পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদরাসার পাঠ্যপুস্তকে অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ : ২৪ লাখ বই বাতিল : ক্ষতি ১০ কোটি টাকা
মাদরাসার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এক শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি তার বিরুদ্ধে যাওয়ায় কোরআন শরীফের ১টি আয়াত বাতিল ঘোষণা করেছেন? শিক্ষক বললেন, একথা আপনি কোথায় শুনেছেন? অভিভাবক আর কথা বাড়ালেন না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক মহোদয় পড়লেন মহাদুশ্চিন্তায়। কোন বিষয়, কি কারণে এমন একটি অপপ্রচার হয়ে মানুষের মুখে উঠে যাচ্ছে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। বিষয়টি মাদরাসায় এসে তিনি তার সহকর্মীদের কাছে তুলে ধরে এই অপপ্রচার প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের কতবড় ক্ষতি করতে পারে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ও তাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করলেন।
জানা গেল, অপপ্রচারের সূত্র হচ্ছে একটি সংবাদ। জঙ্গীবাদ উসকে দেওয়া ও কোরআন-হাদীসের ভুল ব্যাখ্যার কথা বলে মাদরাসা বোর্ডের ২৪ লাখ পাঠ্যবই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর আকাইদ- ফিকাহ এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর কোরআন মাজীদ ও তাজভীদ এবং হাদীস শরিফ। এ চারটি পাঠ্যবই বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এনসিটিবি কে। এতে সরকারের ক্ষতি হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা মিডিয়াকে বলেন, ‘এনসিটিবি শুধু বই ছাপানোর কাজ করে। মাদরাসার কারিকুলাম সম্পূর্ণই মাদরাসা বোর্ড তৈরি করে দেয়। গত রবিবার আমাদের চিঠি দিয়েছে, চারটি বই পরিমার্জিত হবে। আমরা সেই অনুযায়ীই কাজ করছি। কোন কারণে পরিমার্জন করা হয়েছে তা আমরা জানি না।’ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর আরো অনেক বইয়ে অসংগতি রয়েছে। রয়েছে হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা। কিন্তু সব বই বাতিল করে নতুন করে ছাপাতে গেলে জানুয়ারী মাসে শিক্ষার্থীদের হাতে কোনোভাবেই বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। তাছাড়া, সরকারের গচ্চাও যাবে ৩০ কোটি টাকার মতো। তাই আপাতত যে ৪টি বইয়ে বেশী অসংগতি রয়েছে সেগুলিই বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক মাদরাসা সুপার, শিক্ষক নেতা মাওলানা নুরুল হক বলেন, যতদূর জানি ১৫ সালে প্রথম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজ তত্ত¡বধানে কিছু প্রভাবিত শিক্ষাবিদ ও অনুগত কর্মচারি দিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এবিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষকদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও দেশের খ্যাতিমান মাদরাসা শিক্ষা কারিকুলাম বিশেষজ্ঞগণ ইফা ডিজি কে অনধিকার চর্চা না করার অনুরোধ করেন। মাদরাসার মূল পাঠ্যসূচিতে কোনো অসংগতি থেকে থাকলে দেশের আলেমসমাজ ও প্রকৃত শিক্ষাবিদগণ তা দেখবেন। আর বাজারে প্রচলিত গাইড ও নোট বইয়ে কোনো অসংগতি থাকলে সে বিষয়ে মাদরাসা বোর্ড ও শিক্ষাবিদগণ দায়ী নন। সেসবের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিবে। এসব দেখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলেমদের সাথে নিয়ে কাজ করতে পারে। এরপরও অযাচিতভাবে ইফা ডিজি সরকারের অতি শুভাকাঙ্খি হতে গিয়ে এ কাজে সময় ও অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু শত বছরের মাদরাসা শিক্ষার ঐতিহ্য বিনাশী এই হস্তক্ষেপে মাদরাসা বোর্ড ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আর তা পারা সম্ভবও ছিলনা। কারণ, একজন আধুনিক শিক্ষিত ব্যক্তির অনুসন্ধান মাদরাসা কারিকুলামে ভুলত্রæটি বের করতে যথেষ্ট নয়। একে তার অনধিকার চর্চা ও সীমা অতিক্রম বলে অনেক নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষাবিদকেই তখন মন্তব্য করতে শোনা গেছে। তাছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে একটি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা মনে না করায় এবং মন্ত্রণালয়ের সাথে যুক্ত হাজার হাজার শিক্ষাবিদ আলেমের এ বিষয়ে আগ্রহ না থাকায় ডিজির তৈরি সুপারিশ মালা বাস্তবায়ন করেনি বলেও আমরা জানতে পারি। কেননা, ইসলামী শিক্ষাবিদ ও আলেমসমাজ যখন কোনো ব্যক্তি বা কমিটির মুখে শোনেন যে, যুগ যুগ ধরে আলেমরা হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করে এসেছেন, কোরআনের বিকৃত অনুবাদ করেছেন, জঙ্গীবাদ উসকে দিয়েছেন তখন তাদের আত্মমর্যাদায় লাগে। বিশেষ করে ইসলাম বিরোধী শত ঘটনা, পাঠ্যসূচীতে ইসলাম বিরোধী বিষয় অন্তভর্‚ক্তিকরন, আল্লাহ, রাসূল সা., আবু বকর, ওমর (রাযি.) বাদশা আলমগির ইত্যাদি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা সম্বলিত বিষয়াদি বাতিল করার ইস্যূতে তাকে কোনো কথা বলতে, ভ‚মিকা রাখতে বা ৯২ ভাগ মুসলমানের আবেগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা যায় না, এমন কোনো ব্যক্তি যখন এসব অপবাদ দেন। যখন এই ব্যক্তিটি বরং ইসলাম বিদ্বেষী শিবিরেই চেহারা দেখাতে বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও অতীতে তার এসব বাড়াবাড়ি পাত্তা পায়নি। বিশেষতঃ আলেমসমাজ এজন্যও উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, বর্তমান সময়ে ইসলামের দুষমনরা নানা অজুহাতে কোরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীসের কিছু অংশ বাতিল বা নিষিদ্ধ করার দাবী তুলছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশে এমনকি মিশর, জর্দান ও সৌদি আরবেও ইহুদিদের চাহিদা মতো কোরআন হাদীসের কিছু আয়াত ও ভাষ্য নিষিদ্ধের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। খ্রীষ্টান চিন্তাবিদদের প্রস্তাব মতো কোরআন হাদীসের কোনো কোনো ভাষ্যে পরিবর্তন আনার কথাও বাজারে চালু করা হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রের প্রতিচ্ছায়া বাংলাদেশেও পড়ছে কি না অথবা পড়ে থাকলে কাদের দ্বারা পড়ছে তা নিয়ে আলেম সমাজ কম উৎকণ্ঠিত ছিলেন না। এসব কারণেই ইফা ডিজির অতি উৎসাহ ও নানা ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম তারা সন্দেহের চোখে দেখে থাকেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বিষয়টিকে এসব কারণেই গুরুত্বসহ নেয়নি। কিন্তু সর্বশেষ তিনি এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে হয়। যে কারণে মানুষ বলার সুযোগ পাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী কোরআনের আয়াত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। যদিও এর কোনো বাস্তবতা নেই।
রাজধানীর বর্ষীয়ান আলেম ও খতীব মুফতী নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ধার্মিক পরিবারের সন্তান। নিজেও ধর্মপরায়ণ। আলীয়া মাদরাসার উন্নয়নে তার নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য। যতদূর জানি সফল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মাদরাসা শিক্ষকদের খুব কাছের মানুষ। আলীয়ার শিক্ষকদের একক ও বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতৃবৃন্দের সাথে তার রাতদিন উঠাবসা। এরপরও যখন আমাদের শুনতে হয় যে, কোনো কোনো আমলা প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট দেয় যে, যুগ যুগ ধরে আলেমরা কোরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করে এসেছেন। ইসলাম জঙ্গীবাদে উসকানি দেয়, তখন আমাদের মরে যেতে ইচ্ছে করে। বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদীরা ১৯০ বছর চেষ্টা করেও কোরআন-হাদীস থেকে ইসলামের অন্যতম ফরজ ইবাদত জিহাদকে আলাদা করতে পারেনি। বহু চেষ্টা করেও তারা পাঠ্যবই থেকে জিহাদ অংশ উচ্ছেদ করতে পারেনি। বর্তমানে কুখ্যাত জঙ্গীবাদের দোহাই দিয়ে ঘাপটি মেরে থাকা একদল ইসলাম বিদ্বেষী ও সরকারের ক্ষতিকারক বন্ধু এই অনৈসলামিক উদ্যোগটি গ্রহণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যা প্রথমত আল্লাহর দ্বীনের সাথে যুদ্ধ ঘোষনার শামিল দ্বিতীয়ত এতে সমাজে ব্যপক ভুল বোঝাবুঝি ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ফলত: আগামী নির্বাচনে মাদরাসা শিক্ষার জন্য বহু অবদান রাখা সত্তে¡ও প্রধানমন্ত্রীকে কোরআন-হাদীসের বিধান নিষিদ্ধ করা ও মনের মতো না হওয়ায় কোরআন-হাদীসের ভাষ্য বদলে দেওয়ার বদনামের ভাগী হতে হবে। অথচ তিনি কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়ে অনেক বড় একটি কাজ করেছেন। আমি বলতে চাই, জিহাদ শব্দটি কি একটি অপবিত্র শব্দ হয়ে গেল? দুনীতির বিরুদ্ধে জিহাদ, মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিহাদ এসব কথা কি প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে আর কোনোদিন বলবেন না? সরকারের কেউ বলবে না? তাহলে পাঠ্যবইয়ে জিহাদ শব্দটি থাকায় কেন ১০ কোটি টাকা পানিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে? ইফা ডিজিকে দেখাতে হবে কোন আয়াত বা হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা যুগ যুগ ধরে আলেমরা করেছেন? দার্শনিক ইকবাল বলেছিলেন, ‘এযুগের মানুষ কেমন নীতিহীন ও দুবৃত্ত হয়েছে চিন্তা করো, নিজেরা বদলে না বরং তারা কোরআন বদলে দেয়।’ শুনেছি, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনেক বড় এক কর্মকর্তাকে তার চাকুরির মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলে কোরআন-হাদীস বিরোধী এই নির্দেশ জারী করানো হয়েছে। ইফা ডিজি যদি বড় কোনো কর্মকর্তার সহায়তায় কোনো ইসলাম বিরোধী, আলেম বিদ্বেষী, মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংস মূলক কাজ করে থাকেন তাহলে তাদের পরিণতি কখনোই শুভ হবে না। আমি তাদের সুমতি কামনা করি। বিশেষ করে কোনো বড় আলেমের ও বিশেষজ্ঞ বুযুর্গ ব্যক্তির পরামর্শ ছাড়া এবং ময়দানে কাজ করা তার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, এমপি ও কর্মকর্তাদের মতামত ছাড়া তিনি যেন দুয়েকজন স্বার্থবাজ ব্যক্তির কথায় কোনো সিদ্ধান্ত না নেন এই অনুরোধ করবো। কেননা আগামী দিন তার জনগণের সামনে যেতে হবে। সর্বপোরি কোরআন-হাদীসের মালিক মহান আল্লাহর সামনেও তাকে হাজির হতে হবে। বর্তমান নাজুক সময়ে দেশের কোটি কোটি মাদরাসার শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, পীর মাশায়েখ, আলেম উলামা, ধর্মপ্রাণ মানুষ একটি ভুল মেসেজ পায় এমন কোনো কাজ করা মোটেও ঠিক হবে না। লক্ষ্য রাখতে হবে, নিজের আখের গোছাতে কেউ যেন তার ইমেজ নষ্ট করতে না পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।