পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সমর্থন নেই ইসরাইলে কাজ করা বেশিরভাগ মার্কিন দূতের
বিক্ষোভ-সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর। জেরুজালেমকে ইসরাইলি রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভে ইসরাইলি বাহিনী বলপ্রয়োগ করলে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। শুধু গাজা উপত্যকাতেই ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত দুইজন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫০ জন।
গতকাল জুমা নামাজের পর জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদের বাইরে এবং গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মুসল্লি। পশ্চিম তীরের হেবরন, বেথেলহেম, রামাল্লাসহ পুরো ফিলিস্তিনজুড়েই এমন বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব বিক্ষোভে ইসরাইলি বাহিনী বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ইসরাইলি বাহিনীর কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটের জবাবে পাল্টা পাথর নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরা। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ-বিক্ষোভ ঠেকাতে পশ্চিম তীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরাইল। রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয় বিপুল সংখ্যক মানুষ। এ সময় তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুতুল পোড়ায়।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে নিক্ষেপ করা একটি রকেট ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে বিস্ফোরিত হয়েছে। জবাবে ইসরাইলি ট্যাংক ও বিমান থেকে গাজায় হামলা চালানো হয়েছে। তুরস্কের ইস্তানবুল শহরে একটি মসজিদের বাইরে সমবেত হন তিন হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী। এ সময় তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলবিরোধী নানা সেøাগান দেন। রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের অন্যান্য শহরেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হাজার হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন। ফিলিস্তিনিদের একটি শরণার্থী শিবিরের কাছের রাস্তায় পাঁচ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী জড়ো হন।
ইরান, জর্ডান, মিসর, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় মার্কিন দূতাবাস এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেরুজালেমকে রক্ষার নতুন ইন্তিফাদার ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাস।
এদিকে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির খবর বেশি সময় ধরে প্রচার না করতে সউদী আরবের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছে সউদী রয়েল কোর্ট। দেশটির রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের সম্পাদকদের কাছে এ সংক্রান্ত নোটিস পাঠানো হয়েছে। জর্ডানে অবস্থিত সউদী আরব ও ইসরাইলের দূতাবাস থেকে দেশ দুইটির নাগরিকদের ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জর্ডানে আয়োজিত কোনও বিক্ষোভে অংশ না নিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সমর্থন নেই ইসরাইলে কাজ করা বেশিরভাগ মার্কিন দূতের
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের পাশাপাশি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতদেরও বেশিরভাগেরই সমর্থন পাচ্ছেন না ট্রাম্প। ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে কথা বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এসকল কূটনীতিকদের একটা বড় অংশ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। সাবেক ১১ জন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৯ জনই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
৬ ডিসেম্বর বুধবার জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরাইলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি। এরপর বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কেবল আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় নয় ইসরাইলে বিভিন্ন সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ব্যক্তিদের অনেকেও ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ বুশের প্রশাসনের অধীনে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন ড্যানিয়েল কুর্টজার। তিনি বলেন, ‘কূটনৈতিকভাবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার দিক থেকে এ সিদ্ধান্তের অনেক নেতিবাচক দিক আছে। এর মধ্যে কোনও ইতিবাচকতা নেই। এ সিদ্ধান্তের সমর্থক ইসরাইলি সরকারকে বাদ দিয়ে বলতে গেলে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা আবারও একা হয়ে পড়েছি। ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট যে ভূমিকা পালনের কথা বলেন আমরা সেখান থেকে এখন নিজেরাই নিজেদেরকে সরিয়ে ফেলছি।’
কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ অঞ্চলটিতে আরও বেশি সহিংসতা তৈরি করবে। তেমনই একজন রিচার্ড জোনস। তিনিও বুশ প্রশাসনের অদীনে ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতির প্রশ্নে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন রিচার্ড। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপের কারণে ইসরাইল ও অঞ্চলটিতে যে প্রাণহানি হবে সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা নিজেদের কর্মকাÐকে ন্যায্য প্রমাণ করতে এ স্বীকৃতিকে ব্যবহার করবে।’
অন্য যেসব মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রাম্পের সিদ্দান্তের বিরোধিতা করেছেন তারা হলেন-প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসনের অধীনে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালনকারী উইলিয়াম আন্দ্রিয়াস ব্রাউন, ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী উইলিয়াম ক্যাল্ডওয়েল হ্যারপ, ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা এডওয়ার্ড ডিজেরেজিয়ান, রিগ্যান প্রশাসনের অধীনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী থমাস পিকেরিং এবং বুশ ও ওবামা প্রশাসনের অধীনে দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত জেমস কুনিংহাম।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, কয়েকজন রাষ্ট্রদূত জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে তারা মনে করছেন, শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কিংবা ওই প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে ইসরাইল থেকে সুবিধা পাওয়ার একটি উপায় হিসেবে এ স্বীকৃতি ঘোষণা করা উচিত ছিল।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের অধীনে ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইসরাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ড্যানিয়েল শাপিরো। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, ‘জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী এবং একে এভাকে স্বীকৃতি দেওয়াটা যথার্থ। দেদিক থেকে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে বাস্তবতাকে স্বীকৃতি প্রদানের এ পদক্ষেপ দারুণ। এক্ষেত্রে যে সুযোগটি হাতছাড়া হয়েছে তাহলো আমাদের বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্য পূরণের দৃষ্টিকোণ থেকে এ সিদ্ধান্তটি সাজানো হয়নি। আমাদের সেই কৌশলগত লক্ষ্য হলো দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান। আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল, আরও স্বচ্ছতার প্রয়োজন ছিল; যা ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমের জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষার অংশ হিসেবে আশা করতে পারে।’
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক নগরী জেরুজালেমকে নিজের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এই শহরেই মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদ অবস্থিত। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে এই নগরী দখল করেছিল তেল আবিব।
জেরুজালেম পবিত্র ভূমি হিসেবে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়ের কাছেই গণ্য। এর দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশের দ্বন্দ্বও বহু পুরোনো। ইসরাইল সব সময়ই জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে, পাশাপাশি পূর্ব জেরুজালেম ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হবে বলে দেশটির নেতারা বলে আসছেন। এই অবস্থায় ট্রাম্পের এ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন সউদী আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। সূত্র : সূত্র: ডয়চে ভেলে, মিডল ইস্ট মনিটর, ইন্ডিপেনডেন্ট, এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।