Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গৃহকর না বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের চিঠি

আইনি মতামতের অপেক্ষায় ঢাকার দুই কর্পোরেশন

| প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকার উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে গৃহকর বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি মতামত পেয়ে গেলে তা বাস্তবায়ন করা হবে। সরকারের অনুমোদন নিয়ে রাজধানীর গৃহকর সমতায়ন করতে চেয়েছিল ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে দুই সিটির বেশ কয়েকটি অঞ্চলে গৃহকর সমাতয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় এসে গেছে। কিন্তু শুরু থেকেই এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাড়িওয়ালারা। এনিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন সংগঠন ও এলাবাসীর ব্যানারে আন্দোলনও করে যাচ্ছেন।
এ অবস্থায় কার্যক্রমটি স্থগিত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির মাধ্যমে ঢাকার দুই সিটিসহ দেশের সব সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি মতামত জানানোর জন্য ফাইল পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। কোনও প্রকার আইনি জটিলতা না থাকলে স্থগিত করা হবে ঢাকার দুই সিটির গৃহকর বাড়ানোর কার্যক্রম।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ওই চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ এই কার্যক্রম চালু করতে পারবে না। ভবিষ্যতে অনলাইনভিত্তিক অটোমেশন পদ্ধতিতে কর আদায় করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া অটোমেশন পদ্ধতিতে না আসা পর্যন্ত গৃহকর বৃদ্ধি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
দক্ষিণ সিটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার বলেন, গত ১২ নভেম্বর আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আইনি মতামত জানার জন্য একটি ফাইল পাঠানো হয়। ফাইলটি ফিরে এলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি’র প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলাল বলেন, কর বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে একটি চিঠি আসে। আমরা এই নির্দেশ কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেলে নগরবাসী আগের মতোই কর দিতে পারবেন।
ডিএনসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী বলেছেন, মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসার পর আমরা এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্থগিত রেখেছি।
জানা গেছে, দীর্ঘ ২৭ বছর পর গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ডিসিসি’র চারটি অঞ্চলে বাড়ানো হয় গৃহকর। এ কারণে তা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, পাঁচ বছর পরপর কর পুণর্মূল্যায়নের বিধান থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়নি। সেজন্য ১৯৯০ সালের পর থেকে বৃদ্ধি হয়নি গৃহকর। তাই তারা আইনের মধ্যে থেকে কর সমতায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
কিন্তু কর বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ইতোমধ্যে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ করছে। নগরবাসীর অভিযোগ, কর বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। ঘরভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে।
সূত্র জানায়, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে কর সমতায়নের জন্য পঞ্চবার্ষিকী সাধারণ মূল্যায়ন কার্যক্রম গৃহীত হয়। কিন্তু এরপর বিভিন্ন কারণে ওই উদ্যোগ আর বাস্তবায়ন হয়নি। গত ২৯ বছর ধরে নিয়মটি বন্ধ ছিল। এ সময়ের মধ্যে পাঁচতলা ভবন হয়েছে ১০ থেকে ১২ তলা। একতলা ভবন বহুতল হয়েছে। ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু কারও গৃহকর বাড়েনি।
সবশেষ ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে গৃহকর সমতায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৪ আর উত্তর সিটি কর্পোরেশন তার অঞ্চল-১ ও অঞ্চল-৩ এলাকায় গৃহকর সমতায়নের কাজ শুরু করে। এর মধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশন তাদের দুটি অঞ্চলের কাজ সম্পন্ন করলেও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন তখন তা শেষ করতে পারেনি। এ দুটি অঞ্চলে কর নির্ধারণের পর বাকি ছিল শুধু চিঠি পাঠানো।
সেই সময় দুই সিটি কর্পোরেশনের কর সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে অনিয়মসহ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। গত ২ ফেব্রæয়ারি ডিএসসিসির উপ-কর কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জমাদ্দারকে সার্কুলার রোডের (ভূতের গলি) নিজ বাসা থেকে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে আটক করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুই সিটি কর্পোরেশনের কর পুনর্মূল্যায়নে সংক্ষুব্ধ হয়ে এ বছরের ২২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করেন ঢাকার বাসিন্দা সাইফ আলম। এতে কর পুনর্মূল্যায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। এরপর গত ৭ আগস্ট আদালতের এক আদেশে এটি উঠে যায়। ফলে আবারও শুরু হয় দুই সিটি কর্পোরেশনের কর সমতায়নের কাজ।
এক্ষেত্রে ডিএনসিসি তাদের দুটি অঞ্চলের কাজ আগেই শেষ করেছে। এখন তারা নতুনভাবে বাকি তিন অঞ্চলে কর নির্ধারণে হাত দিয়েছে। একইভাবে ডিএসসিসি তাদের দুটি অঞ্চলের কর নির্ধারণের কার্যক্রম শেষ করলেও নাগরিকদের কাছে চিঠি পাঠানো বন্ধ ছিল। স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পর এখন তারা বাসিন্দাদের কাছে তা পাঠানো কাজ শুরু করেছে। চিঠি পেয়েই মাথায় হাত নাগরিকদের।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গৃহকর থেকে ডিএসসিসি ৫০০ কোটি টাকা ও ডিএনসিসি ৪৮০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এক্ষেত্রে বিবেচনায় ছিল বর্তমান বাসা ভাড়া। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ