Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা সরকারের

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 

স্টাফ রিপোর্টার : নতুন বছরকে সামনে রেখে এবার চার হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ বছর গ্রীষ্মে লোডশেডিং বেশি হওয়ায় আগামী বছর বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা প্রতিবেদনে বলা হয়।
এদিকে প্রতিবছর লোকসানের দোহাই দিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েই চলেছে সরকার। বিইআরসির মতো প্রতিষ্ঠান প্রহসনের শুনানি করছে আর দায় চাপাচ্ছে জনগণের ঘাড়ে। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেজন্য সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ আনা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় আগামী বছর প্রায় চারগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর উৎপাদনে এসেছে সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে এক হাজার ১৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে সরকার বছরভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা করেছিল, সেখানে নতুন করে দুই হাজার ২৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা বলা হয়। এর মধ্যে সরকারিভাবে এক হাজার ৪৪৯ এবং বেসরকারিভাবে ৮০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছিল। তবে গত গ্রীষ্মের লোডশেডিং পরিস্থিতি দেখে উৎপাদন পরিকল্পনায় পরিবর্তন করা হয়। বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য ২৪টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে গতবছর চুক্তি করা হয়। এর মধ্যে এ বছর উৎপাদনে আসবে ১৩টি কেন্দ্র। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সময় বলেছিল পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক টাকা ৯ পয়সা লোকসান করছে। সরকার এই লোকসানের অর্থ ভর্তুকি হিসেবে পিডিবিকে দেবে। এরপর তরল জ্বালানিনির্ভর কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়বে। কোনো কারণে সরকার ভর্তুকি দিতে না চাইলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিকল্প থাকবে না।
বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে তার মধ্যে ৯টি সরকারি ব্যবস্থাপনার। এতে মোট উৎপাদন হবে এক হাজার ৬৫৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্র গ্যাসভিত্তিক, তিনটি দ্বৈত জ্বালানি (ডিজেল অথবা গ্যাস দিয়ে চালানো হবে), একটি কয়লা, একটি সৌর এবং একটি ফার্নেস অয়েল দিয়ে পরিচালিত হবে। বাকি ১৫টি কেন্দ্র স্থাপন করবে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। যার ক্ষমতা এক হাজার ৬৫৭ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্রগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে সাতটি তেলচালিত, একটি গ্যাস, চারটি সৌর, তিনটি দ্বৈত জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র (গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় এসব কেন্দ্র মূলত তেল দিয়ে চালানো হবে)। এই বাইরে দরপত্র প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে বেসরকারি খাতের আরও ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এগুলোর সবই হবে তেলচালিত করা হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার জন্য ভেড়ামারায় ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। সাবস্টেশনটির নির্মাণকাজ শেষ হলেই এ বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করা সম্ভব হবে। ভারতের বেসরকারি খাত থেকে এ বিদ্যুৎ কিনে আনা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উৎপাদনে আসার পরিকল্পনায় থাকা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ছয়টি আসবে জানুয়ারি মাসে। বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৩ শতাংশ। পিডিবির অধীনে চীনের কোম্পানি সিএমসি কেন্দ্রটি স্থাপন করছে। গ্যাসভিত্তিক এ কেন্দ্রটি স্থাপনে ২০১৩ সালের ২৯ মে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সরকারে সঙ্গে। সিরাজগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে কাজ করছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক (গ্যাস অথবা ডিজেল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির কাজ ৯৩ ভাগ শেষ হয়েছে। ইজিসিবির অধীনে কেন্দ্রটি স্থাপনে কাজ করছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি। গ্যাসভিত্তিক এ কেন্দ্রটি স্থাপনে ২০১২ সালের ২৮ মে চুক্তি হয়। এর বাইরে ভেড়ামারা ৩৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির অধীনে মারুবিনি করপোরেশন স্থাপন করছে। বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের কমলাঘাট ৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিও পরীক্ষামূলকভাব চালু হয়েছে। কেন্দ্রটি স্থাপন করেছে বেনকো এনার্জি। ফার্নেস অয়েলভিত্তিক এ কেন্দ্র স্থাপনে ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর চুক্তি সই হয়। কুশিয়ারা ১৬৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ। গ্যাসভিত্তিক এ কেন্দ্র স্থাপন করবে কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বছরে চার হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা। এরপর ২০১৯ সালে চার হাজার ৮৩৩, ২০২০ সালে চার হাজার ৭২, ২০২১ সালে তিন হাজার ৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। চাহিদা বৃদ্ধিরও একটি তালিকা করা হয়েছে। সে হিসাবে চলতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৩ হাজার ২৬০ মেগাওয়াট, ২০১৯ সালে ১৫ হাজার ৪১, ২০২০ সালে ১৭ হাজার ১৫ মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালে ১৯ হাজার ৩৪ মেগাওয়াট। পিডিবির হিসেবে, বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াটের মতো। তবে শীতকালে তা কমে দাঁড়ায় সাত হাজার ৭৫০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াটের মধ্যে।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ইনকিলাবকে বলেন, দেশের উন্নয়নে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বছরে চার হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা। এই চাহিদা পূরণে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারাবাহিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি বছর লোকসানের দোহাই দিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েই চলেছে সরকার। বিইআরসির মতো প্রতিষ্ঠান প্রহসনের শুনানি করছে আর দায় চাপাচ্ছে জনগণের ঘাড়ে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেজন্য সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ আনা প্রয়োজন। তড়িঘড়ি করে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এরপর সরকার আবার দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু করবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ