পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অভিবাসন ব্যয় আকাশচুম্বী : প্রবাসী মন্ত্রী দালালদের হদিস পাচ্ছেন না মালয়েশিয়ায় দুই লাখ অবৈধ কর্মী পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে
শামসুল ইসলাম : দালাল চক্রের কবলে পড়ে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রফতানিতে ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দীর্ঘ সাড়ে চার বছরেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। দেশে আশানুরুপ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। বিদেশে চাকুরির সোনার হরিণ ধরাতে গ্রাম-থেকে শহর পর্যন্ত দালালদের দৌরাত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। একাধিক দালালের হাত বদল হয়ে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে পৌছতে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দালালদের দৌরাত্ব রোধে সরকার বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়কে তোয়াক্কা না করে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গলাকাটা হারে অভিবাসন ব্যয় হাতিয়ে নিচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা লাভের সুযোগ রি-হিয়্যারিং প্রকল্প শেষ হয়ে যাচ্ছে। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে এখনো প্রায় ২ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। দালালরা মাইজি’র মাধ্যমে বৈধতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত অবৈধ বাংলাদেশীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৬ হাজার রিংগিত থেকে ৭ হাজার রিংগিত হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। এদের অধিকাংশই অদ্যাবধি বৈধতার কোনো কাগজপত্র পায়নি। রি-হিয়্যারিং কর্মসূচির বাইরে থেকে যাওয়া এসব অবৈধ কর্মীদের ভাগ্যে কি আছে তা’কেউ বলতে পারছে না। এ ব্যাপারে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃপক্ষ অবৈধ কর্মীদের দ্রুত রি-হিয়্যারিং প্রকল্পের মাধ্যমে বৈধতা লাভের সুযোগ গ্রহনের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। দালালদের দৌরাত্ব হ্রাস এবং অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে প্রবাসী কর্মীদের রেমিটেন্সের পরিমাণও বাড়তো। গত নভেম্বর মাসে ১২১ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ এবং গত অক্টোবরের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি রেমিটেন্স সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের এই পাঁচ মাসের চেয়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটি উদযাপনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গতকাল রোববার তার দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এতথ্য জানিয়েছেন। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত জানুয়ারী থেকে গতকাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৯ লাখ ৭৩ হাজার নারী-পুরুষ কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে। যা এযাবত কালের সর্বোচ্চ সংখ্যক। এর মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার মহিলা কর্মী রয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ বছর ১০ লাখের অধিক কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থান হবে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের দালালদের কাছে না গিয়ে সরাসরি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি’র কাছে গেলে অভিবাসন ব্যয় এতো বাড়বে না। বিদেশ যেতে একাধিক দালালের হাত বদলের কারণেও কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় বাড়ছে বলেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম স্বীকার করেন। অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরাতো দালালদের হদিস পাচ্ছি না। লিখিত অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত দালালদের চিহ্নিত করে দেশে পাঠিয়ে দিতে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার, অতিরিক্ত সচিব অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ আমিনুল ইসলাম, জনশক্তি বিশ্লেষক ও ডিবেট ফর ডিমোক্রেসি’র চেয়ারপারর্সন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হক, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ সেলিম রেজা, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলাহাস ও বোয়েসেল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরণ কুমার চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যসত্বভোগি দালালদের ৪/৫ হাত বদল হয়ে বিদেশে যেতে কর্মীদের সরকার ঘোষিত নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের চার-পাঁচগুণ বেশি টাকা দিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। গৃহপালিত গবাদি পশু বিক্রি ও চড়া সুদে ঋণ করে বিদেশে যাওয়ার টাকা জোগাতে হিমসিম খাচ্ছে কর্মীরা। দু’বছর মেয়াদের চুক্তিতে বিদেশ গিয়ে অনেকেই চড়া অভিবাসন ব্যয়ের টাকা তুলতে পারছে না। ইতিপূর্বে জিটুজি প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। এ প্রক্রিয়ায় মাত্র ১০ হাজার কর্মী শুধু মালয়েশিয়ার কৃষি খাতে চাকুরির সুযোগ পায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় স্বল্প সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমে অনলাইনে কর্মী যাওয়া শুরু হয়। সাত শতাধিক বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি জিটুজি প্লাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ না পাওয়ায় দশ সিন্ডিকেট দেশটিতে কর্মী পাঠাতে গলাকাটা হারে অভিবাসন ব্যয় হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ১০ মার্চ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৮১ হাজার ৪শ’ ৪৪জন কর্মী জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান লাভ করেছে। দালাল চক্রের একাধিক হাত বদল হয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে এসব কর্মী জনপ্রতি তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু একাধিক কর্মী ইনকিলাবকে এতথ্য জানিয়েছেন। গত ১৪ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো: আবুল হাছানাত হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে নির্মাণ/কারখানা কর্মীর জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং কৃষি কর্মীর জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়টি সমঝোতা স্মারকের অনুচ্ছেদ ৯ অনুযায়ী জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভায় মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত করার কথা। উল্লেখিত নির্দেশনা উপেক্ষা করেই দশ সিন্ডিকেট কর্মী নিয়োগে জনপ্রতি তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে আদালত পর্যন্ত মামলা হয়েছে। জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সহ-সভাপতি শাহ আলম হাওলাদার কুয়ালালামপুর থেকে জানিয়েছেন, দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়া কর্মী আসায় অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বাড়ছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক প্রবাসী কর্মী প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের রি-হিয়্যারিং প্রকল্পের অধীনে চার লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী মাইজির মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন থেকে এক লক্ষাধিক অবৈধ কর্মী ই-কার্ড গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের ডিজি মোস্তফা বাংলাদেশ হাই কমিশনার শহীদুল ইসলামের সাথে বৈঠক করে বাংলাদেশী কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দালালদের কারণে অনেক অবৈধ কর্মী মাইজির মাধ্যমে হাজার হাজার রিংগিত দিয়েও বৈধতার কাগজপত্র হাতে পায়নি। তিনি বলেন, এখনো প্রায় ২ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। তারা বৈধতাকরণের কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছে। তিনি এসব অবৈধ বাংলাদেশীদের দ্রুত বৈধতা লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বায়রার সহ-সভাপতি কাজী মফিজুর রহমান ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, দালালদের ৪/৫ হাত বদলে হয়ে কর্মীরা বিদেশে যাচ্ছে। এতে অভিবাসন ব্যয় অস্বাভাবিক বাড়ছে। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীরা সচেতন না হলে অভিবাসন ব্যয়ের উর্ধ্বগতি কমবে না। এটা একক সমস্যা নয়। অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে সরকারের সাথে সকলকে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাসে গিয়ে কর্মীরা এবার প্রতারিত হচ্ছে না। কোন কর্মী কোথায় যাচ্ছে কি কাজে যাচ্ছে তা’ এখান থেকেই জেনে যাচ্ছে। বায়রা নেতা কাজী মফিজুর রহমান অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরনের সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।