Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৮০ বছরের ধারাবাহিক কর্মকান্ড ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন পার করছে সেরা সময়

পীর-মাশায়েখদের দোয়া : অরাজনৈতিক চরিত্রই সাফল্যের কারণ

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বিশেষ সংবাদদাতা, বগুড়া : তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর বাংলা ও আসাম অঞ্চলের কিছু আধ্যাত্মিক সাধক, পীর-মাশায়েখ এবং ওলামায়ে কেরাম সবরকম রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসমুক্ত একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৩৭ সালে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার অত্যল্প সময়ের মধ্যেই ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশদের বিদায়, পাকিস্তান ও ভারত রাষ্ট্রের অভ্যুদয় এবং আরো পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পরও সংগঠনটি তার অরাজনৈতিক চরিত্র ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সেই সংগঠনটির নাম বর্তমানে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন, যার সরল বাংলা অর্থ হলোÑ বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন।
ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ এক দূরদর্শী ও যৌথ সিদ্ধান্তে সংগঠনের সভাপতি মনোনয়নসহ-এর সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করেন, দেশে ও দেশের বাইরের গÐি পেরিয়ে বহুল পরিচিত আলেম, সাবেক মন্ত্রী, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মগফুর মাও: আলহাজ এম এ মান্নান হুজুরের হাতে। যে উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যকে সামনে রেখে মরহুম মাওলানা মান্নান হুজুরের হাতে সংগঠনটির পরিচালনা ভার অর্পণ করা হয়, আমৃত্যু হুজুর সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে গেছেন এবং সফলও হয়েছেন, এ কথা আজ দলমত নির্বিশেষে স্বীকার করেন সবাই ।
জীবৎকালে যারা মাওলানা মরহুম মান্নান হুজুরের বড় মাপের সমালোচক ছিলেন, তারাও আজ স্বীকার করেন যে, হুজুর শহীদ জিয়া ও এরশাদ সরকারের মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করলেও তিনি নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু না করে মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন-ভাতার উন্নয়নেই কাজ করে যান। মরহুম মাওলানা মান্নান হুজুরের জীবৎকালেই জমিয়াতুল মোদার্রেছীন দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম শিক্ষক সংগঠনে পরিণত হলেও এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চারদলীয় জোট গঠন এবং নির্বাচনে চারদলের ভ‚মিধস বিজয়ে নিঃস্বার্থভাবে হুজুরের প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বিরাট অবদান থাকলেও ক্ষমতাসীনরা কিছুদিনের মধ্যেই চোখ উল্টে ফেলে। কোনো সরকারের কাছে মান্নান হুজুর, তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব পত্রিকার সুযোগ্য সম্পাদক জনাব আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেবের কিছু চাওয়া বা পাওয়ার প্রত্যাশা অকল্পণীয় হলেও অজ্ঞাত কারণে ইসলামি মূল্যবোধের সরকার দাবিদার সরকার মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে এগিয়ে আসার বদলে পিছিয়ে যায়। পাশাপাশি চারদলীয় জোট সরকারের বৃহত্তম শরিক দলটি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনকে ভেঙে দুই টুকরা করার সব চেষ্টাই করে। যা কিছুটা হলেও জীবনের শেষ প্রান্তে মরহুম মান্নান হুজুরের মনোবেদনার কারণ হয়ে ওঠে।
মরহুম মান্নান হুজুরের ইন্তেকালের কিছু আগে যখন এই সংগঠনের দায়িত্বভার তাঁরই সুযোগ্য পুত্র ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের কাঁধে তুলে দেয়া হয়, অনেকের কাছেই এটি বিস্ময় বোধের সৃষ্টি করে। বলাবলি করা হয়, উনি তো মাদরাসা অঙ্গনের কেউ নন। কিন্তু বিবিধ প্রশ্নের মধ্যেই মাওলানা মান্নান হুজুরের ইন্তেকালের পরে ঠান্ডা মাথায় শক্ত করে সংগঠনের হাল ধরেন জনাব বাহাউদ্দীন। এই সংগঠনের দুঃসময়ের কান্ডারী বাহাউদ্দীনের পাশে এসে দাঁড়ান সংগঠনের মহাসচিব আলহাজ অধ্যক্ষ মাও: শাব্বির আহমদ মোমতাজী। তিনি সংগঠনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদকের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের জেলায়-উপজেলায় অক্লান্তভাবে ছুটে বেরিয়েছেন। দেশে-বিদেশের নানা ব্যস্ততার মাঝেও সংগঠনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ বাহাউদ্দীনও বিদ্যুতের গতিতে চষে বেরিয়েছেন সারা দেশ।
যার ফলশ্রæতিতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আজ প্রতিষ্ঠাকালের পর থেকে সবচেয়ে সুসংগঠিত, সুসংহত একক ও বৃহত্তম সংগঠনের স্বীকৃতি পেয়েছে। গত এক দশকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন, যুক্তিসঙ্গত দাবি-দাওয়া উত্থাপন, সরকারের সঠিক জায়গায় লবিং ইত্যাদির মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষার ও শিক্ষকদের উন্নয়নে যা আদায় করা সম্ভব হয়েছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর বলেই এখন মোদার্রেছীনের সমাবেশগুলোতে বলছেন উপকারভোগী শিক্ষকরাই। মোদার্রেছীনের সাম্প্রতিক সমাবেশগুলোতে অতি সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ সরকারের অপরাপর প্রভাবশালীরা বলছেন, ‘বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোতে জঙ্গিবাদের আবাদ হয় না, সেগুলো জঙ্গি তৈরির কারখানাও নয়।’ ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন যেভাবে আন্দোলন করেছে , যেভাবে সে দাবি আদায় করেছে, সে ঘোর এখনো কাটেনি বলে মনে করেন মাদরাসা সেক্টরের অনেকেই।
গত ২১ নভেম্বরে উত্তর জনপদের রংপুর দিয়ে সংগঠনের অঞ্চলভিত্তিক যে সমাবেশ শুরু হয়েছে, ২৫ নভেম্বর যশোরে-খুলনা অঞ্চলের, ২৭ নভেম্বর সিলেটে, ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে, ৩০ নভেম্বরে কুমিল্লায়, ৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ ও ৭ ডিসেম্বর রাজশাহী অঞ্চলের সমাবেশ হয়ে গেল। রাজশাহীর সমাবেশে সংগঠনের মহাসচিব মাও: শাব্বীর আহম্মেদ মোমতাজী সংক্ষেপে কিন্তু সাবলীলভাবে বিবরণ দিয়েছেন সংগঠনের ৮০ বছরের ইতিহাসের। সেখানে সংগঠনের বর্তমান সভাপতির সঠিক দিকনির্দেশনায় কিভাবে সংগঠন এগিয়ে গেছে সেটা যেমন বর্ণনা দিয়েছেন, মাও: মোমতাজী রাজশাহীর সমাবেশে বলেছেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন শুধু মাদরাসা সেক্টরের দাবি-দাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি প্রকৃতিক দুর্যোগ আইলাসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে, বিপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশেও দাঁড়িয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সংগঠনের সভাপতি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন ও তাঁর একান্ত সুহৃদ ও মহাসচিবের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন।
আগামী ১০ ডিসেম্বর বরিশালে, ১১ ডিসেম্বর ফরিদপুরে এবং সবেেশষে ১২ ডিসেম্বর রাজধানীতে ঢাকা অঞ্চলে জমিয়তের সমাবেশে উচ্চকণ্ঠে ধ্বনিত হবে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও ইসলামের বিরুদ্ধে যাবতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আওয়াজ।
যে বুলন্দ আওয়াজের কাছে পরাভুত হতে বাধ্য ইসলামের, মুসলমানের ও এ দেশের মাদরাসা শিক্ষাবিরোধীদের সব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র! এই অভিমত এ দেশের হাজারো মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক তথা সবারই!



 

Show all comments
  • তারেক মাহমুদ ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৪৭ এএম says : 0
    জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সুযোগ্য সভাপতি দেশের বরেণ্য সাংবাদিক ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে বলা যায় মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা শক্ত ভীতের উপর দাঁড়িয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মিলন ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৪৮ এএম says : 0
    দেশ ও ইসলামের জন্য বংশ পরম্পরায় জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি দেশের বরেণ্য সাংবাদিক ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের এই প্রচেষ্টা অবহ্যত থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা
    Total Reply(0) Reply
  • খাইরুল ইসলাম ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫১ এএম says : 0
    আমরা বাহাউদ্দিন সাহেবের কর্মকাণ্ড দেখেছি এবং ওনাকে ধন্যবাদ দিয়েছি। আমি অনেক আগেই বলেছিলাম তিনি উদীয়মান ইসলামিক নেতা। আল্লাহ্‌ বাহাউদ্দিন সাহেবকে সুস্বাস্থ দান করুন এবং ওনাকে দীর্ঘায়ু দান করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫২ এএম says : 0
    বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আপনারা যে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন এজন্য আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম জাযাহ দান করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • কাসেম ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৪ এএম says : 0
    এটা একটা অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন। দেশের ভিতর থেকে গড়ে ওঠা এবং সমাজের সাথে মিশে থাকা একটি সংগঠন। এই সংগঠন কারো তাঁবেদারী করে না। শুরু থেকেই এই সংগঠন মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এজন্য এটাকে আমরা খুব পছন্দ করি
    Total Reply(0) Reply
  • আরাফাত ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রতিষ্ঠাতা আলেম কুল শিরমনি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা এম.এ মান্নান (রহঃ)র বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এ দেশের বঞ্চিত, অবহেলিত মাদরাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য যে সব সুযোগ-সুবিধা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মাধ্যমে এনে দিয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
    Total Reply(0) Reply
  • বাদশা ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫৭ এএম says : 0
    সমগ্র বাংলাদেশের মাদরাসার শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পতাকাতলে সমবেত হয়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তবে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করে আমাদেরকে নানানভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমান সুযোগ্য সভাপতির বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রেখে কোন প্রকার ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • কবির ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:৪৭ পিএম says : 0
    আল্লাহ সাবেক মন্ত্রী, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মগফুর মাও: আলহাজ এম এ মান্নান হুজুরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • মিলন ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:৪৮ পিএম says : 0
    বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Faruk ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:৪৮ পিএম says : 0
    Go ahead Jomiyat
    Total Reply(0) Reply
  • Al Mamun ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫০ পিএম says : 0
    ai silsilah kiyamot porjonto jari thakuk
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ