Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিঠিপত্র

| প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাদ্রাসা শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বৈষম্য
একজন আদর্শ মানুষ ও দক্ষ সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়তে তুলতে হলে পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই। আর পড়াশোনা ছাড়া যেহেতু জ্ঞানার্জন করা কঠিন তাই ইসলাম ধর্মে জ্ঞানার্জনের ওপর ব্যাপক জোর দেয়া হয়েছে।
পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দেয়ার কারণেই নবী করীম (সা.) এর প্রতি মহান আল­াহ প্রথম যে ওহিটি নাজিল করেছেন, তা শুরু হয়েছে “ইকরা” শব্দটি দিয়ে। রাসূলাল­াহ (সা) ইরশাদ করেছেন, জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ। তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, দোলনা থেকে শুরু করে কবরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মানুষকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, বিদ্বানের কলমের কালি, শহীদের রক্তের চাইতেও পবিত্র। জ্ঞানঅর্জন এক প্রকার ইবাদতের শামিল। জ্ঞানী ব্যক্তিদের মর্যাদার কথা উলে­খ করে আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে যারা জ্ঞানবান। (সূরা যুমার-৯)।
বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষাকে সকলের জন্য সমান মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে তা কি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে?? স্বাধীন বাংলাদেশের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বৈষম্য চোখে পড়ার মত। যদিও সেটা অনেকটা কমে এসেছে। মাদ্রাসায় শিক্ষক সংকট যা একটি অন্যতম বড় বৈষম্য। মাদ্রাসায় একজন শিক্ষককে বিভিন্ন সাবজেক্ট পড়াতে হয় কিন্তু স্কুল- কলেজের জন্য প্রতি সাবজেক্টের জন্য একজন করে শিক্ষক বরাদ্দ। এমন কি পূর্বে মাদ্রাসা ছাত্রদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী,বাংলা,অর্থনীতি, রাষ্টবিজ্ঞান সহ সকল সাবজেক্টে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকলেও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় বাংলা ২০০ ইংরেজী ২০০ নম্বরের শর্তরোপের মাধ্যমে প্রধান নয়টি বিভাগে মাদরাসা ছাত্রদের ভর্তি না করার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিল। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান সহ টপ ২০ জনের মধ্যে প্রায় ০৯/১০ জন থাকার পরও ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়নি এই রকম নজির অনেক। অথচ সরকারী অধ্যাদেশের মাধ্যমে দাখিল ও আলিম কে যথাক্রমে এস এস সি ও এইচ এস সি সমামান দেয়া হয়েছিল।দীর্ঘ ২০/২৫ বছর মাদরাসা ছাত্ররা উপরোক্ত নয়টি বিষয় সহ বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে।
২০১৫ সাল হতে মাদ্রাসা বোর্ড শিক্ষার্থীদের জন্য দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের ইংরেজি ও বাংলা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে ঢাবির এসব বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে আর কোনো বাধা থাকার কথা নয়। তবে চলতি বছর মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সেই শর্ত পূরণ হয়েছে। অভিযোগ আছে, তা সত্তে¡ও ঢাবির ‘খ’ ইউনিটভুক্ত কলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের চয়েস ফরমে অনেকগুলো বিভাগ আসছে না।
মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার উচ্চতর মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। অবশ্য ২০০৬সাল থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া হতে ফাজিল ও কামিল সার্টিফিকেটে বিএ ও মাস্টার্সের মান পেয়েছে। উলে­খ্য মান দেয়ার আগে যারা কামিল শ্রেণীতে অধ্যায়ন করেছিল তাদেরকে একাধারে তাফসীর, হাদীস ও ফিকাহ সহ বিভিন্ন বিষয় পড়তে হয়েছে। যার ফলে বড় আলেম তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু মান দেয়ার পর তাদেরকে এত কিছু পড়তে হচ্ছে না। সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার কারণে তুলনামূলক তেমন কোন আলেম তৈরী হচ্ছে না। এত কিছুর পর প্রশ্ন থেকে যায়, মাদ্রাসায় পড়াশুনার মান বৃদ্ধি পেয়েছে কি?? ফাজিল কামিলকে মান দেয়ার পরও বিসিএস সহ বিভিন্ন সরকারী চাকুরীতে অংশগ্রহণ করার কেন সুযোগ নেই?? আশা করি এই ব্যাপারে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন।
মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন,
সংগঠক ও সমাজকর্মী । চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন