পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক। প্রথমে ব্যবসায়ী, তারপর স্মার্ট টিভি উপস্থাপক। এ দুই পরিচয়েকে ছাপিয়ে প্রায় তিনি বছর আগে রাজনীতির খাতায় নাম লেখান তিনি। এখানেও চমক। মেয়র নির্বাচনের শুরুতেই প্রচারণায় নেমে নগরবাসীর নজর কেড়েছিলেন নতুন ¯েøাগান আর নতুন ধারার প্রচার দিয়ে। সে সময় তার নির্বাচনী ¯েøাগান ‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধান যাত্রা’। ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিভিন্ন উদ্যোগ এবং নিজের কঠোর অবস্থান বোঝতে নগরবাসী তথা দেশবাসীর বেশি সময় নিতে হয়নি।
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ থেকে শুরু করে উত্তরা, গুলশান, বনানী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর এলাকার রাস্তাঘাট ও ফুটপাথ উন্নয়নে তিনি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। জীবন বাজিরেখে ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে ফার্মগেটের রেলগেট পর্যন্ত সড়ক থেকে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে ৩ ঘণ্টা মালিক শ্রমিকদের দ্বারা অবরুদ্ধ হওয়া। তবে তিনি ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেই চেড়েছেন। পরে ওই সড়কটির আধুনিকায়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সড়কের আইল্যান্ডে লাগিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন গাছ। যে কোন কাজের মান নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ভুঁইফোড়ে ঠিকাদারদের প্রশ্রয় দিতেন না আনিসুল হক। সেইসব ঠিকাদাররা বিভিন্ন সময় মেয়রের নানা জনবান্ধব কাজে বাধাও দিতেন। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটেননি মেয়র। পেশাদার ঠিকাদার ছাড়া অন্যদের নগরভবনে ঘোরাঘুরি নিষিদ্ধ করেন তিনি।
মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন আনিসুল হক। উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার ফুটপাত এবং সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে শুরু হয় তার সেই কাজ। সে সময় কূটনৈতিকপাড়া বারিধারা এবং গুলশানের বিভিন্ন দূতাবাসের দখলে থাকা ফুটপাতও দখলমুক্ত করেন উত্তরের মেয়র।
এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণ, ঢাকা চাকা, বিলবোর্ড উচ্ছেদ, গ্রিন ঢাকা কর্মসূচিসহ বেশকিছু উদ্যোগের জন্য সে সময় আলোচনায় ছিলেন মেয়র আনিসুল। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে তার কাজের সমালোচনাও করেছেন অনেকে। তেজগাঁওয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ট্রাকস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করতে গিয়ে ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বরে মালিক ও চালকদের ক্ষাভের মুখে পড়েন আনিসুল হক। বিক্ষুব্ধ মালিক ও চালকরা আনিসুল হককে প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরদিন নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দখলদারদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, এখানে যদি আর কেউ কোনো কিছু করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের হেব্বি পেটানো হবে। পরে সড়কটি দখলমুক্ত করে সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কে বিভাজক তৈরি করে দেওয়া হয়। এছাড়া সড়কের দুপাশে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে উত্তর সিটি কপোরেশন।
ফুটপাত এবং সড়ক দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো শুরু করে ডিএনসিসি। কয়েকটি অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ফুটপাতের ওপর গড়ে তোলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়ও। এ বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনসহ আটটি দূতাবাসকে ফুটপাত থেকে নিরাপত্তামূলক কংক্রিট প্লান্টার ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা সরাতে চিঠি পাঠায় নগর কর্তৃপক্ষ। আমেরিকান দূতাবাস এবং কানাডিয়ান দূতাবাস নিজেরাই বেস্টনি সরিয়ে পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের দূতাবাস তা না করায় সিটি কর্পোরেশন অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করে ডিএনসিসি। এসব অভিযানের প্রায় প্রতিটিতে মেয়র আনিসুল হক নিজেও অংশ নেন।
আমিন বাজারে দীর্ঘদিন বেদখল থাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫২ একর জমি উদ্ধারেও অভিযান চালান মেয়র। নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে মতামত নিতে ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গণমাধ্যম সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন আনিসুল হক। সেখানে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি এতে সবার সহায়তা চাই। যে কো-অপারেট করবে না, তার খবর আছে। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বনানীতে মোনায়েম খানের পরিবারের দখলে থাকা ১০ কাঠা জমি উদ্ধার করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। সেদিন আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় দিন। সাধারণ মানুষের এ জায়গাটি গত ৫০ বছর ধরে দখল করে রেখেছিল। আমরা শুনেছি এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা সরকারিভাবে যিনি সবচেয়ে বেশি করেছিলেন, যাদের উপর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিশোধ নিয়েছিল। তাদের পরিবারের কাছে এইখানে একটি বিরাট জমি গত ৫০ বছর ধরে পড়ে আছে। সরকারের এ জমি এতদিন ধরে দখল হয়ে আছে, কোনো সংস্থা এর বিরুদ্ধে কোনো কাজ করেনি। পরে সেই জমিতে বনানীর ২৭ নম্বর সড়ক প্রশস্ত করে ডিএনসিসি।
যানজট নিরসনে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে গাবতলীর রাস্তা পার্কিংমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন মেয়র। পরে ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে টেকনিক্যাল মোড়ের বাস স্টপেজ থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত রাস্তা অবৈধ পার্কিংমুক্ত করা হয়। গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ওই এলাকার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সে বছরের ১০ অগাস্ট থেকে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় চালু হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা ‘ঢাকা চাকা’। সেদিনই চালু করা হয় বিশেষ রঙের রিকশা । তবে গুলশান এলাকায় অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় সে সময় অনেকেই মেয়রের সমালোচনা করেন।
বিমানবন্দর সড়কের যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন আনিসুল হক। ইতোমধ্যে মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। রাজধানীর দৃষ্টিদূষণ কমানোর উদ্যোগ হিসেবে বিভিন্ন সড়কে থাকা বৈধ-অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন সরানোরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন উত্তরের মেয়র। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০ হাজার অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
দূষণ কমানো ও সৌন্দর্য্যবর্ধনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন পুরোনো ভবন রঙ করতে বাড়ির মালিকদের প্রতি অনুরোধ করেন মেয়র আনিসুল হক।
গত বছরের ৩১ মার্চ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ভবন মালিকদের অনুরোধ করতে চাই- যাদের ভবন অনেক পুরনো, যেগুলো রঙ করেননি, সেগুলো দূষণ করছে। এগুলো রঙ করেন, তা না হলে মেয়র কিন্তু টাফ হয়ে যাবে। তখন কিন্তু হ্যান্ডেল করতে পারবেন না। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে নগরবাসীর সহায়তা চেয়ে আনিসুল হক বলেন, পাশে থাকেন, ‘ভিন্ন’ ঢাকা পাবেন। মেয়র থাকাকালীন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্ত করার কাজে হাতে দেন মেয়র আনিসুল হক। এ কাজ করতে গিয়ে উত্তরা, রূপনগর ও কালসী রোডের কবরস্থান সরিয়ে নেওয়া হয়।
মেয়রের অনুরোধে মিরপুরের শিয়ালবাড়ির মাদবরবাড়ি কবরস্থান সরিয়ে নেওয়া হয় ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর। এছাড়া সে বছরের ১১ মে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের সরকার পরিবারের কবরস্থানটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এ বছরের ১৮ জানুয়ারি মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে পীরেরবাগের ৬০ ফুট সড়ক পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্ত করার কাজ শুরু করে রাজউক এবং সিটি কর্পোরেশন। ৩১ জানুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান শেষে সড়কের নির্মাণকাজ শুরুর ঘোষণা দেন আনিসুল হক। সেদিন কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমস্ত কাউন্সিলরদের বলেছি, এখনই সময়। আমরা অনেক পরিকল্পনা করেছি বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন কাজের। যারা এ কাজে সহায়তা করবে না তাদের এলাকায় কাজ করব না। আমার স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন, যে কাউন্সিলর এলাকায় রাস্তা পরিষ্কার করে দিতে পারবেন না, উচ্ছেদ হবে না, সে কাউন্সিলরের এলাকায় আমরা উন্নয়ন কাজ করব না।
লাকী আখন্দ অসুস্থ্য হওয়ার পর দুস্থ্য শিল্পী ও কলাকুশলীদের সহায়তায় ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন মেয়র আনিসুল হক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো, আধুনিক এলইডি বাতি স্থাপনের কাজও শুরু করেছিল উত্তর সিটি কর্পোরেশন। গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনতে ফ্র্যাঞ্চাইজি গঠন করে চার হাজার বাস নামানোর উদ্যোগের কথাও আনিসুল হক বলেছিলেন। নগরবাসীর অভিযোগ শোনা এবং নাগরিকরা যাতে ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে ২০১৬ সালের ৩ অগাস্ট চালু হয় ‘নগর’ অ্যাপ। এ বছর রাজধানীতে মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের দায় এড়ানোর চেষ্টা করে সমালোচিত হন আনিসুল হক।
গত ১৪ জুলাই নগর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আপনার ঘরের ভেতরে গিয়ে আমি মশারি টানাতে পারব না। আপনার চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ লাগাতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতর সামান্য স্বচ্ছ পানিতে যে মশা জন্মাচ্ছে, সেটা আমি মারতে পারব না। ওই বক্তব্যের জন্য পরদিন নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন আনিসুল হক। বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা আর বছর জুড়ে খোঁড়াখুড়ির কারণে ভোগান্তির কারণেও ভুক্তভোগীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মেয়র আনিসুল হককে। উত্তরা, গুলশনাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের নামে গাছ কেটে ফেলার কারণেও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সমালোচনা হয়েছে।
মেয়র হিসেবে গত পৌনে তিন বছরে তিনি যা করেছেন, এতেই উত্তর সিটি মানুষের মনে আরও বহু স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার উদ্ভব হয়েছে। এছাড়াও নগরবাসীর কাছে তার আরও বেশ কিছু প্রতিশ্রæতি ছিল। সেগুলোও পূরণের পথে এগুচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সময় তাকে সে সুযোগ আর দিলেন না। সেগুলো বাস্তবায়নের আগেই বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।