পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ায় তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বিদ্যুৎ ব্যতীত কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। আমরা দেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। কাজেই আমাদের লক্ষ্য শুধু শহরেই নয়, তৃণমূলের গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছে দেওয়া।
গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি নতুন বিদুৎকেন্দ্র এবং ১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ক্যাপটিভ জেনারেশনসহ ১৬ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট। দুর্নীতিতে পর পর পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করাসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ এক মেগাওয়াটও না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে ফেলার জন্য বিএনপি-জামায়াত সরকারের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। আর আমরা ২০০১ সালে যখন ক্ষমতা থেকে যাই তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে রেখে গিয়েছিলাম চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। অথচ ২০০৯ সালে যখন পুনরায় সরকার গঠন করি, তখন আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ নেমে আসে তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াটে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আবার আমরা শুরু করলাম কিভাবে দেশের উন্নয়ন করব। কিন্তু উন্নয়ন করতে গেলে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন অপরিহার্য। সে জন্য আমাদের একটা প্রচেষ্ঠাই ছিল, কত দ্রæত আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রিড লাইন তৈরি এবং সরবরাহে আমরা গুরুত্ব দেই। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেমন সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট করছি, তেমনি পরমাণু ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও করছি। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি, আবার ভারতের থেকেও বিদ্যুৎ কিনে নিয়ে আসছি। যেখানে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ক্যাপটিভ জেনারেশনসহ ১৬ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়ত-বিএনপি সরকার বিদ্যুৎ রেখে গিয়েছিল এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, আর আমরা দিচ্ছি ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আশা করি বাংলাদেশের জনগণ এটা একটু ভালোভাবে মনে রাখবে।
তিনি বলেন, শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন এবং আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। সব থেকে আনন্দের বিষয় জাতীয় গ্রিডে সোলার বিদ্যুৎ আজ থেকে যোগ হচ্ছে। যদিও এটা খুব ব্যয়বহুল, তারপরও আজ যে যাত্রাটা শুরু হলো ভবিষ্যতে এই সোলার বিদ্যুতের যে উৎপাদনটা হবে সেখানে ব্যবহারের অতিরিক্তটা আমাদের জাতীয় গ্রিডে চলে আসবে। তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তি যখন এসে গেছে, তাই আমরা এটা ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছি। কাজেই আমাদের দুর্গম সব এলাকাতেও সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ৪৫ লাখ সোলার প্যানেল ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ব্যয় হয় তার চেয়ে অনেক কম দামে আমরা বিদ্যুৎ দিচ্ছি। তাই সবাইকে এই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতের যেন কোনো অপচয় না হয়। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দেশের প্রথম সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ এখন যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি সুনামগঞ্জে ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি ফটোভোল্টাইক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোট ৩২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। এ কারণে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়ন করছে। সরিষাবাড়ীর সিমলা বাজারে দেশের প্রথম সৌরবিদুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে। এন গ্রিন সরিষাবাড়ী সোলার প্ল্যান্ট লিমিটেড নামের এই কেন্দ্রে জমি দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আর বিনিয়োগ করেছে জার্মানির আইএফই এরিকসন এজি, বাংলাদেশের কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড। আট একর জমিতে সাড়ে ১১ হাজার সোলার প্যানেল ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে তিন মেগাওয়াটের এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। আগামী এক বছরের মধ্যে এরকম আরও পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ৩৩২ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সুনামগঞ্জের সাপ্লায় ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ফটোভোল্টাইক বিদুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়েছে দুই হাজার ৩২২টি সোলার প্যানেল। এই কেন্দ্রের ফলে হাওরের ৪০০ পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, ভবিষ্যতে সোলার বিদ্যুতের উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে চলে আসবে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস টারবাইনে ১৫০ এবং স্টিম টারবাইনে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হবে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরার ঝিলিম বাজারে চালু হওয়া নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসবে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব আহমদ কায়কাউস এ সরকারের সময়ে বিদুৎ খাতের অগ্রগতি নিয়ে বলেন, ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তখন ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, গ্রাহক ছিল এক কোটি আট লাখ। সেই উৎপাদন ক্ষমতা এখন বেড়ে ১৬ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট হয়েছে। আর গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৭০ লাখে পৌঁছেছে। আহমদ কায়কাউস বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আট বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিএনপি দিয়েছিল এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। আর আমরা দিচ্ছি ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এ সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় ২০০৯ সালের শুরুতে দেশে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এখন ১১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফরিদপুর সদর উপজেলা, মাদারীপুরের রাজৈর, নওগাঁ সদর, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সদর, মাগুরার শালিখা, মেহেরপুর সদর, নেত্রকোনার মদন এবং নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় শতভাগ বিদুৎতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচ এম আল-মুতাইরি এবং বাংলাদেশে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আদেল মোহাম্মদ এ এইচ হায়াৎ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।