Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে মানুষের পাশে থাকুন, আস্থা অর্জন করুন

প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের পাশে থাকতে হবে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। কর্মকর্তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শুধু ফাইলে সই করাই তাদের দায়িত্ব নয়, বরং মানুষের কল্যাণে নিষ্ঠা ও সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা থাকতে হবে।
ঢাকার শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে বৃহস্পতিবার ১০২তম ও ১০৩তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনীতে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কোর্স শেষ করা নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই যেখানে দায়িত্ব পালন করবেনৃ সেখানে কীভাবে আরও উন্নয়ন করা যায় সেজন্য উদ্ভাবনী চিন্তা সকলের মাঝে থাকতে হবে। কীভাবে প্রশাসন মানুষকে আরো সেবা দিতে পারে। মনে রাখবেন, জনগণকে সেবা দেয়া এটা হলো দায়িত্ব আর; এই মনোভাব নিয়েই সবাইকে চলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে যেখানেই থাকি, এটা কাদের অর্জিত অর্থ? আমার কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ; তাদেরই তো রক্ত ঘাম ঝরা অর্থ। তাদের সেবা করা, তাদের জীবনটা সুন্দর করা; এটা আমাদের সকলের কর্তব্য। দেশে মাদকের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় এর বিরুদ্ধে ব্যাপক একটি অভিযান চালানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আরও ব্যাপক অভিযান আমাদের চালানো প্রয়োজন। কারণ বহু পরিবার আজকে শেষ হয়ে গেছে। সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টিও দিচ্ছি।
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া বক্তৃতা থেকেও এ সময় উদ্ধৃত করেন তার মেয়ে হাসিনা। জাতির পিতা বলেছিলেন, সমস্ত সরকারি কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন। মানুষের সেবা করার মত শান্তি দুনিয়ার আর কিছুতেই হয় না। সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। তারা জনগণের খাদেম, সেবক, ভাই, তারা জনগণের বাপ, জনগণের ছেলে, জনগণের সন্তান; তাদের এই মনোভাব নিয়েই কাজ করতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার পরামর্শ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, অন্যের কাছে হাত পেতে চলতে হবে; এই মানসিকতা নিয়ে কেন আমরা চলব? এই মানসিকতা নিয়ে আমরা চলতে চাই না। সব সময় মনে একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে, আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে হবে। এই দেশ আমাদের, এই মাটি আমাদের, এই মানুষের কল্যাণ করাটাই আমাদের দায়িত্ব।
নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ সম্ভব কি না-সে সন্দেহ যারা প্রকাশ করেছিলেন, তাদের কথাও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী, পদ্মা সেতু একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের দুর্নীতিবাজ হিসাবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। চ্যালেঞ্জ আমি গ্রহণ করেছিলাম। বলেছিলাম, ওদের টাকা না, আমরা নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। ইনশাল্লাহ, সেটা নির্মাণ করেছি। এই একটা সিদ্ধান্তেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে পরিবর্তন হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেকেই বলেছিলেন, বিশ্ব ব্যাংক ছাড়া এটা করা যাবে না। এরকম বহু বাধা এরকম বাধার কারণে দুটো বছর পিছিয়েও গিয়েছি; এটা হল বাস্তবতা। ভেতরের কথা সব বলার দরকার নাই। ওটা ছাড়া হবেই নাৃ এরকম একটা ভাব। আমি জেদ করে বসেছিলাম, করলে নিজে করব, না হলে করবই না। তিনি বলেন, আমরা করতে পারি; আজকে এটা প্রমাণিত সত্য।
সরকারি কর্মকর্তাদের যে কোনো কঠিন কাজ করার সাহস রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পারব না কেন? আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে পারি, ওই ৯৬ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য সারেন্ডার করেছে আমাদের কাছে। সে কথাটা আমাদের ভুললে চলবে না। যদিও আমাদের একটা মিত্র শক্তি ছিল। কিন্তু মূল যুদ্ধটা তো আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মাঠে ঘাটে করেছে। যার জন্য এই বিজয়টা এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে শত প্রতিকুলতার মধ্যেও আমরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছি বলেই আজকে উন্নয়নের ছোয়াটা জনগণ পাচ্ছে। অন্তত উন্নয়নের ছোয়াটা দৃশ্যমান হচ্ছে। নবীন কর্মকর্তাদের তৃণমূলের উন্নয়নে নজর দেয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে যাবেন এই দিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে; আমাদের তৃণমূলের মানুষের উন্নয়ন হলেই দেশ সত্যিকারের উন্নত হবে। গ্রামের মানুষকে সকল নাগরিক সুবিধা পেতে হবে। তার জীবনটা উন্নত মানের হতে হবে। শুধু শহরের কিছু মানুষ ধনী থেকে আরও ধনী হোক-সেটা আমরা চাই না।
২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সচিব পদে ১৪৪ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৮৪৩ জন, যুগ্ম-সচিব পদে ১৬৭৩ জন এবং উপসচিব পদে ১৯৮১ জনকে পদোন্নতি দেয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আজ যদি দেশ স্বাধীন না হত, আজকে আপনারা যে পদেই আছেন কেউ কিন্তু এই পদে থাকতে পারতেন না। আজকে দেশ স্বাধীন বলেই আমরা নিজেদের অবস্থান আন্তর্জাতিক মানের করে নিতে পেরেছি।
আইন ও প্রশাসন কোর্সের ব্যাপ্তি আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে জানি না পাঁচ মাসে কতটুকু শেখা যায়? প্রশিক্ষণটা আরও সময় নিয়ে করলে বোধ হয় আরও ভালো হয়।
প্রধানমন্ত্রী সদন বিতরণের পর নবীন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ছবি তোলা হয়। একটি স্মরণীকার মোড়কও উন্মোচন করেন তিনি। অন্যদের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমান এবং জনপ্রসাশন সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বিসিএস প্রসাশন একাডেমির রেক্টর মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।



 

Show all comments
  • তাওহীদ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:৫০ এএম says : 0
    সুন্দর নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ