পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের কারণে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান নিশ্চিত করতে কম্বোডিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরতে পারে, সেজন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের কাছেও আমি সহযোগিতা চাইছি, যাতে এ সঙ্কটের একটি টেকসই সমাধানে আমরা পৌঁছাতে পারি।
গতকাল নমপেনে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সা¤প্রতিক কিছু আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দুই পক্ষই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা বলেছে। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও কথা বলেছি, যা আমাদের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিনষ্টের হুমকি তৈরি করছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশকে এখন ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বইতে হচ্ছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ মানুষ মিয়ানমারে সা¤প্রতিক সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়েও আলোচনা করেছেন, যা কিনা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হুন সেন আশা ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়েই এই রোহিঙ্গা শরর্ণার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে নিরাপদে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একযোগে কাজ করবে। তিনি বলেন, দেশে ১৬ কোটি মানুষ থাকার পরেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করে এবং তাদের বিষয়টি নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়ায় আমরা তাদের (বাংলাদেশের) প্রশংসা করছি।
কম্বোডিয়াকে বাংলাদেশের নিকটতম আঞ্চলিক প্রতিবেশি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই দুটি দেশ একই রকম শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের প্রত্যাশী। তিনি বলেন, আমরা অনেক আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ফোরামে পরস্পরকে নিবিঢ়ভাবে সহযোগিতা করে থাকি বিশেষ করে এআরএফ, আসেম, এসিডি এবং জাতিসংঘে।
কম্বোডিয়ায় তার সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসু আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার এবং প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আলোচনার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
কম্বোডিয়ায় পিস প্যালেসে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
এদিকে, গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পিস প্যালেসে পৌঁছালে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় পিস প্যালেসের প্রবেশ দ্বারে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি সুসজ্জিত মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময়ে কম্বোডিয়ার সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন তাদের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এর আগে, পিস প্যালেসে যাবার পথে শত শত স্কুল শিক্ষার্থী রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা নেড়ে এবং ফুল ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়।
এরপর পিস প্যালেসে উভয় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক স¤প্রসারণের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এবং হুন সেন কম্বোডিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে দুই নেতা একান্তে কিছু সময় কাটান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আমন্ত্রণে রবিবার দুপুরের পরে তিনদিনের সরকারি সফরে কম্বোডিয়া পৌঁছান।
শেখ হাসিনাকে ‘বোন’ ডাকলেন হুন সেন
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বোন’ ডেকেছেন। দু‘দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজ দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বোন’ বলে সম্বোধন করেন। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পীচ প্যালেসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্র সচিব কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, আপনি আমার বোনও। এ কারণে আপনাকে আমি আমার বোন হিসেবে সম্বোধন করলাম।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন যখন শেখ হাসিনাকে বোন বলে সম্বোধন করেন, তখন তাকে খুবই আবেগাপ্লুত মনে হচ্ছিল। তিনি বলেন, আমি আমার জীবনে কখনো কোন আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এভাবে কাউকে বোন বলে সম্বোধন করতে দেখিনি।
শহিদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি বলেন, এশিয়ার এ দু’টি দেশের মধ্যে এ যেন একটি বিশেষ সম্পর্ক এবং এ সম্পর্ক আগামীতে বিভিন্ন ভাবে আরও এগিয়ে যাবে।
শহীদুল হক আরও বলেন, দুই নেতার এই নতুন সম্পর্কের কারণে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সফর করে ঢাকা সম্পর্কে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ ধারণার জন্ম নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও কম্বোডিয়ার সাবেক নেতৃত্বের মধ্যেও অনুরূপ একটি বিশেষ সম্পর্ক ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।