Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গণতান্ত্রিক নিয়মে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে -প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো ইচ্ছা নেই : নির্বাচন বর্জন করে আবার আন্দোলনে গেলে পরিণতি ভালো হবে না
গণতান্ত্রিক নিয়মে দেশে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আগাম নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের এমন কোনো দৈন্যদশা হয়নি যে, এখনই আগাম নির্বাচন দিতে হবে। আমরা উন্নয়নমূলক কাজগুলো করে যাচ্ছি। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাই।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। গত ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর কম্বোডিয়ায় শেখ হাসিনার সরকারী সফর বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গতকাল বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া এ সংবাদ সম্মেলন শেষ হয় বিকাল ৫টার দিকে। সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকগণ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সরকার আগাম নির্বাচনের বিষয়ে কিছু ভাবছে কি না, এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে যে কোনো সময় ইলেকশন হতে পারে, এমন কোনো দৈন্যদশায় পরিনি যে আগাম ইলেকশন দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য প্রশ্নের মধ্যে গুরুত্ব পায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের কোনো উদ্যোগের বিষয়টি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে তাদের সঙ্গে আলোচনা বা বিশেষ কোনো উদ্যোগের সম্ভাবনা বিষয়ে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন চলার মধ্যেই হাস্যজ্জল প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে (বিএনপি) কি বরণ ডালা পাঠাতে হবে? মনে হচ্ছে বরণ ডালা পাঠাতে হবে। তিনি বলেন, এখানে মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি। কোন পার্টি ইলেকশন করবে, কোন পার্টি করবে না, এটা সম্পূর্ণ তার পার্টির সিদ্ধান্ত। তারা যদি নির্বাচনে আসতে চায়, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আর যদি করতে না চায়, এটাও তাদের পার্টির সিদ্ধান্ত। কাজেই এখানে আমাদের তো কোনো কিছু বলার দরকার নাই। তিনি আরও বলেন, তারা যদি নির্বাচন করতে চায়, চলে আসবে। যদি করতে না চায় তাহলে করবে না। কাজেই এত সাধাসাধির দরকারটা কী এখানে?
২০১৪ সালের মতো ‘ভুল’ বিএনপি এবার করবে না বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গতবার যা করেছে, এবার তা করবে না। এবার নাকে খত দিয়ে আসবে, সেটাই বলে দিলাম।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করার বিষয়টি এবং ২০১৫ সালে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে শান্তনা দিতে তার গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে আনেন।
পাল্টা প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে আলোচনা? আবার প্রশ্নটা করেন, কার সঙ্গে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ফোন করেছিলাম, তারপর যে ঝাড়িটা খেলাম, আমার ও রকম অপমানিত হওয়ার আর ইচ্ছা নাই। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, যাদের মধ্যে ভদ্রতা জ্ঞান নাই, তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
কোকোর মৃত্যুর পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ঢুকতে না পারার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর যাই হই, আমি তো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমার অফিস ফোন করেছে, যোগাযোগ করেছে, সময় ঠিক করেছে আমি গেছি, দরজার কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তালা দিয়ে দিয়েছে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। তিনি আরও বলেন, আমি গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম মেইন গেট খোলা যাবে না, তালা দেয়া। আমি বললাম, ঠিক আছে, যেহেতু ছেলে হারা মা, একটু শান্তনা দেব। আমি ছোট গেট দিয়ে ঢুকব। কিন্তু যেতে পারিনি। কারণ সেটাতেও তালা দেয়া। ভেতরে বিএনপির সমস্ত নেতারা, বড় বড় নেতারাও ওখানে দাঁড়ানো। অথচ তারা আমাকে ঢুকতে দেয়নি।
তিনি বলেন, এই ধরনের ছোটলোকিপনা যারা করে, তাদের সঙ্গে কথা বলার কথা বলেন কোন মুখে? আমি জাতির পিতার মেয়ে বলেই গিয়েছিলাম, নইলে যাওয়ার কথা না।
বারবার আলোচনার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে সাংবাদিকরা জুলুম করছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে যতটা সহনশীল হতে হয়, চেষ্টা করেছি। তারপরও যখন এত অপমান, তখন কোন মুখে আপনারা বলেন? এক বাসায় গেলে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলে আপনারা যাবেন? কয়জন যাবেন? আমার ওপর কেন এত জুলুম করেন আপনারা?
এ সময় আগামী নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি আবারও আন্দোলনে গেলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, মানি লন্ডারিং করে সৌদিকে এত সম্পদ, এগুলোরও বিচার হবে। এই বিচার থেকে বাঁচার জন্য যদি এবারও যদি জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর শুরু করে, এবার কিন্তু জনগণ ছাড়বে না। এবার জনগণই প্রতিরোধ করবে। জনগণকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারা, এটা কেউ বরদাশত করবে না।
২০২১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী। জাতির ওই গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে কোন ধরণের সরকার ক্ষমতায় খেতে চান দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চান সংসদে যেন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি থাকুক। জনগণের কল্যাণে যারা কাজ করে, যারা স্বাধীনতা ধারক-বাহক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা দেশকে গড়ে তুলতে চায়, তারাই ক্ষমতায় আসুক, তারাই পার্লামেন্টে আসুক। তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো যুদ্ধাপরাধী, কোনো খুনি, তাদের যেন জায়গা না হয়। তাহলে দেশটা আবার ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে পারবে, যারা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যাবে, যারা দেশকে আবার পেছন দিকে টানবে না, যারা সত্যিকার দেশের কল্যাণ চায়, তারাই নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করুক, তারাই পার্লামেন্টে আসুক। পার্লামেন্টে আর নোংরা কথা, খিস্তি-খেউর যেন না শুনতে হয়।
বর্তমান সংসদের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গত চারটা বছর পার্লামেন্টে কোনো অসভ্যতা নাই। নোংরামি নাই। আজেবাজে কথাবার্তা নাই। যে সমস্ত কথাবার্তা শুনলে কানে হাত দিয়ে থাকতে হয়, এ সমস্ত কথাবার্তা আমরা শুনি নাই। একটা ভদ্র পরিবেশ, একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকুক, সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি পত্রিকা পড়ে দেশ চালাই না। দেশটাকে উন্নত করবো। সেই লক্ষ্য নিয়েই দেশ চালাচ্ছি। তারপর জনগণের ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা ভোট দেবে। কারণ আমি শ্লোগান দিয়েছিলাম আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। তিনি বলেন, দেশকে ভালোবেসে দেশ চালাই। বাবার কাছ থেকে যা শিখেছি, দেশের উন্নয়ন কিভাবে করতে হয়, সে চিন্তা করেই দেশ চালাচ্ছি। সেজন্য সফলতাও আসে দেশের। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তো এই মর্যাদাটা ধরে রাখবেন, না মানি লন্ডারিং, ওই শপিং মলের মালিক, নাকি খুন-খারাবি করা, বোমাবাজি, মানুষ খুন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা তাদেরকে নেবেন। এটা তো জনগণের ওপর নির্ভর করে। এখানে আমার কোন কিছুই করার নাই। আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছি। দেশটাকে উন্নত করবো সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেশে-বিদেশে যান। এক সময় গেলে কি হতো, বাংলাদেশ শুনলে মনে করতো ভিক্ষা চাইতে আসছে, এখন সমীহ করে চলে। আগে যেখানে ছিল ভিক্ষুক জাতি, এখন উন্নয়নের রোল মডেল। অন্তত এই জায়গাটায় আপনাদেরকে এনে দিতে পেরেছি। বাংলাদেশটাকে এই জায়গাটায় আনতে পেরেছি। এটা হয়তো সবাই উপলব্দি করবেন না, করেনও না। আর পত্রিকা মানে হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে পত্রিকা চলেই না। তো পত্রিকা চালানোর ব্যবসাটাই মনে আছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সেটা চোখে দেখেও দেখেন না। এতে তো আমাদের কিছু করার নাই।
সউদী আরবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সম্পদের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ না থাকার রহস্য কী- সংবাদ সম্মেলনে তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল প্রধানমন্ত্রীকে করা প্রশ্নে উল্লেখ করেন-বিদেশের টেলিভিশনে খবর বের হয়েছে সউদী আরবে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পাচার হয়েছে, তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দু’জন প্রধানমন্ত্রীর নাম রয়েছে। এরমধ্যে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির নাম এসেছে। আপনার সরকার এ বিষয়ে তদন্ত করবে কিনা?
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সউদী আরবে যে খালেদা জিয়ার বিশাল সম্পদ, শপিংমল ইত্যাদি পাওয়া গেছে এটা তো আমরা কিছু করেনি। এটা তো বিদেশ থেকেই সংবাদ এসেছে। তবে আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি, এখানে তো অনেকে সংবাদপত্রের মালিক, সম্পাদক রয়েছেন, বিভিন্ন চ্যানেলও আছেন। কই আপনাদের তো এটা নিয়ে নিউজ দেয়ার বিষয়ে কোনও আগ্রহ দেখলাম না। রহস্যটা কি? আপনার কী ওখানে বিনা পয়সায় শপিং করার কোনও কার্ড পেয়েছেন? না হলে এ সংবাদটাও আপনারা দিতে পারলেন না।
তিনি আরও বলেন, আচ্ছা আমি জিজ্ঞেস করি, মনে করেন যদি এই ধরনের সংবাদ যদি আমার বা আমার পরিবারের বিষয়ে হতো আপনারা তো হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। আমাদের অপরাধ কী, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আর খালেদা জিয়া সবকিছুতে মাফ পায় কেন? যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে, জিয়াউর রহমান জাতির জনকের খুনিদের মন্ত্রী বানিয়েছে, মদদ দিয়েছে সেজন্যই কী তাদের সাতখুন মাফ? এ প্রশ্ন যেহেতু আমার মনে এসেছে সেহেতু আপনাদের কাছে প্রশ্নটা করলাম। আমি তো কোনও পত্রিকাকে দেখলাম না এটা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করতে, বিষয়টা কী?
এ সময় তিনি আরও বলেন, হ্যাঁ, দুইটা মাত্র চ্যানেল এটা নিয়ে নিউজ দিয়েছে, আর দুইটা মাত্র পত্রিকা নিউজ করেছে। আর বাকি পত্রিকাগুলো তন্ন তন্ন করে দেখতে হয়, নিউজ পাওয়া যায় না। এটা বাস্তবতা। কেনও এত দুর্বলতা কিসের জন্য ? এই যে টাকা পাচার, মানি লন্ডারিং। এটা যে খালেদা জিয়ার ছেলেরা করেছে এটা তো আমরা বের করিনি। একটা বেরিয়েছে আমেরিকা থেকে, আরেকটা সিঙ্গাপুর থেকে। টাকা আমরা কিছু ফেরত এনেছিলাম। এগুলো তো মিথ্যা না। আর সৌদিতে যেসব সম্পদ পাওয়া গেছে, আপনাদের মনে রাখা উচিত। একবার সংবাদ হলো সৌদিতে খালেদা জিয়ার ১৫০টি স্যুটকেস নিয়ে যাওয়া। তখন প্রশ্ন উঠলো স্যুটকেসে কী আছে? তো, সেটা আপনারা সবাই ভুলে গেলেন, এটাই আমার প্রশ্ন। এর মধ্যে অনেকগুলো পত্রিকা আমি অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পত্রিকাগুলোর এতটুকু সৎসাহস হলো না কেন এই নিউজগুলো দেয়ার?
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনও প্রাইভেট চ্যানেল ছিলো না, একমাত্র বিটিভি ছিলো। কোনও সরকার সাহস পায়নি, একমাত্র আমি অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। ৪৪টা চ্যানেলের মধ্যে অন্তত ২৩টা চ্যানেল এখনও চলছে। মাত্র ২টা চ্যানেল নিউজ দিয়েছে, বাকিরা মুখবন্ধ। সবার মুখে হয়তো সেরকম কিছু রসগোল্লা ঢুকিয়ে দিয়েছে, এজন্য সবাই মুখবন্ধ করে রেখেছে। আপনাদের প্রশ্নের আর কী জবাব দিবো বলেন আমাকে? এতটুকু সৎসাহস যদি না থাকে তবে আর কি উত্তর দেব, উত্তর দেয়ার কিছু আছে বলেও মনে করি না।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উচিৎ, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।
মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া বলেন, সরকার জিয়া পরিবারের সঙ্গে বৈরী আচরণ করলেও তিনি শেখ হাসিনাকে ‘ক্ষমা করে দিয়েছেন’, প্রতিহিংসামূলক কিছুই তিনি করবেন না।
বিএনপি নেত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, উনি কিসের ক্ষমা করলেন সেটা হল প্রশ্ন। ২১ আগস্ট আমি যে বেঁচে গিয়েছি সেই কথা বলছেন? ক্ষমা করেছেন না চাইছেন, সেটা স্পষ্ট না। তিনি বলেন, আমি কোনো অপরাধ করেছি নাকি যে আমাকে ক্ষমা করতে হবে? বরং তার উচিৎ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি। বরং খালেদা জিয়ার সরকারই তার বিরুদ্ধে এক ডজনের মতো মামলা দিয়েছিল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অধিকাংশ মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েই হয়েছিল-সে প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কারা। সবাই উনার লোক। নয়জনকে টপকে সেনাপ্রধান করা হয়েছিল মঈন ইউ আহমেদকে। বিশ্ব ব্যাংক থেকে ফখরুদ্দীনকে এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করা হয়। আর ইয়াজউদ্দিনতো ওনার ইয়েস উদ্দিন। সবগুলো ওই আমলের মামলা।
সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ও প্রার্থী দেয়া না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর একটাই সব ফুল ফুটতে দিন। অনেকে প্রার্থী হতে চান, ভালো কথা। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। কেন সবাই প্রার্থী হতে পারবেন না? শত ফুল ফুুটবে। হোক না। শত ফুলের মধ্যে যেটা ভালো সব থেকে সুন্দর ফুল সেটা আমরা বেছে নেব। সময় এলে আপনারা দেখতে পারবেন। আর কীভাবে নেব সেটা সময়ই বলে দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্স, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অনেক মিত্র দেশের আহ্বান উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতির যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমার কাছে মনে হয় এটা ইসলামিক ওয়ার্ল্ডে কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না। কারণ এখানে জাতিসংঘের রেজুলেশন রয়েছে। রেজুলেশন অনুযায়ী কিন্তু পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। জাতিসংঘের রেজুলেশনকে এভাবে অগ্রাহ্য করা কিন্তু কেউ বোধ হয় মেনে নেবে না। এটা ফিলিস্তিনের বিষয়ে আমার বক্তব্য।
প্রধানমন্ত্রীর কম্বোডিয়ায় সরকারী সফর বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে উেেঠ আসে মিয়ানমারের সেনাবিহিনীর নির্যাতনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গও। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে আসিয়ান সদস্যরা। কেউ কেউ প্রকাশ্যে না বললেও চাপ দেয়া হচ্ছে। সবাই চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফিরে যাক। আমরাও তাই প্রত্যাশা করি।
বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল প্রধামন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কম্বোডিয়া সফরে আলোচনা হয়েছে কী না? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা সমর্থন পাচ্ছি। কম্বোডিয়ার প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দিয়েছেন-আসিয়ানে এ বিষয়ে কথা বলবেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশি দেশ হিসেবে আমি চাই মিয়ানমারের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশিসুলভ সম্পর্ক থাকুক। রোহিঙ্গাদের আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। অবশ্যই তাদের ফেরত নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সা¤প্রতিক কম্বোডিয়া সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে এই সফর দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও জোরদার করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ সফর বন্ধুপ্রতীম কম্বোডিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা সুদৃঢ় ও গভীরতর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এবং দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সহায়তা করার ব্যাপারে আমার অনুরোধে তিনি ইতিবাচক সাড়া দেন। তিনি আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন। তাছাড়া, ‘মেকং-গঙ্গা সহযোগিতা ফোরাম’-এ বাংলাদেশের যোগ দেয়ার ব্যাপারে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন।



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১৪ এএম says : 0
    জনগণেরও দাবি একটা সুষ্ঠ নির্বাচন
    Total Reply(0) Reply
  • MD Solaiman ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:১৬ পিএম says : 0
    দেশে কি গনতন্ত্র বলে কিছু আছে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ