Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংবিধান রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেটি মানছে না : সুলতানা কামাল

সুশাসন ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সংবাদ নেই

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 স্টাফ রিপোর্টার : রাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা রক্ষা করছে না বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক তত্ত¡বধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটউশন মিলনায়তনে গতকাল ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

সুলতামা কামাল বলেন, যারা সংবিধান রক্ষার দায়িত্বে আছে, তারা সংবিধানের কোন ধারাটা মানছে? কোন অংশটা মানে? সেটা নিয়েও নিজেদের মধ্যে আমরা অনেক কনফিউশন তৈরি করেছি, অনেক অস্বচ্ছতা তৈরি করেছি। সেটা বন্ধ করার একটা ব্যাপার রয়েছে। ‘সংবিধানে এখনো আমরা যে কথাগুলো রেখেছি যে, রাষ্ট্রের চোখে সকল নাগরিক সমান অধিকারের দাবিদার থাকবেন। সেই জায়গা যদি আমরা গোছাতে না পারি তাহলে আজকের সা¤প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, অন্যের উপর অত্যাচার, ভূমিগ্রাস করার যে প্রক্রিয়া চলছে, অনবরত আমরা এই দেশটাকে একরৈখিক ও অত্যন্ত সা¤প্রদায়িক দেশ হিসেবে পরিণত হতে দেখব।’ দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি করলেও ‘সুশাসন ও মানবাধিকারের’ দিক থেকে ইতিবাচক সংবাদ দিতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য দিয়ে গত এক বছর দেশের মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অবনতির কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, এক বছরে নারী নিযাতনের ঘটনার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় ঘটেছে প্রায় হাজার খানেক। ধারাবাহিকভাবে সা¤প্রদায়িক যে হাঙ্গামা হয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪৫টি বাড়িঘর ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ১৭৪টি মন্দির-মঠ ধ্বংস করা হয়েছে। ৫৭৪টি শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে, এটা যে কোনো বিবেকবান ব্যক্তিকে কাপিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
গুম-খুন প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, আমরা দেখছি মানুষ প্রতিদিন গুম কিংবা বিচার বহির্ভিূত আচরণের শঙ্কার মধ্যে বাস করছে। এই পর্যন্ত ৫৪টি গুমের ঘটনা ঘটেছে, তাদের কেউ কেউ ফিরে এসেছেন, কেউ কেউ ফিরে আসেননি। যারা ফিরে এসেছেন তারা কিভাবে গুম হলেন, কিভারে ফিরে এলেন তার তা বলার সাহস পাচ্ছেন না, এমনি আতঙ্কের মধ্যে বাস করতে হচ্ছে। দেশ থেকে সা¤প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, বৈষম্য দূর করতে হলে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ধারাবাহিক আন্দোলন করার কথা বলেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সম্মেলন উদ্বোধন করে এই এমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, আজকের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধানের যে চার মূলনীতি সেটার অনেকখানি বিকার আমরা দেখছি। গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সা¤প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা দেখছি। আদিবাসীদের প্রতি আচরণে যে অন্যায্যতা সেটা দেখছি। দেশে বৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা দেখছি। আজকে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি আমাদের চলতে হয়, তাহলে ধারাবাহিকভাবে আবার আন্দোলন পরিচালনা করা দরকার।
তিনি বলেন, জনগণের কাছে আমাদের মূলবোধগুলো নিয়ে যেতে হবে এবং তাদেরকে সেই মূল্যেবোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যাতে এই যে বিভীষিকাময় মধ্যে রয়েছে, সা¤প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এই কাজটি করতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় তৃণমূলে যেতে পারি, তাদেরকে রাজনৈতিক ও সামাজিক মঞ্চে উদ্বুদ্ধ করতে পারি তাহলে আজকের বাংলাদেশের যে অবস্থা তা থেকে উত্তোরণ করা সম্ভব হবে। সকল বৈষম্য-দারিদ্র দূর করার জন্য চেষ্টা করার কথা বলেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। টেকসই উন্নয়নের পথে যেন সরকার অগ্রসর হয় সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে। আমাদের শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে সা¤প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে আমরা সময়ে সময়ে যা কিছু অর্জন করি সেটা আমরা ধরে রাখতে পারব না।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য্য, সিপিবির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আহসান খান, জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ শিরীন আক্তার, নাট্য সংগঠক রামেন্দ্র মজুমদার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল্লাহ। সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সম্মেলন উদযাপন কমিটির কো চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ