Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নির্ধারিত হবে আসামের লাখ লাখ মুসলমানের ভাগ্য

বিদেশী না ভারতের নাগরিক?

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 টাইমস অব ইন্ডিয়া

৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাত পেরিয়ে বিশ^ যখন নতুন বছরকে আলিঙ্গন করবে তখন নিয়তি রিকশাওয়ালা শামসুল হক, টাটা সমাজ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষক আবুল কালাম আজাদের মত আসামের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মুসলিমদের লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে যে তারা আসামের ভারতীয় নাগরিক নাকি বিদেশী।
এ সময় প্রকাশিত হবে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি)-এর প্রথম খসড়া। এটি হচ্ছে ভারতের রেজিস্টার জেনারেলের সাত বছরব্যাপী চেষ্টার ফসল যাতে রাজ্যের ভারতীয় নাগরিকদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তত্ত¡াবধানে এতে তাদের নামই রয়েছে যারা পুরুষানুক্রমে রাজ্যের অধিবাসী। ১৯৫১ সালের পর এটাই প্রথম খসড়া। ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তিতে বলা হয়েছে যে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত যারা আসামে এসেছে তারা ভারতীয় বলে গণ্য হবে। এনআরসির খসড়া কয়েক দশক ধরে চলা বিরোধপূর্ণ বিষয় আসামের অবৈধ অভিবাসী সমস্যার নিরসন করবে আশা করা হচ্ছে।
মুসলিমরা আসামের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। তাদের ৯০ শতাংশই বাংলাভাষী অভিবাসী। এনআরসির এ খসড়া তাদেরকে বাংলাদেশী বা ‘মিয়া’ বলে আখ্যায়িত হওয়া থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে।
আজাদ ভারতে জাতিগোষ্ঠিগত বিরোধ বিষয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, আসামের বাকি অংশ কিভাবে আমাদের দেখবে, এনআরসির তালিকা তা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। মুসলিম নারীদের জন্য পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট-এর সিদ্ধান্ত বহু পরিবারের জন্য সহায়ক হয়েছে। আজাদ বলেন, আমাদের মেয়েরা স্কুলে যায় না, হাসপাতালে তারা জন্মগ্রহণ করে না, অল্প বয়সেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। তাই তাদের বংশীয় যোগসূত্র প্রমাণে না আছে স্কুল সার্টিফিকেট না আছে জন্ম সনদ।
তবে শামসুলের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই হতাশাজনক। তিনি সেই ৪৭ লাখ লোকের একজন যাদের কাগজপত্রের অভাবে পূর্ব পুরুষদের সাথে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তিনি বলেন, এনআরসি কর্মকর্তারা পুনঃ তদন্তের জন্য আমার বাসস্থান পরিদর্শন করেন। আমি আমার পিতার সাথে আমার সম্পর্ক প্রমাণের কোনো কাগজপত্র তাদের দেখাতে পারিনি।
এনআরসির আসাম রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা বলেন, কর্তৃপক্ষ সবাইকে সুষ্ঠু সুযোগ দিতে চায়। বহু লোক তাদের পিতামাতা বা পূর্বপুরুষের সাথে যোগসূত্র প্রমাণ করতে পারেনি। এর যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে । আমরা প্রতিটি কেসই শুনানি করব। ভুয়া লোকদের তালিকাভুক্ত করা হবে না।
যে সব বাংলাভাষী হিন্দু নিপীড়ন থেকে বাঁচতে আসামে এসেছে তাদের জন্য এনআরসি একটি বোনাস।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ১৯৭১ সালের পর আসামে আগত অনুপ্রবেশকারীদেরকে নাগরিকত্বের জন্য অযোগ্য ঘোসণা করতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে চাইছে।
১৯৭৯-৮৫ সময়কালে আসামে বিদেশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী নিখিল আসাম ছাত্র ইউনিয়ন (এএএসউ বা আসু) ’৭১-পূর্ব সময়ে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ব্যাপারে এনআরসিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে মানতে রাজি নয়। আসু সভাপতি দীপংক কুমার নাথ বলেন, আসাম চুক্তির অধীনে আমরা তাদেরকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মেনে নিয়েছি এবং এনআরসিও তাই করবে। কিন্তু কেন্দ্রের সাথে আমাদের একটি চুক্তি আছে যে এর বিনিময়ে আসামের আদি অধিবাসীদের আসাম শাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই যে ১৯৫১ সালে এনআরসিতে যে সব বাংলাদেশীর নাম আছে তারা এবং তাদের উত্তরপুরুষরাই শুধু আসামের আদিবাসী হিসেবে গণ্য হবে।

 



 

Show all comments
  • জুনাইদ আব্দুল্লাহ ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:২১ এএম says : 0
    শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করছি
    Total Reply(0) Reply
  • a,m,md,shihabuddin ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:০৫ এএম says : 0
    আরাকানের ভাগ্যাহত মাযলুম মুসলমানদের দূর্দশার শিকার যেন নাহয় আসামের মুসলমানরা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ