Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘যদি বর্ষে আগনে, রাজা যায় মাগনে’

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : বৃর্ষ্টি পৃথিবীর জন্য মহান স্রষ্টার এক আর্শিবাদ। ভ‚তাত্তিকদের মতে আজ থেকে ৪৩০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তখন পৃথিবীর তাপমাত্রা ছিল ১ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর পর থেকে ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের ফলে পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকে। বৃষ্টিপাতের প্রভাবেই পৃথিবীতে জন্ম নেয় সবুজ গাছপালা। জন্ম হয় প্রাণের। এই বৃষ্টি এখন পৃথিবীর জন্য কখনো আর্শিবাদ, আবার কখনো অভিশাপ হয়ে আসে। বাংলার ভ‚মিতে আগনের বৃষ্টিকে বলা হয় অভিশাপ। এই মাসে বৃষ্টি হলে দেশের কৃষকক‚লের মারাত্মক ফসলহানী ঘটে। এর প্রেক্ষাপট হচ্ছে আগন মাস হচ্ছে বাঙালীর নবান্নের মাস। এ মাসে মাঠে মাঠে অগ্রাণী ধান পরিপক্ক হয়। বাঙালীরা জমি থেকে আনন্দ উল্লাস করে আগুনী ধান কেটে ঘরে তোলে। সেই আগুনী ধান দিয়ে বাঙালীরা পিঠাপুলি তৈরী করে খায়। আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় বাংলার ঘরে ঘরে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা, অগ্রাণী নবান্নোৎসবে, সোনার বাংলা ভরে উঠবে সোনায়, বিশ্ববাসী চেয়ে রবে’। কিন্তু যদি অগ্রহায়ণ মাসে বৃষ্টি হয় তবে বাঙালীর এই নবান্নোৎসব ব্যাহত হয়। অগ্রাণী ধান বিনষ্ট হয়ে যায়। হাহাকার পড়ে যায় ঘরে ঘরে। রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
এবছর অগ্রহায়ণ মাসে দু’বার নজিরবিহীনভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রথম বৃষ্টিপাত হয়েছে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে। দ্বিতীয়বারের বৃষ্টি চলছে দু’দিন ধরে (২৫ ও ২৬ অগ্রহায়ণ)। অগ্রাণী ধান প্রায় ৮০ ভাগ ঘরে উঠে গেলেও আরো ২০ ভাগ রয়ে গেছে ক্ষেতে ক্ষেতে। এ ধান ঘরে তোলা কৃষকের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনিতেই আমনের ফলন অন্যান্য বছরের চেয়েও কম। এর উপর ২০ ভাগ অগ্রাণী ধান কৃষক ঘরে তুলতে না পারলে দেশে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হবার আশঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে রবি শস্যের। গত দু’দিনে নরসিংদীতে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২৭ মিলিমিটার। এই বৃষ্টির ফলে সীম, সরিষা, গোলআলু, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাধাকপিসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির কমবেশী ক্ষতি হবার আশঙ্কা করছে চাষিরা। এমনিতেই বাজারে শাকসব্জীর দাম অনেক বেশী। এর উপর বৃষ্টিপাতে রবি শস্যের ক্ষতি হলে শাকসবজির দাম আবারো কয়েকগুন হারে বেড়ে যাবে। অগ্রাণ মাসের বৃষ্টির কারণে অগ্রাণী ধানসহ রবি শস্যের ক্ষতি সাধিত হয় বলেই আর্শিবাদ ও অভিশাপের এই বৃষ্টি নিয়ে বাঙ্গালী সমাজে রচিত হয়েছে অসংখ্য প্রবাদ ও প্রবচন। ‘যদি বর্ষে আগুনে, রাজা যায় মাগনে’ ‘যদি বর্ষে পৌষে রাজা মরে তুষে’ ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ ধন্য রাজা পূর্ন দেশ’। এই প্রবাদ বাক্যগুলো যুগযুগ ধরে বাঙালী সমাজ ব্যবস্থায় কৃষি সংশ্লিষ্ট মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে আসছে।
এদিকে নরসিংদী কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যেভাবে বৃষ্টি পড়ছে এই বৃষ্টি ততটা ক্ষতির কারণ নাও হতে পারে। যদি এ বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী না হয়। এ বছর কৃষি বিভাগ থেকে বোরো ধানের শুকনো বীজতলা করা হচ্ছে। যদি বৃষ্টিপাত বেশী হয় তবে শুকনো বীজতলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। একইভাবে অগ্রাণ মাসে বাঙালীর প্রধান সব্জী হচ্ছে সীম, গোলআলু, টমেটো, ফুলকপি, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন রবি শস্য। অগ্রাহয়ণ মাসে বৃষ্টিপাত হলে উল্লেখিত শাকসবজিসহ সকল রবি শস্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়। অগ্রাণী ধান ও রবি শস্যের উৎপাদন যদি ব্যাহত হয় তবে গোটা বাঙালী সমাজকে খাদ্য সঙ্কটে পড়তে হয়। আর তখনই বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানীসহ বিভিন্ন শাকসবজি আমদানী করে সঙ্কটের সমাধান করতে হয়



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ