৈদ্যুতিক পণ্য রক্ষা করে।
বাংলাদেশের যে সব এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নেই, সেই সব এলাকার অনেক পরিবারই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে। এক সময় সৌরবিদ্যুৎ শুধু বাড়িতে ব্যবহার হত। হোম সিস্টেম ছাড়াও এখন বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে এমনকি ব্যবসায়ীরা তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানে স্বল্প শক্তিতে চালিত মেশিনগুলো চালানোর কাজে সৌর প্যানেল ব্যবহার করছে। সৌর বিদুত্যের আলোয় আলোকিত হয়েছে বেশ কিছু পশ্চাৎপদ এলাকা; বিশেষ করে যেখানে বিদ্যুত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তেমন অনগ্রসর এলাকায়ও সৌর বিদ্যুত আশা ও সম্ভাবনার স্ফুরণ ঘটিয়েছে।
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা এখনও সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে সম্ভাবনাময়। এ সম্ভাবনার আভাস সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম, চর ও পাহাড়ি এলাকায় এখন রাতে সৌরবিদ্যুতে বাতি জ্বলছে। রাতে বাতি জ্বালানো ছাড়াও বৈদ্যুতিক পাখা ও টেলিভিশন চালানোর কাজে সৌরবিদ্যুৎ এসব এলাকার মানুষের মধ্যে খুব দ্রæত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একের পর এক এই সুবিধা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা এলাকায়।
২০০৩ সাল থেকে দেশে নানা এলাকা ইডাকল, গ্রামীণ শক্তি, ব্র্যাক, সৃজনী প্রভৃতি কোম্পানি সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাংলাদেশের মতো একটি সৌর আলোকিত দেশে সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এখানে বছরের তিনশ’ দিনের বেশি সময় রোদ থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকার খুব কম দেশে সারা বছর এত বেশি রোদ থাকে। কিন্তু সেখানে কার্যকর অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনে রয়েছে নানা সুযোগ। এর খরচও মোটামুটি সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে। এসব কোম্পানির কর্মীদের খবর দিলে তারা সংশ্লিষ্ট বাড়িতে সৌরপ্যানেল স্থাপন করে দেয়। এতে লোডশেডিংয়ের ঝামেলা নেই। চাহিদা অনুযায়ী সব সময়ই বৈদ্যুতিক সুবিধা পাওয়া যায়।
বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে সেচকাজ চলছে। যদি পরিকল্পিতভাবে সারাদেশেই সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে সেচকাজ করা সম্ভব হয়; তাহলে বছরে বিপুল পরিমাণ ডিজেল সাশ্রয় হয়। এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এই ব্যবস্থায় কার্বন নিঃসরণ বন্ধের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা রাখা সম্ভব। কারণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব।
সেচ মৌসুমে কম-খরচে ক্ষেতে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সোলার পাম্প প্রকল্প; যা কৃষি অর্থনীতিতে খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের প্রায় শতভাগ ডিজেল চালিত পাম্পগুলো সৌর প্রকল্পের আওতায় চলে আসবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের আশা, পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে কমবে আমদানিনির্ভরতা।
কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির বাংলাদেশে ডিজেলের ঘাটতি কিংবা বিদ্যুৎ সংকটে প্রায় প্রত্যেক বছরই বিঘিœত হয় সেচ কার্যক্রম, ব্যাহত হয় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। সেচ সমস্যা দূর করতে সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইডকল এরই মধ্যে দেশব্যাপী ফসলি জমিতে স্থাপন করেছে প্রায় ২শ’রও বেশি সোলার পাম্প। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ লাখেরও বেশি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প আছে। এই সেচ পাম্পগুলোতে যদি সৌর শক্তি ব্যবহার করা যায়, তাহলে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। এটা পরিবেশের জন্যই ভালো। সেচ মৌসুমে ফসল উৎপাদনে ডিজেল পাম্পের জায়গায় সোলার পাম্প স্থাপন করা গেলে, বছরে প্রায় ১০ লাখ টন জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে।
বর্তমান যুগে বিদ্যুৎ একটি দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে একদিকে যেমন কলকারখানায় অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনেও বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে। কলকারখানায় উৎপাদনের জন্যে বিদ্যুতের কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ সাধারণত, ফার্নেস ওয়েল, কয়লা, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, পরমাণু প্রকল্প, বায়ুচালিত বাস্প ও সর্বশেষ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উপাদন করা যাচ্ছে। সৌর বিদ্যুতে কোনো প্রকার খরচ নেই। সূর্যের তাপের সাহায্যে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের জন্য সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক
প্রাইম এ্যাসেট গ্রুপ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।