পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারা কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, রাজনীতি করে?
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, যারা দুর্নীতিবাজ, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেয়, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, তারা দেশবাসীর কাছে কোন মুখে ভোট চাইবে? তারা কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, রাজনীতি করে? এসব দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী, লুটেরা, খুনিদের দলকে জনগণ কখনো ভোট দেবে না। তিনি বলেন, এরা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। দেশের মানুষই তাদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না। জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না, আমরা তা হতে দেবো না। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলছে, চলবেই।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা তিনটায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। ভেতরে ঠাঁই না হওয়ায় অনেকেই মিলনায়তনের বাইরে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যারা সৃষ্টি করে, দেশের জন্য ত্যাগ করে, তাদের দেশের প্রতি দরদ থাকে। আর যারা ক্ষমতায় উড়ে এসে জুড়ে বসে, তাদের সেই দরদ থাকে না। যারা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন চায়, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে, বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত হোক তা চায়- তারা কখনোই যুদ্ধাপরাধী ও মানুষ হত্যাকারী দলকে সমর্থন করতে পারে না, ভোট দিতে পারে না। এই লুটেরার দল ক্ষমতায় থেকে দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। এদের কখনো বিবেকবান দেশের জনগণ ভোট দেবে না, দিতে পারে না।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর দায়ে যাদের বিচার হয়েছে, ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে- সেই যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল, ফাঁসি কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ছেলেমেয়েদের সন্তানদের দলে ভিড়িয়ে রাজনীতি করে- স্বাধীনতায় বিশ্বাস করা একজন মানুষ সেই দলকে কিভাবে সমর্থ দেন? দলটির অনুগত হন? তাদের কী বিবেকবোধ, বোধশক্তি কিছুই নেই? কোনো বিবেকবান মানুষ তাদের সমর্থন করতে পারে না।
নির্বাচন বানচাল ও সরকার উৎখাতের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা, সন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা (আওয়ামী লীগ) গড়ে তুলি, আর খালেদা জিয়ারা ধ্বংস করে। আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়ারা মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ছেলের সামনে বাবাকে, মায়ের সামনে ছেলেকে, পিতার সামনে ছেলেকে তারা জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আর এসব অপকর্মের হুকুমদাতা হলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, আর পরামর্শদাতা হচ্ছে তার কুলাঙ্গার পুত্র সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান। অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা। এখন দেখি বিদেশে শপিং মল বের হচ্ছে। ব্যাংক থেকে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা তারা লুটে নিয়ে গেছে। এত অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে? কোন মুখে তারা জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে?
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই শুরু করেছিলেন। ওই সময় অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত ছিল। যারা যুদ্ধাপরাধ করেছিল, যারা রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী গঠন করে এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনদের হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল- তাদের এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না, তাদের ভোটের অধিকারও ছিল না। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর সাজাপ্রাপ্ত সব আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া হয়। যারা পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেয়া হয়। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী যারা তৈরি করেছিল, যারা দেশকে ধ্বংস করেছে, যারা গণহত্যা চালিয়েছে- সেই যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা বানানো হয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যারা দেশের জন্য রক্ত দিলো, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তারই যেন হয়ে গেল অপরাধী? আর যারা দেশকে ধ্বংস করল, যারা আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল, নির্যাতন করল, লুটপাট করল, সেসব যুদ্ধাপরাধীই হয়ে গেল মন্ত্রী। আর এসব করেছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া ছিল সাধারণ একজন মেজর। জাতির পিতা তাকে পদোন্নতি দিয়ে দিয়ে মেজর জেনারেল বানালেন। সেই বেঈমান, মুনাফেক জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার বন্ধে সে ইনডেমিনিটি জারি করল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথই শুধু বন্ধ নয়, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃতও করেছে এই জিয়াউর রহমান। জাতির পিতার হত্যাকারীরাই হয়ে গেল বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা!
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ সবাই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আরো একধাপ ওপরে নিয়ে গেল। যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের হাতে তুলে দিলো লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। তারা হয়ে গেল মন্ত্রী, উপদেষ্টা। যাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির হুকুম হয়েছে, যাদের ফাঁসি কার্যকর করেছে, তাদেরকেই উনি (খালেদা জিয়া) মন্ত্রী করেছিলেন। তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে দল বানাল। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা স্বাধীন দেশে বিশ্বাস করে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারা কী করে মেনে নিতে পারেন যে ফাঁসির হুকুম পাওয়া যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যারা চায়, যারা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চায়, যারা চায় দেশের সন্তানরা লেখাপড়া শিখবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হবে, বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে তাদের প্রতি বলতে চাই- আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে, তখনই দেশের উন্নতি হয়। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা দিয়েছে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। মাঝখানে আট বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল, দেশের উন্নয়নও বন্ধ ছিল। এখন আবার উন্নয়ন শুরু হয়েছে। দেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। যারা সৃষ্টি করে, ত্যাগ স্বীকার করে, তাদের দেশের প্রতি যে দরদ-আন্তরিকতা থাকে, উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষের তা থাকে না। তাদের লক্ষ্য থাকে ভোগ-বিলাস, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার। তাদের পক্ষে কেউ থাকবে না। যারা দেশের বিরোধী, যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না। তারা কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
বিজয় দিবসে দেশের তরুণদের উচ্ছ¡াস-উৎসাহের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন করেছি, এখন আমাদের নেতৃত্বেই দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি খুব খুশি হয়েছি যে, এ বছর বিজয় দিবস ব্যাপকভাবে পালিত হয়েছে। আপামর জনগণ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, শিশু, যুবক থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষ যে উৎসাহ নিয়ে এই দিনটিকে পালন করেছে, তারা যেভাবে স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে নতুনভাবে জাগ্রত হয়েছে, আমি তাদের মধ্যে আশার আলো দেখি। তাদের হাত ধরেই আগামীতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। উন্নত হবে।
আগামী দিনের প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। অথচ এই ভাষণ একটা সময় নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জনগণ এখন মাথা উঁচু করে চলছে, চলবে। সেটাই এই বিজয় দিবসের প্রতিজ্ঞা। আমাদের স্বাধীনতার সুফলকে দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না, এটাই আজকের প্রতিজ্ঞা। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবোই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ড. হাছান মাহমুদ ও আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় বক্তব্য আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন আহমদের সন্তান সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর, দলের মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।