Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব

নিজস্ব মেধা ও ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখতে নারীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নিজস্ব মেধা শক্তি ও ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখার জন্য নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী ও পুরুষ উভয়ে মিলেই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে। নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের সকল নারী-পুরুষ দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করবে। মেয়েদেরকেও সবসময় এটা ভাবতে হবে যার যে মেধা, যার যে শক্তি সে যেন সেটাকে বিকশিত করে।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া দিবস ও রোকেয়া পদক-২০১৭ বিতরণ উপলক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই চলতে হবে। সেটা নিজেদের উদ্যোগে নিতে হবে, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়। চলার পথে নানা বাধা থাকে, বাধা আসবেই। সেই বাধাকে অতিক্রম করে আমাদের নারীদের এগিয়ে যেতে হবে। মা-বোনদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, সকলের উচিত আমাদের সমাজে যারা একেবারে অবহেলিত জনগোষ্ঠী তাঁদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা এবং তাদের সহযোগিতা করা। সকলে মিলে কাজ করলে নিশ্চয়ই এই সমাজ গড়ে উঠবে।
নারীর ক্ষমতায়ণ ও উন্নয়নে সরকারের ব্যাপক কার্যক্রমের সাফল্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি এনেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশ শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর আমার সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর এবং পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সরকারে বর্তমানে ১২ হাজার ৮শ ২৮ জন নির্বাচিত মহিলা সদস্য দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত রয়েছে এবং স্থানীয় সরকারের অন্তত ৫টি কমিটিতে তারা চেয়ারপার্সনের দায়িত্বে রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। মহিলা শিক্ষিকার সংখ্যা শতকরা ৬০ভাগে উন্নীত হয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন করেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ বেতনসহ ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বর্ধিত করা হয়েছে। সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক এবং জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০ করা হয়েছে।
মহিলা উদ্যোক্তারা পুরুষদের থেকে ৫ থেকে ৬ শতাংশ কম সুদে ঋণ পাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করেছে। ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল থেকে গার্মেন্টসে কর্মরত দুগ্ধদায়ী ও গর্ভবতী মা’কেও ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ওয়ান স্টপ সেন্টারের ভূমিকা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) সেপ্টেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮শ’ ৮৮ জন নারীকে সেবা প্রদান করেছে। ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল জানুয়ারি ২০১৩ সাল হতে সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১শ’ ৭৯ জন নির্যাতনের শিকার নারীকে সহায়তা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিধবা ও নিগৃহিত মহিলা ভাতা প্রাপ্তদের সংখ্যা ১০ দশমিক ১২ লাখ থেকে ১১ দশমিক ১৩ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। সন্তান সম্ভাবা ও ধাত্রী মায়ের ভাতা ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নারীদের আলোক বর্তিকা হাতে পথ দেখানো নারী মুক্তির অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের এক নেপথ্য কারিগর তার মাতা বেগম মুজিবের সাহসী ভুমিকার কথাও তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মায়ের একটা দৃঢ়চেতা মনোভাব ছিল। সময়োচিত সিদ্ধান্ত দেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। আমার মা রাজনীতিতে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, বাবার পাশেই সব সময় থেকেছেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় ৬ মাস বাবার কোন খোঁজ পাইনি । সে সময় মামলার যেদিন শুনানি সেদিনই তার দেখা পাই। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আইয়ুব খানের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণের কথা বলেছিলেন। কিন্তুু আমার মা বললেন না, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আলোচনার জন্য যাবেন না। সে সময় ক্ষুদ্ধ নেতারা বলছিলেন- তুমি কেমন মেয়ে হে বাবার মুক্তি চাওনা, তোমার মাতো বিধবা হবেন। তিনি বলেন, মা-ই তখন সেসব নেতাদেরকে বলেছেন এবং তাকে অভয় দিয়েছেন নিশ্চয়ই তোমার বাবা ফিরে আসবে, এতবড় অন্যায় কখনো হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আজ আড়াই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে পৃথিবীতে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইউনেস্কো তাদের ওয়ার্ল্ড মেমোরি রেজিস্টারে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে একে অর্ন্তভুক্ত করেছে। সেদিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সকাল থেকেই নানাজনে নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন এটা বলতে হবে, ওটা না বললে হবে না, পরামর্শের কাগজের বস্তা জমা হচ্ছে। কিন্তু তার মা ভাষণ দেয়ার কিছু আগে বঙ্গবন্ধুকে একটু বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ করে দেন এবং একটি আলাদা ঘরে নিয়ে বলেন, ‘তুমি জান কি বলতে হবে। এই বাংলার মানুষের জন্য তুমি আজীবন সংগ্রাম করেছো, তোমার সামনে লাঠি হাতে জনগণ, পেছনে পাকিস্তানীদের উদ্যত বন্দুক। তাই তুমি জান তোমাকে কি বলতে হবে। কারো পরামর্শ শোনার দরকার নেই।
এরপর সমগ্র বিশ্ব দেখেছে কোন কাগজ ছাড়া বঙ্গবন্ধু উপস্থিতভাবে সেই ভাষণ দিয়ে সমগ্র দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
শেখ হাসিনা ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের কালোরাতের ঘটনা উল্লেখ করে বলেণ, সিঁড়ির ওপর বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে যান এবং সৈনিকরা তখন তাকে অন্যত্র নিয়ে যাবার উদ্যোগ নিলে তিনি বলেন, তিনি জাতির পিতাকে এখানে ফেলে রেখে কোথাও যাবেন না। বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে তিনি বলেন, তার মা বলেছিলেন-‘তোমরা তাকে (বঙ্গবন্ধু) গুলি করে মেরেছো আমাকেও গুলি করে মারো, আমি কোথাও যাব না।’
জাতির জনকের কন্যা বলেন, ‘আমার মা অন্য সবার মতো সেদিন কিন্তুু নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুফল যেন প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌছতে পারে এবং জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন-ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। সেই সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, রোকেয়া দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
এ বছর বেগম রোকেয়া পদক প্রাপ্তদের মধ্য থেকে অনুভুতি প্রকাশ করেন মাজেদা শওকত আলী।
এবছর পাঁচ জনকে বেগম রোকেয়া পদক ২০১৭-তে ভুষিত করা হয়। তারা হচ্ছেন-সংগঠক মাজেদা শওকত আলী, মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ (মরনোত্তর) চিত্রশিল্পী সুরাইয়া রহমান, লেখক শোভা রানী ত্রিপূরা এবং সমাজকর্মী মাসুদা ফারুক রত্মা।



 

Show all comments
  • আরফান ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৫:৪৩ এএম says : 0
    একদম ঠিক কথা
    Total Reply(0) Reply
  • Mehedi Hasan ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৩৮ পিএম says : 0
    ইসলাম নারীদেরকে দিয়েছে উচ্চ সম্মান আর ইসলামের সুশীতল ছায়াতেই একজন নারী সবচেয়ে বেশী নিরাপদ।আর বুদ্ধিমতী ও মর্যাদাবান নারীরাই তা অনুসরণ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • ZaYed ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৪১ পিএম says : 0
    নারী ও পুরুষ যে একে অন্যের পরিপূরক সেটাই আজ নারী আন্দোলনের জন্য সবাই ভুলতে বসেছে। মনে হচ্ছে যেন পুরুষ কোন সময়ই নারীর সম্মান ও প্রাপ্য মযার্দা দেয় নাই
    Total Reply(0) Reply
  • নাসির ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৩ পিএম says : 0
    চাকরিতে, পড়াশুনায় এবং পারিবারিক যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার নারীকে দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Merajul Islam ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৪ পিএম says : 0
    নারীদের সম্মান নারীরা ই জানেন না, তবে মা হবার পর উপলন্ধি করতে শেখে আল্লাহ কি মর্যাদা তাদের দিয়েছেন?
    Total Reply(0) Reply
  • farjana ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৫ পিএম says : 0
    অামি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, অামাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যে কোন বড় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্তকে কেন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ