পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে নামে ঋতুর পরিবর্তন ঘটলেও জলবায়ুর তেমন অবস্থান্তর ঘটছে না। পৌষ মাসের প্রায় এক পক্ষকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু শীতের দেখা মিলছে না। বোঝা যাচ্ছে না শীতের আমেজ। অথচ বাংলাদেশের ঋতু অনুযায়ী পৌষ এবং মাঘ মাসই হচ্ছে শীতকাল। শীতের প্রকৃতি অনুযায়ী যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে বহু রকম প্রবচন। কোন মাসে কী ধরনের শীত অনুভূত হয় তার বর্ণনা রয়েছে এসব প্রবচনসমূহে। এসব প্রবচনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে শীতের আগমন ও বিদায়ের বার্তা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, “আশ্বিনে শীত ধাইর-পীড়া বায়, কার্তিকে শীত ঘরে যায়, আগনে শীত শরীর বায়, পৌষ মাইয়া জারে মইষের সিং লড়ে, মাঘ মাইয়া জারে বাঘে ডাক ছাড়ে, চৈইত মাইয়া জারে ব্রাহ্মণ কাথার জন্য গাই বিক্রি করে”। এটিই হচ্ছে শীত সম্পর্কিত বাংলাদেশে প্রচলিত এবং লাগসই একটি প্রবচন। এই প্রবচনসমূহের প্রেক্ষাপট হচ্ছে ভাদ্র মাস এলেই বাঙালী গৃহিনীরা শীতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ভাদ্র মাসের মধ্যভাগে শীতের কাপড় রোদে দিয়ে গরম করে রেখে দেয় গৃহিনীরা। ভাদ্র মাস বিদায়ের সাথে সাথেই বাংলাদেশের প্রকৃতিতে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। আশি^ন মাসের শুরুতেই বাড়ীর আনাচে কানাচে শীতের আগমন ঠাহর করে বাঙালীরা। দেখা দেয় শীতের আমেজ। আশ্বিনের সন্ধ্যা ও ভোরে আকাশে হালকা কুয়াশা দেখা দেয়। গাছ-গাছালী লতা গুল্মের পাতায় পাতায় দেখা যায় শিশির বিন্দু। তখন বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এক সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। দেশের বাজারগুলোতে শীতের নতুন শাক-সবজি উঠতে শুরু করে। এই অবস্থাকেই বলা হয়েছে আশি^নের শীত ধাইর-পীড়া বায়। কার্তিক মাস এলে প্রকৃতির রূপ লক্ষণীয়ভাবে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। কার্তিকের শেষ রাতে বাঙালীরা চাঁদর কিংবা পাতলা নকশী কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমায়। কোন কোন সময় ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকে। এই অবস্থাকেই বলা হয়েছে কার্তিকে শীত ঘরে যায়। অগ্রান মাসে শীত ঘরে ঢুকে গেলে বাঙালীরা গাঁয়ে শীতের হালকা জামাকাপড় পরে। রাতের বেলায় ‘গাইঞ্জা’ থেকে মোটা কাঁথা বা কম্বল নামিয়ে গায়ে দেয়। অগ্রানের শেষ দিক থেকে শীতের কাপড় যেমন চাদর, সুয়েটার, কোট ইত্যাদি কাপড় চোপড় পরতে শুরু করে বাঙালী নারী পুরুষ ও শিশুরা। এরই বর্ণনায় বলা হয়েছে অগ্রানে শীত শরীর বায়। পৌষ মাস এলে প্রকৃতি শীতার্ত হয়ে উঠে। গোটা প্রকৃতি কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বিকেল গড়াতেই সূর্য ডুবে যায়। শুরু হয় ব্যাপক কুয়াশাপাত। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পরতে থাকে। বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমতে শুরু করে। ১৫-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায় তাপমাত্রা। সকাল ১০ টা ১১ টা পর্যন্ত কুয়াশার প্রভাব থাকে প্রকৃতিতে। কোন কোন দিন ঘন কুয়াশা সূর্য ঢেকে দেয়। কুয়াশার কারণে নৌপথে চলাচল বন্ধ প্রায় হয়ে যায়। বন বাগানে ব্যাপক কুয়াশাপাতে পানির মতোই কুয়াশার পানিতে গাছ-গাছালীর পাতা ভিজে যায়। এই মাসে শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে গ্রামের মানুষেরা সকাল বিকেল ও রাতে অগ্রানী ধানের খড় নাড়া এবং পাতা লতা পুড়িয়ে আগুন পোহায়। গৃহিনীরা চুলার আগুনে গা গরম করে নেয়। এই অবস্থার বর্ণনায় বলা হয়েছে, “পৌষ মাইয়া জারে মইষের সিং লড়ে”। এরপর আসে মাঘ মাস। পৌষের শীতের ধারাবাহিকতায় মাঘ মাসের শীতের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। একদিকে বৃষ্টির মতো কুয়াশাপাত অন্যদিকে উত্তরের শৈত্য প্রবাহ বা হিমেল হাওয়া মানুষের শরীরকে ঝাকাতে শুরু করে। হাত, পা, মুখমন্ডল ঠান্ডা হয়ে যায়। মাঘ মাসে কুয়াশাপাতের কারণে ১০-১৫ দিন সূর্য দেখা যায় না। তাপমাত্রা নেমে আসে ১০-১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জীবনযাত্রা অনেক সময় থমকে যায়। রাস্তাঘাট যানবাহন ও জনশূণ্য হয়ে পরে। গায়ে গরম কাপড় জড়িয়েও মাঘের শীত থেকে মানুষ বাঁচতে পারেনা। পাখ-পাখালী উড়াউড়ি করে কম। বন্য জানোয়ারা শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য জাবর কেটে শরীর গরম রাখে। তখন জানোয়ারদের নাক চোখ দিয়ে পানি পরতে দেখা যায়। এই অবস্থার বর্ণনায় বলা হয়েছে, “মাঘ মাইয়া জারে বাঘে ডাক ছাড়ে”। এ অবস্থা চলতে থাকে মধ্য ফাগুন পর্যন্ত। ফাগুনের পরে শীত বিদায় নিতে শুরু করে। শেষ পক্ষকালে শীত হালকা হয়ে যায়। এই সময় লেপ, কাঁথা, কম্বল চলে যায় গ্রামের গাইঞ্জা এবং শহরের ষ্টোরে। কিন্তু হঠাৎ চৈত্রের রাতে শীত হানা দেয়। তখন গ্রামের মানুষকে নতুন করে গাইঞ্জা থেকে লেপ, কম্বল, কাঁথা নামাতে হয়। চৈত্র মাসের রাতের এই স্বল্প স্থায়ী শীতের জন্য গ্রামের ব্রাহ্মণরা নাকি পালের গাই বিক্রি করে কাঁথা কিনতে হয়। এই অস্থবাকেই প্রবচনে বলা হয়েছে চৈইত মাইয়া জারে ব্রাহ্মণ কাঁথার জন্য গাই বিক্রি করে। এই ছিল যুগ যুগে বাংলাদেশের শীতের প্রকৃতি। কবে কখন থেকে বাংলাদেশে শীতের এই প্রকৃতির উদ্ভব ঘটে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে ভূ-তাত্তিকদের ধারণা ৪ টি বরফ যুগের শেষ বরফ যুগ থেকে বাংলাদেশে শীতের এই প্রকৃতির উদ্ভব ঘটেছিল। শীতের এই প্রবচনগুলো রচিত হয়েছিল ১০ হাজার বছর পূর্বে কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর। কিন্তু বিগত দশকাধিক কাল ধরে শীতের তেমন কোন তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে না। প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর তেমন বৈচিত্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিশেষ করে চলতি বছর পৌষ মাসে শীতের অনুপস্থিতি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পৌষ মাসের ১৩ দিন কেটে গেছে। গায়ে শীত অনুভূত হচ্ছে না। গরম কাপড় পরলে শরীর ঘেমে যাচ্ছে। রাতে কম্বল বা কাঁথা গায়ে দিলে ঘুমের মধ্যেই মানুষ ঘেমে উঠছে। লেপ, কাঁথা, কম্বল গায়ে দিলে শরীর ঘামছে আবার গায়ে না দিলে শীত লাগছে।
কেন এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এর স্থাণীয় কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ভূ-তাত্তিক ও পরিবেশবিদদের মতে সারা বিশে^ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলো শিল্প কারখানা ও যানবাহন থেকে অতিরিক্ত কার্বন-ডাইঅক্সাইড বাতাসে নি:সরণ বন্ধ না হওয়ায় দিন দিন বৈষ্ণিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরিত্রি সম্মেলনে ২০১৫ সালের মধ্যে কার্বন নি:সরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রæতি রক্ষা করছে না। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছে এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা ১৩ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেড়ে যাবে। আর তখন পৃথিবীতে জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়বে বলে পরিবেশবিদরা ধারণা করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।