ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
বেকারত্ব ঘোচাতে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে
অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় দেশে বেকারত প্রকট আকার ধারণ করেছে। বেকার জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ উচ্চশিক্ষিত। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র সাত লাখ। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে প্রবেশ করা চাকরিপ্রার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার অথবা চাহিদামতো কাজ পাচ্ছেন না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শতকরা ৪৭ ভাগ স্নাতকই বেকার। এই হার প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠী প্রায় তিন কোটি। বেকারত্বের এ ধারা অব্যাহত থাকলে কিছুদিনের মধ্যে তা প্রায় ৬ কোটি হবে। বেকারত্ব আছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১২তম। চিন্তার বিষয় হল, যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও এত মানুষ কেন চাকরি পাচ্ছে না! এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি-
১. উদ্যোক্তা না হয়ে শুধু চাকরিজীবী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করা।
২. আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া।
বিষয় দুটি একটু ভালোভাবে ব্যাখ্যা করছি। আমরা স্নাতক পাস করার পরই বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করা শুরু করি। নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করি না। যেমন যারা কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করেছে, তারা শুধু সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ না করে বিভিন্ন গবেষণায় নিজেদের যুক্ত করে এদেশের কৃষিকে সমৃদ্ধশালী করে তুলতে পারে। রোগবালাই, পোকামাকড়ের হাত থেকে বিভিন্ন ফসলের সুরক্ষা এবং লবণাক্ততা সহনশীল জাত আবিষ্কার করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কাজে নিজেদের যুক্ত করতে পারে। এভাবে একজন ছাত্র যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছে, সেই বিষয়ে নিজেকে যুক্ত করে দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। এতে করে আমরা যেমন বেকার থাকব না, তেমনি দেশও পিছিয়ে থাকবে না।
দ্বিতীয়ত আমাদের দেশে এখন প্রতিবছর হাজার হাজার গ্রাজুয়েট বের হচ্ছেন। তারপরও দেখা যাচ্ছে, বায়িং হাউস ও তথ প্রযুক্তি খাতসহ অন্যান্য খাতে বিদেশিদের প্রাধান্য। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের পড়াশোনার বিষয় এসব পেশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া কিংবা সেগুলোর প্রতি আমাদের অনীহা। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে বিদেশিরা। তারা প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষাকে সেভাবে মর্যাদা দেয়া হয় না। অথচ পার্শ্ববর্তী ভারত কারিগরি শিক্ষাকে যথাযথ মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। যখন কোনো একটি রাস্তা ধরে চলার পর সেখানে সমস্যা সৃষ্টি হয়, তখন সেই রাস্তাটি পরিবর্তন করে অন্য রাস্তা ধরে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ রাস্তা নয়, গন্তব্যে পৌঁছানোটাই মুখ্য। আমরা আমাদের মূল্যবান সময় শুধু চাকরির পেছনে ছুটে নষ্ট করব, এ কেমন কথা! সুখী, সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর দেশ গঠনই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা,
কৃষি অনুষদ, তৃতীয় বর্ষ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।