Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মীমাংসার নামে কিশোরীকে জুতাপেটার অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : ‘খারাপ’ চরিত্র”আখ্যায়িত করে মাদারীপুরে শহরের মধ্য খাগদি এলাকায় সালিশ মীমাংসার নামে আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলের নির্দেশে এক কিশোরীকে জুতা পেটা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার বিকালে। আর জুতাপেটায় সরাসরি অংশ নেয় মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশন নামের একটি মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকারী সংগঠনের তৃণমূল নেত্রী। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে শহরের মধ্য খাগদি এলাকার এক কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় একই এলাকার কুদ্দুস শরীফের ছেলে হাসান শরীফ। এর পরে মেয়েটিকে তামান্না নামে এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দেয় হাসান। বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবার জানতে পেরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগছড়ার করম বাজার থেকে গত শুক্রবার উদ্ধার করে। পরে কিশোরীর পরিবার স্থানীয়দের জানালে মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে সালিশ মীমাংসায় বসে। মঙ্গলবার বিকেলে ওই শালিসে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আইয়ুব খান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাম খান, সাবেক কাউন্সিলর সামসুল হক খান, স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন লিগালএইড এসোসিয়েশনের তৃণমূল কর্মী আকলিমা বেগম, স্থানীয় প্রভাবশালী সেলিম মীরা, খবির খান প্রমুখ। শালিস আইয়ুব খান, মুজাম খান, সামসুল হক খানের সিদ্ধান্তে নির্দেশে ওই কিশোরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রকাশ্যে দেয়া হয় ১০টি জুটাপেটা। জুটাপেটায় অংশ নেয় মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশনের অনুপ্রেরণায় গঠিত ‘কমিউনিটি বেইজ অর্গাানাইজেশন (সিবিও) কমিটির সদস্য আকলিমা বেগম।সালিশদার আইয়ুব খান, মুজাম খান, সামসুল হক খানের সিদ্ধান্তে ওই কিশোরীকে দোষী দাবী করে ১০ বার জুতাপেটা করার নির্দেশ দেয়। একই সাথে হাসান শরীফকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১০ জুতাটার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ পেয়ে সালিসে উপস্থিত আকলিমা বেগম নামে এক নারী কিশোরীকে জুতাপেটা করে। ঘটনার পর থেকে কিশোরীর পরিবার রয়েছে নিরাপত্তাহীনতায়। লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেনা। এই ঘটনার সাথে একটি মানবাধিকার সংগঠনের সদস্য সরাসরি যুক্ত হওয়ায় তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
লাঞ্ছিতা ওই কিশোরী বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করি। আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে ওরা। এর বিচার তো পাইনি উল্টো সালিসের নামে আমাকে জুতাপেটা করেছে। আমি এর বিচার চাই। সালিশদার ও স্থানীয় আওয়ামীগ নেতা মুজাম খান বলেন, মেয়ের চরিত্র খারাপ। সালিসে দোষী প্রমাণ হওয়ায় আমরা জুতাপেটা করেছি। এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিল আইয়ুব খানের সাথে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিফ করেননি। তবে স্থানীয় সালিশদার আকলিমা বেগম বলেন, সালিসে সিদ্ধান্ত হয় জুতা পেটা করার। সালিশরা জুতা পেটার নির্দেশ দিলে আমি নির্দেশ পালন করেছি। আমি জোরে জোরে না পিটিয়ে আস্তে পিটিয়েছি। আমি কাউন্সিলর ও সালিশদারদের নির্দেশ পালন করেছি।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ বলেন, এ ধরনের ঘটনায় সালিশযোগ্য নয়। এরপর সালিসে জুটা পেতার অভিযোগ উঠেছে এক স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক হলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। যদি ওই কিশোরীর পরিবার থেকে অভিযোগ দেয়া হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে অবহিত করেছি। দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। এধরনের ঘটনা সালিশ মীমাংসা যোগ্য নয়। সালিশ মীমাংসার নামে যারা কিশোরীকে জুতা পেতা করেছে তারা গর্হিত অন্যায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইসগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ