Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে জেঁকে বসেছে শীত

ফুটপাতে চলছে জমজমাট শীতবস্ত্রের বেচা-কেনা

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সায়ীদ আবদুল মালিক : রাজধানীসহ সারাদেশে বইছে শীতের হিমেল হাওয়া। এতে রাজধানীতে জেঁকে বসেছে তিব্র শীত। হিমেল হাওয়ায় সৃষ্ট তিব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। এই শীতে বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠাÐা আর কুয়াশায় বেড়েছে ঠাÐাজনিত রোগের প্রকোপ।
অন্যদিকে শীতকে উপলক্ষ করে রাজধানীর ফুটপাতে চলছে শীতবস্ত্রের জমজমাট বেচা-কেনা। মধ্যবৃত্ত, নিম্ন মধ্যবৃত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষসহ প্রায় সকল শ্রেণীপেশার মানুষ এ বাজারগুলো থেকে শীতের কাপড় কেনাকাটা করছে।
আবহাওয়াবিদ নিঝুম রোকেয়া আহমেদ জানিয়েছেন, ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। তবে দেশের সব জায়গায় একই অবস্থা নয়। কোথাও কোথাও ঘন, কোথাও মাঝারি থেকে ঘন। এটি দেশের অনেক স্থানে দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ সময় রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশাজনিত কারণে সতর্কতা সঙ্কেতও থাকবে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে কম ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়া কুমারখালীতে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি, সাতক্ষীরা ও খুলনায় ১০ ডিগ্রি, যশোরে ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি, রংপুরে ৯ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ১০ ডিগ্রি, রাজারহাটে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি, বাদলগাছীতে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, বগুড়ায় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ঈশ্বরদীতে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাতাস থাকায় শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে একটি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ২-৩টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে প্রতিরাতে শুয়ে রাত কাটান হাজারো মানুষ। গত দু’দিনে শহরের তাপমাত্রা যখন নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রিতে তখনো তাদের ওই একই ব্যবস্থা। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও বেশিরভাগ মানুষই বসে আছেন শূন্য হাতে। রাত যেনো তাদের জন্য মরণফাঁদ। নিম্ন আয়ের মানুষরা বলছে, শীত উপভোগের সুযোগ নেই। তাদের মুখোমুখি হতে হয় দুর্ভোগের।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, শীতের আগমনকে কেন্দ্র করে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। শীতের প্রকোপে নিম্ন আয়ের মানুষের পোহাতে হচ্ছে দুর্বিষহ পরিস্থিতি। ঠাÐার কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে, আগুন জ্বালিয়ে কিছুটা উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে মরিয়া এই মানুষগুলো। কিন্তু পেটের দায়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর চলবে না। কাওরানবাজার এলাকায় দিনমজুর ওয়াহিদ মিয়া জানান, ঠাÐায় হাত-পা চলে না। কাম করুম ক্যামনে? তয় কাম না করলে খামু ক্যামনে?
মানিকনগর পুকুর পাড়ে কাথা হয় রিকশা চালক আমজাদের সাথে, আমজাদ বলেন, দিনের বেলা শীতের তিব্রতা একটু কম থাকায় প্যাসেঞ্জার পেতে সমস্যা হয় না। তবে ঝামেলা হয় সন্ধ্যা নামার পরে। কারণ সন্ধ্যায় এক দিকে ঠাÐা বাতাস অন্যদিকে তিব্র শীত। যে কারণে ঠাÐা বাতাসের মধ্যে অনেকেই রিকশায় উঠতে চায় না।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজধানীতে শীত অনুভূত হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী দু’একদিন কুয়াশার চাদরে রাজধানীসহ সারাদেশ আবৃত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা উঠানামা করতে পারে।
রাজধানীতে হঠাৎ করে শীত জেঁকে বসায় স্কুলগামী শিশুরাও পড়েছে বিপাকে। কুয়াশা আর শীতের প্রকোপে তারা কাবু হয়ে উঠেছে। শীতে শহরের ভ্রাম্যমাণ দোকানিরাও অলস সময় পার করছেন। ক্রেতাশূন্য শহরে রাস্তায় আগুন জালিয়ে শীত মোকাবেলার চেষ্টাই যেনো একমাত্র কাজ। কুয়াশার কারণে অফিসগামী মানুষগুলোও পড়ছে বিপাকে। কুয়াশার কারণে রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা কমেছে। রিকশার উপস্থিতিও কম।
এদিকে শীতের তিব্রতা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর ফুটপাতে শীতবস্ত্রের বেচা-কেনা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। মধ্যবৃত্ত, নিম্ন মধ্যবৃত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষসহ প্রায় সকল শ্রেণীপেশার মানুষ এ বাজারগুলো থেকে শীতের কাপড় কেনাকাটা করছে।
গতকাল শুক্রবার মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, জিপিও, গুলিস্তান, মালিবাগ, মৌচাক, এলিফেন্ট রোড, নিউমার্কেট, ফারমগেইট, মহাখালি, গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত ও হলিডে মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে শীতবস্ত্র বেচা-কেনার তীব্র ভিড়। মানুষকে ঈদ বাজারের মত আগ্রহ নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে দেখা গেছে। ভিড়ের কারণে দরাদরি ও যাচাইবাচাই করে কেনার সুযোগ পাচ্ছে না ক্রেতারা। শুধু কাপড়টি পছন্দ হলেই একদাম একরেটে কিনে অন্যকে কেনার সুযোগ করে দিতে হচ্ছে।
মতিঝিল ফুটপাতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রহমান মিয়াজি বলেন, আমরা বছরে দুই ঈদ ছাড়া এই শীতে একটু বাড়তি ব্যবসা কারার সুযোগ পেয়ে থাকি। তবে সব বছর আবার এ সুযোগ পাওয়া যায় না বলে তিনি জানান। রহমান মিয়াজি বলেন, গত বছরও শীতবস্ত্রের মার্কেট জমজমাট ছিল। তবে গত প্রায় এক বছর ধরে সিটি কর্পোরেনের ধারাবাহিক উচ্ছেদের কারণে আমাদের ব্যবসার বারটা বেজে গেছে। তিনি বলেন, গত কয়েক মাস ধরে বসে বসে পুঁজি ভেঙ্গে খাচ্ছি। এবছর আমরা যারা ব্যাবসার জন্য পুঁজি খাটিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি তাদের অনেক বেশি লস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যদি কটাদিন সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে শীতের কাপড় বেচা-কেনা লস কিছুটা কাটিয়ে উঠা যাবে বলে তিনি জানান।
দনিয়ার বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, শীতের তীব্রতা আনেক বেড়ে গেছে তাই পুরানো শীতের কাপড় দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না। তিনি তার ছেলে অনিক ও মেয়ে সৃষ্টিকে নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন, গুলিস্তান ফুটপাতে। তিনি বলেন, যেভাবে শীতের কাপড় বেচা-কেনা হচ্ছে এভাবে ঈদ বাজারেও বেচা-কেনা হয় না। মানুষের ভিড়ের কারণে দোকানেই ঢোকা যাচ্ছে না। দরদাম করে কেনাতো পরের কথা।
সরেজমিন মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শীত বস্ত্রের মধ্যে বেশি বেচা-বিক্রি হচ্ছে- ছোট বাচ্চা ও বয়স্কদের কাপড়। মাথার টুপি, পায়ের মোজা, হাত মোজা, মাপলা, স্যুায়েটার, জাম্পার, পুলহাতা গেঞ্জির দোকানেই বেশি ভিড় দেখা গেছে। বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট ও ফার্মগেইটের শীত বস্ত্রের মার্কেটের কম্বল দোকানগুলোতেও তীব্র ভিড় দেখা গেছে।
শীত বস্ত্রের দোকানে ক্রেতার ভিড় বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ বুঝে বিক্রেতারাও অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে ক্রিতারা। মোহাম্মদপুর ঢাকা হাউজিং থেকে ফারমগেইট ফুটপাতে শীতবস্ত্র কিনতে আসা মালেকা বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, বচ্চাদের শীতের কাপড় আগে যেটা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় কেনা যেত এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে। তিনি বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি আইটেমেই ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
ছুটির দিন হওয়ায় নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাওসিয়া মার্কেটসহ আশপাশের পোশাকের দোকানে অনেকেই কিনছেন শীতের পোশাক। বিক্রেতারা বসেছেন গরম কাপড়ের পসরা সাজিয়ে। শীতের পোশাক কিনছেন এলিফেন্ট রোডের বাসিন্দা শাহানাজ পারভীন। তিনি পরিবারের জন্য শীতের চাদর ও সোয়েটার কিনেছেন।
প্রাইভেটকার থামিয়ে নিউ মার্কেটের ২ নাম্বার গেটের মুখ থেকে সোয়েটার কিনছেন রাহেলা বেগম। তিনি পরখ করে দেখে নিচ্ছেন কাপড় মোটা না চিকন। দোকানিকে বলতে শোনা গেল একটু মোটা সোয়েটার দেন। দোকানিও সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সোয়েটার বের করে দিলেন। নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, আমরা কমদাম, বেশিদাম সব ধরনের পোশাকই দোকানে তুলি। যে, যেটা পছন্দ করে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ