Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যমুনা ব্রিজের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলি

| প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক সম্প্রসারণে ৬০০ কোটি
টাকা বরাদ্দের চাহিদা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে
মাহফুজুল হক আনার : যমুনা ব্রিজ চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছিল। ফেরী পারাপারের বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেয়ে মানুষ স্বস্থির নিঃশ^াস ফেলেছিল। ব্রিজ চালু হওয়ায় উত্তরের সর্বশেষ জেলা পঞ্চগড়-দিনাজপুর থেকে ঢাকায় যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগতো ৭ ঘণ্টা। ফলে এই অঞ্চলে গড়ে উঠতে থাকে পোল্টি ফিড কারাখানা, ছোট ছোট গার্মেন্টসসহ অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। হিলি ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছিল। নীলফামারীতে প্রতিষ্ঠিত ইপিজেডে বিদেশী উদ্যোক্তা আর শ্রমিকদের পাদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে নীলফামারীতে প্রতিষ্ঠিত উত্তরাঞ্চলের একমাত্র ইপিজেডটি। কিন্তু বছরের পর বছর মহাসড়কগুলি’র দৈন্যদশা উত্তরাঞ্চলকে পিছনের দিকে ঠেলে দিতে শুরু করেছে। সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের সাথে ঢাকার যোগাযোগ এখন আতংকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালামাল পরিবহনে খরচ দ্বিগুনের বেশী পড়ে যাচ্ছে। দিনাজপুর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। সড়কের বেহাল দশায় তীব্র যানজট সময়ের এই কাটাকে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টায় টেনে নিয়ে থাকে। ফলে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে নুতন নুতন উদ্যোক্তারা। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি। সর্বশেষ সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যা সড়কের বেহাল দশাকে ভয়াবহ রুপ দিয়েছে। পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছে সড়ক বিভাগ। দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ১০৭ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের চাহিদায় একটি প্রস্তাবনা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা এখনও ফাইল বন্দি হয়ে থাকায় সমস্যা সমাধানে কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।
উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর অঞ্চলের সাথে সড়কপথে ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম সড়ক হচ্ছে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক। দিনাজপুর সড়ক বিভাগের আওতাধীন ১০৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি বর্তমানে ১৮ ফিট প্রস্থ হওয়ায় ব্যস্ততম সড়কটি হয়ে উঠেছে মৃত্যু ফাঁদে। দুর্ঘটনা লেগেই আছে। দিনাজপুর সড়ক বিভাগের পর রয়ে গাইবান্ধা ও বগুড়া অঞ্চলের অংশ। টাঙ্গাইল হয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে রংপুর পর্যন্ত সড়কটিকে ৪ লেনে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যাস্ততম দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ সড়কটি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কোন মাথা ব্যাথাই পরিলক্ষিত হয়নি।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম সারওয়ার জানান,সে কারণে চাহিদা অনুযায়ী রাস্তাটি ১৮ ফিট থেকে বৃদ্ধি করে ৩২ ফিট পাকা এবং উভয় পার্শ্বে অতিরিক্ত ৩ ফিট করে ৬ ফিট খোয়া কনসলিশন নির্মান করতে ৬০০ কেটি টাকা ব্যয় নির্ধারণে একটি প্রস্তাবনা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। সূত্রটি জানায়, প্রস্তাবিত দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক যুগোপযোগী ও আধুনিক পদ্ধতিতে নির্মান করতে ওই প্রস্তাবনায় সব ধরনের তথ্য প্রদান করা হয়েছে। রাস্তাটি নতুন পদ্ধতিতে প্রশস্ত করে নির্মানের জন্য বেশ কিছু স্থানে জমি অধিগ্রহণ, রাস্তার দুপাশে থাকা অবৈধ অবকাঠামো অপসারণ এবং হাট-বাজারগুলোর স্থানে আরসিসি গ্রাডার স্থাপনে রাস্তা নির্মানের প্রস্তাবনাও রাখা হয়েছে। সূত্রটি জানায়, প্রস্তাবনার ফাইলটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। চলতি বছর একনেকের সভায় যে কোন সময় অনুমোদন হলে রাস্তাটি সম্প্রসারণ ও যুগোপযোগী করে আধুনিক পদ্ধতির নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হলে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল থেকে রক্ষা পাবে। অনুমোদন সাপেক্ষে রাস্তা নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহনসহ অন্যান্য অবকাঠামো অপসারনের কাজ শুরু করা হবে।
সূত্রটি জানায়, গত বন্যায় দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে দিনাজপুর জেলার মধ্য ৯৩ কিলোমিটার রাস্তার ২০ কিলোমিটার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য এবারে ১০ কোটি টাকা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে ইতিমধ্যে ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য দরপত্র আহŸানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে টেন্ডার অতঃপর কাজ শুরু করা হবে। এর চেয়ে বেশী কোন সুখবর দিতে পারেনি সড়ক বিভাগ। রাস্তাটি মেরামতসহ উন্নয়নমূলক কাজ করতে তাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও সড়ক ও জনপথের সাথে বৈঠক করেছে মোটর বাস মালিক গ্রæপ নেতৃবৃন্দ। বিষয়টি নিশ্চিত করে মালিক গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম শেলু জনস্বার্থে রাস্তাটি দ্রæত মেরামত ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার দাবী জানিয়েছে।
একদিকে দিনাজপুর গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা অপরদিকে টাঙ্গাইল অংশে সড়ক সম্প্রসারনের কাজ চলমান থাকায় যান জট নিত্যদিনের সাথী হয়ে গেছে। দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলি থেকে যাত্রীবাহী কোচগুলি ৭ ঘন্টার জায়গায় ১০ ঘন্টাতেও ঢাকা পৌছাতে পারছে না। আর পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক-কভার্ট ভ্যানগুলি দুই দিনেও ঢাকা পৌছাতে পারছে না বলে চালকেরা জানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুন ভাড়া হাকাচ্ছে ট্রাক চালকেরা। ফলে পণ্যের মুল্যে’র উপর এর প্রভাব পড়ছে। এমতাবস্থায় যমুনা ব্রীজের সুফলকে ধরে রেখে উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন ধারাকে আরো ত্বরান্বিত করতে আঞ্চলিক মহাসড়কগুলির সম্প্রসারণ ও মেরামতের উদ্যোগ করা করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ