ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক আলেম মূল্যবান ভূমিকা রেখেছেন। কেউ কেউ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। অনেকে পালিয়ে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে যেতে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ ২৪৩ দিন আত্মগোপনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তার পরামর্শে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানী হানাদাররা তার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। হাতিয়ার মাওলানা মোস্তাফিজ, চট্টগ্রামের মাওলানা ছৈয়দ, ছাগল নাইয়ার মাওলানা মাকসুদ প্রমুখের নাম এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়। ২৬ মার্চ পাক হানাদারদের গুলিতে প্রাণ হারান ঢাকার হাতিরপুল মসজিদের ইমাম। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ইমাম মাওলানা ইরতাজ আলি কাসিমপুরী পরাধীন দেশে জুমআর নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জানান। পাকিস্তানী হানাদাররা তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এই ইরতাজ আলি কাসিমপুরীর কথা হুমায়ূন আহমেদ তার বিখ্যাত উপন্যাস জোছনা ও জননীর গল্পে উল্লেখ করেছেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধকে ইসলাম সমর্থন দেয়। দাসত্ব গোলামিকে নয়। সে কারণে আলেমদের অনেকেই পাকিস্তানী শাসকদের জুলুম, নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন। তাদের এই অবস্থান সেটা কোরআন হাদীস সমর্থিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যে মুক্ত করে তাদের, তাদের গুরুভার হতে ও শৃঙ্খলা হতে যা তাদের ওপর ছিল, সুতরাং যারা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাকে সম্মান করে এবং যে নূর তার সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। (সুরা আল আরাফ, আয়াত-১৫৭)। তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের ন্যায়পরায়ণ শাসকের আদেশ মেনে চল। (সূরা নিসা, আয়াত-৫৯)। দেশপ্রেম তথা দেশকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ। ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহর পথে একদিন ও এক রাত সীমান্ত পাহারা দেয়া এক মাস পর্র্যন্ত সিয়াম পালন ও এক মাসব্যাপী রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। যদি এই অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল, তার মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে। কবর হাশরের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে (মুসলিম শরীফ- ১৯৪৩)।
নীরবে নিভৃতে বহু আলেম মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। যশোর রেল স্টেশন মাদরাসার মুহতামীম দেওবন্দ ফারেগ মাওলানা আবুল হাসান যশোরীর কথা বলা যায়। তিনি এবং তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছেন। তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল তার মাদরাসায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা করে। শহীদ হন ২১ জন। যাদের মধ্যে একজন সম্মানিত আলেম হাবীবুর রহমান, ৫ জন ছাত্র এবং বাকীরা ছিল ওখানে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। মাদরাসা প্রাঙ্গনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর রয়েছে। ওই হামলায় যাশোরী গুলিবিদ্ধ হয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরে ১৯৯৩ সালে যশোরী ইন্তেকাল করেন। কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের মা উপন্যাসে আজাদের মা সাফিয়া বেগম তার ছেলে আজাদকে পুরান ঢাকার জুরাইনের পীরের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণ করেন। জুরাইনের পীরের আসল নাম ছিল মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান চিশতী। এই জুরাইনের পীরের বহু মুরীদ মুক্তিযোদ্ধা ছিল। জুরাইনের পীর সাহেব নিজে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিলেন। (তথ্য সূত্র: আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে-লেখক সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলী)। মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পটিয়া মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন পটিয়া মাদরাসার মুহতামীম আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ আলাইহি। এ ঘটনা জানতে পেরে পাক বাহিনী নির্বিচারে বোমা হামলা করে। শহীদ হন আল্লামা দানেশ রহমাতুল্লাহ আলাইহিসহ আরো অনেকে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মদের লেখা ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ বইটির ৫৪,৫৫,১০২ পৃষ্ঠায় এই ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।
২নং সেক্টরের যোদ্ধা মেজর কামরুল হাসানের লেখা ‘জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা’ বইটিতে কুমিল্লার মুরাদনগরের কাশিমপুরের পীর এবং বরিশালের মরহুম চরমোনাইয়ের পীর এসহাক রহমাতুল্লাহর নাম উল্লেখ করেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। হাকীমুল উন্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর সর্বশেষ জীবিত খলিফা হাফেজি হুজুর (র.) মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকে তার মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটা হচ্ছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা হচ্ছে জালেম আর আমরা বাঙ্গালীরা হচ্ছি মজলুম। এ রকম বহু আলেম ওলামা পীর মাশায়েখের কথা উল্লেখ করা যায়। যারা কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। এই সত্য অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অংশগ্রহণ নিয়ে তেমন সাহিত্যকর্ম হয়নি। প্রবন্ধ, নিবন্ধ, বই প্রকাশ হয়েছে কম। যেটা হচ্ছে তা হল আলেমদের নেগেটিভভাবে তুলে ধরা। বাংলাদেশের প্রকৃত আলেমরা ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে সব সময়। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান অনেটাই অন্তরালে আছে। তাই মুক্তি সংগ্রামে আলেমদের অবস্থান, তাদের বীরত্ব নিয়ে সহিত্যকর্ম হওয়া দরকার।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও সম্পাদক, মাহে রমজানের ডাক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।