পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোসেন মাহমুদ : আজ ১৫ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকার চারপাশে অবস্থান নেয় মিত্র ও মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তানী বাহিনী তখনো আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। ঢাকায় তারা স্থল প্রতিরক্ষাব্যুহ রচনা করেছে। তারা যদি আত্মসমর্পণ করতে না-ই চায়, তার অর্থ হবে ভয়াবহ যুদ্ধ, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। কিন্তু যে কোনভাবেই ঢাকার এ সম্ভাব্য ধ্বংসকান্ড এড়াতে চাইছিল যৌথবাহিনী। জেনারেল মানেকশ’ ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করার জন্য পাকিস্তানী সৈন্যদের সময় বেঁধে দেন। আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ভারতীয় বিমান হামলা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। লেঃ জেনারেল নিয়াজির তখন দিশাহারা অবস্থা। আত্মসমর্পণের ব্যাপারে ইসলামাবাদের কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চেয়ে পাঠান তিনি। জানা যায়, ১৫ ডিসেম্বর রাত ২টার পর চিফ অব স্টাফ জেনারেল আব্দুল হামিদের কাছ থেকে আত্মসমর্পণের অনুমোদন দেয়া হয়। তার পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাকিস্তানী সেনা ইউনিটগুলোকে রেডিও মারফত আত্মসমর্পণের নির্দেশ প্রেরণের কাজ শুরু হয়ে যায়। পাশাপাশি নিয়াজির অনুরোধে আত্মসমর্পণ করার সময় পরদিন বিকাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এভাবে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ নিশ্চিত হওয়ার প্রেক্ষিতে ভারত এদিন রাত থেকে পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা করে। এ অবস্থায় দু’একটি স্থান ছাড়া বাংলাদেশের সর্বত্রই যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়। পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া যখন এগিয়ে চলছিল তখন ভারতীয় বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধাসহ ঢাকার অবশিষ্ট অধিবাসী অধীর আগ্রহে পরদিন অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল। ১৯৭১ সালের এদিনে চট্টগ্রাম ও সিলেটে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। বগুড়া শহর ছেড়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা পালিয়ে যায়। এ দিন মুক্ত হয় রাঙ্গুনিয়া, কোটালীপাড়া, নীলফামারী, গোয়ালন্দ, পার্বতীপুর প্রভৃতি এলাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : আজ ১৫ ডিসেম্বর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে মুক্ত করেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। উড়িয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭নং সেক্টরের অধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমায় ছিল ২টি সাবসেক্টর। একটি মহদিপুর সাব সেক্টর, অন্যটি দলদলী সাব সেক্টর। মহদিপুর সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এবং দলদলী সাব সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন লেঃ রফিক। ১৪ ডিসেম্বর ভোর রাতে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তার বিশাল বাহিনীকে ৩ ভাগে ভাগ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের জন্য আক্রমন শুরু করেন। তিনি একটি ছোট নৌকা নিয়ে মহানন্দা নদী পার হয়ে রেহাইচর গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং শত্রæদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। রাতের আধার পুরোপুরি কেটে যাওয়ার আগেই পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ীর জানালা থেকে পাক বাহিনীর ছোড়া একটি বুলেট ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের কপালে বিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সাড়াশী অভিযানে পাকিস্থানীরা পিছু হটলে মেজর গিয়াস, লেঃ রফিক, লেঃ কাইউম, ডাঃ মইন উদ্দীন আহমেদ মন্টু ও শাহাজাহান মিয়ার নেতৃত্বে মক্তিযোদ্ধারা দলে দলে শহরে প্রবেশ করলে শত্রæমুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মুক্তিযোদ্ধারা উদ্ধার করেন শহীদ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের লাশ। ওই দিনই বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী ঐতিহাসিক ছোট সোনামসজিদ চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।
পার্বতীপুর মুক্ত দিবস
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : বছর আগে ১৯৭১ সালের এ দিনে পার্বতীপুর হানাদার মুক্ত হয়। আজ ১৫ ডিসেম্বর। পার্বতীপুরের শান্তিকামী মানুষ ৭ মার্চের পর সারা দেশের মত পার্বতীপুরেও শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস আদালত, স্কুল-কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ট্রেন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ২৩ শে মার্চ শহরের অবাঙ্গালীদের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ শহর ঘেরাও করে সিদ্দিক মহলায় অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় অবাঙ্গালীরা নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর ব্যাপক গুলি চালায়ে যাদের হত্যা করে তাদের মধ্যে ২৪ ও ২৫ মার্চ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারীসহ ১১ জন, ব্যবসায়ী ৪ জন কর্মচারী, কাশিয়া তেলীর পরিবারের ৪জন সদস্য, তৎকালীন সিনেমা হলের ম্যানেজারের গোটা পরিবার, ওয়াহিদ কোম্পানির দু’জন কর্মচারী, পার্বতীপুর থানার এএসআই গোলাম মোস্তফার পরিবারের সকল সদস্য, ক্যাপ্টেন ডাক্তারের পুত্র ডাঃ সামসাদসহ অসংখ্য লোককে কয়লার ইঞ্জিনে বয়লারে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।