Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্মস্থলে থাকতে না চাইলে চাকরি ছেড়ে দেন : চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকারি চিকিৎসকদের কর্মস্থলে থেকে যথাযথভাবে মানুষকে সেবা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অন্যথায় তারা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা যখন উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেই, তখন অনেকেই আছেন যারা কর্মস্থলে থাকতে চান না। বরং তারা যেকোনো উপায়েই ঢাকায় থাকেন। যদি চিকিৎসকদের ঢাকাতেই থাকার ইচ্ছা হয়, তাহলে তাদের সরকারি চাকরি করার প্রয়োজন নেই। রাজধানীতে বসে প্রাইভেট রোগী দেখে তারা অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন। তাই, তাদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়াই ভালো। আমরা তাদের স্থলে নতুন নিয়োগ দিব।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাতটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত ছিলেন।
মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরিতে মেডিক্যাল কলেজগুলোর শিক্ষার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার দেশে বিপুলসংখ্যক মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই পাঁচটি সেনানিবাসে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছি এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সেনানিবাসেও এই ধরনের মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, এসব মেডিক্যাল কলেজে কি ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদারকি করতে হবে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ‘রোগী মারার ডাক্তার’ নাকি ‘রোগী বাঁচানোর ডাক্তার’ তৈরি হচ্ছে, তা তাদের দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরো দুটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবার সর্বোত্তম সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের বিখ্যাত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস ও লেকচার অনুসরণ করার জন্য মেডিক্যাল শিক্ষাথীদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সুবিধা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে। দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার্থী এবং ডাক্তারগণ অ্যাকাডেমিক মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেন সেজন্য শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশে বিদেশী ডাক্তারদের সুযোগ উন্মুক্ত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যদি বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বাংলাদেশে আসেন তাহলে দেশের লোকদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে না। এখানেই তারা বিদেশী চিকিৎসা সেবা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি ডাক্তারদের আবাসন সমস্যার ব্যাপারে সরকার সংবেদনশীল। আমি ইতোমধ্যেই চিকিৎসকসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যার সমাধানে উপজেলাগুলোতে বহুতল ভবন নির্মাণে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি।
অতীতে বিএনপি-জামায়াত সরকারের মতো পুনরায় কেউ যাতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করতে না পারে সেজন্য ট্রাস্টফান্ড গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত আত্মঘাতী পদক্ষেপ নেয় এবং তারা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে পুনরায় তারা এগুলো বন্ধ করে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী দ্বীপ ও হাওর এলাকায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালু করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এবং এজন্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট তৈরির সময় একটি তহবিল তৈরির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। তিনি উল্লেখ করেন, অন্যান্য বিশেষায়িত ক্ষেত্রের তুলনায় চাহিদার চেয়ে গ্যাস্টোএন্টেরোলজিস্টদের সংখ্যা কম। এই ক্ষেত্রে দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা সামান্য।
খালি পেটে শিশুদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর ঝুঁকির মতো বিষয় এবং ওষুধ সেবনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে ডাক্তারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। ডাক্তারগণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন উল্লেখ করে তিনি ময়লা-আবর্জনা এখানে সেখানে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলার জন্য সকলের প্রতি আহŸান জানান।
স্বাস্থ্যখাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া।
পরে প্রধানমন্ত্রী বান্দরবান সদর হাসপাতাল, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর, খুলনার ফুলতলা, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সাতটি অ্যাম্বুলেন্সের ডামি চাবি হস্তান্তর করেন।
স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের রাজস্ব বাজেট থেকে জাপানের টয়োটা ব্রান্ডের ৬০টি অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো চলতি মাস এবং আগামী মাসে আরো ৩৮টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করা হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
পটুয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে শপথ পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী
পটুয়াখালী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ শপথ পাঠ করানো হয়।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, পটুয়াখালী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের কাগজের সাংবাদিক লাভলুর চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর অনুদান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৈনিক ভোরের কাগজের চিফ রিপোর্টার সৈয়দ আকতারুজ্জামান সিদ্দিকী লাভলুর চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এই অনুদানের চেক প্রদান করেন।
দীর্ঘদিন ধরে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত সাংবাদিক লাভলু স¤প্রতি ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন। তার ঘনিষ্ট একজন সাংবাদিক জানান, লাভলু চিকিৎসা নিতে আবারও শিগগিরি ভারতে যাবেন।



 

Show all comments
  • আবু নোমান ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৫:৫৭ এএম says : 0
    এই সুন্দর ও দিক নির্দেশনামুলক বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • রবিন ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৫:৫৮ এএম says : 0
    আমার পরামর্শ এই যে সকল প্রমোশনের জন্য ডাক্তেদেরকে ৩ বছর করে গ্রামে থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Masum ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:০২ পিএম says : 0
    কারেট
    Total Reply(0) Reply
  • Helal Masud ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৪৯ পিএম says : 0
    অনেক অনেক অনেক ভাল কথা সাহসী কথা আপনে আরো কঠোর হন মানণীয় প্রধানমন্ত্রী এদের আপনে ছাড়া কেউ সোজা করতে পারবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Babla Barua ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫০ পিএম says : 0
    শুধ‌ু ডাক্তার ব‌লে কথা না সমস্ত সরকারী চাকুরীজী‌বি‌দের সবজায়গায় চাকুরী করার মনমান‌সিকতা থাক‌তে হ‌বে। ডি‌সি এস‌পি থে‌কে শুরু ক‌রে সবাই সরকারী বাং‌লো ব্যবহার ক‌রে আবার সবার বাসা ঢাকায়। এগ‌ু‌লো বন্ধ হ‌ওয়া উচিত। সরকারী কর্মকর্তা ওকর্মচারীরা জেলা ,উপজেলা স্কুল,ক‌লেজগু‌লো‌তে ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের লেখাপড়া করা‌লে শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠানগু‌লো‌তে তদার‌কি বৃ‌দ্ধি পা‌বে। মান বৃ‌দ্ধি পা‌বে। ঢাকার ওপর চাপ কম‌বে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Niaz Morshed ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫১ পিএম says : 0
    Good, This is absolutely right, I'm just salute and honour to you
    Total Reply(0) Reply
  • Salim Ullah Quazi ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫১ পিএম says : 0
    Right. But it should be implemented. Without decentralization of Dhaka, this kind of problem will never end.
    Total Reply(0) Reply
  • Protik Hasan ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫২ পিএম says : 0
    Absolutely right,,,,Love you so much Mother....
    Total Reply(0) Reply
  • Md Zainal Abedin ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫২ পিএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ।আপনার নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে গ্রামের মানুষ আর ও ভালো চিকিৎসা পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Alim Gazi ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৩ পিএম says : 0
    সবাইকে পরিবার নিয়ে উপজেলায় থাকতে হবে। নিজ সন্তানদেরকে ঐ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে হবে। সরকার যদি শুধু এই শর্তটা দিয়ে একটু মনিটর করে, নিশ্চিত হবে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ