পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মায়ের পোড়ে না মাসির বেশি পোড়ে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়েছিল তার সিংহভাগ পূরণ করেছে সরকার। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে আওয়ামী লীগ সরকার মনোযোগী হয়েছে এবং চুক্তির সিংহভাগ ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। কিছু প্রক্রিয়াধীন আছে। আর সামান্য যে কয়েকটি বিষয় বাকি আছে তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সুশীল সমাজের কিছু সদস্যের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চুক্তিতে একটা কথা স্পষ্ট লেখা আছে, সংবিধান অনুযায়ী সব হবে। কেউ কেউ অতি দরদ দেখায়। বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। পার্বত্যবাসী সহজ সরল মানুষ। তাদেরকে উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে পার্বত্যবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। সুশীলদের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, মায়ের পুড়ে না মাসির বেশি পুড়ে। আমরা চুক্তি করেছি, দরদ আমাদের। অবশ্যই আমরা চুক্তির সব পূরণ করবো। তবে সবার সহযোগিতা লাগবে। আমরা চাই পার্বত্যাঞ্চলে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবন থেকে পার্বত্যবাসীর সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আগামীকাল পার্বত্য চুক্তির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই টেলিকনফারেন্সের আয়োজন করে।
পার্বত্য চুক্তির ২০ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানান। এ সময় পার্বত্যবাসীর কল্যাণে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চুক্তিতে আমাদের করণীয় ৭২টা শর্ত ছিল। ৪৮টি ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। ১৫টি আংশিক পূরণ হয়েছে। বাকিগুলোও পূরণ হচ্ছে। এই চুক্তির জটিলতা ভূমিতে বেশি। আশা করি আঞ্চলিক পরিষদ সহযোগিতা করলে সেটাও বাস্তবায়ন করতে পারবো। আমরা ২০১৬ সালে এ সংক্রান্ত আইনও সংশোধন করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে এমন আরও অনেক চুক্তি হয়েছে। জানি না আর কেউ এভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে কি না। আমরা আরও আগেই চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করতে পারতাম। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি বলে সম্ভব হয়নি।
পার্বত্য চুক্তির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মঘাতী সংঘাত শুরু হয়। তখন সামরিকপন্থায় তা নিবারণের চেষ্টা করা হয়, যা ছিল ভুল।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে আমাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী করা হলে আমি দেশে ফিরে আসি। দেশে এসেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত কেন এটা স্থির করি। তখন প্রতি রাতে কারফিউ ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা এমন ভয়াবহ ছিল যে, সেখানে গেলে বেলা তিনটার মধ্যে ফিরে আসতে হতো। প্রতিনিয়ত সংঘাত খুন খারাপি ছিল। আমরা এই অবস্থার মূল কারণ এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তখন বলেছিলাম এটা রাজনৈতিক সমস্যা, রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। আমি একটি কমিটি করে দেই। আতাউর রহমান কায়সার, মহিউদ্দিন চৌধুরী, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে দিয়ে কমিটি করি। ছাত্রনেতা হিসেবে তখন ওবায়দুল কাদেরকেও কিছু দায়িত্ব দেই। আমি নিজেও উদ্যোগ নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা একটি কমিটি করি। তাদেরকে আলাপ-আলোচনার দায়িত্ব দেই। তারা সন্তু লারমার সঙ্গে আলোচনা করে। ৬২ হাজার শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। আমরা তাদেরকেও ফেরত আনার উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, আস্থার একটি জায়গা তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। জিয়াউর রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সমতল থেকে লোক নিয়ে সেখানে রাখা হয়েছিল যাতে দ্ব›দ্বটা বাড়ে। আমরা সেই দ্ব›দ্বটা কমিয়ে আনতেই চুক্তির উদ্যোগ নিই।
শেখ হাসিনা বলেন, চুক্তির পর অস্ত্রধারী সবাই ১৯৯৮ সালের ফেব্রæয়ারি মাসের ১০ তারিখ খাগড়াছড়ি মাঠে আমার কাছে সমর্পণ করেন। এক হাজার ৮০০ লোক আত্মসমর্পণ করেন। আমরা তাদেরকে পুনর্বাসন করি। বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করি। শরণার্থী যারা ছিল তাদের ফিরিয়ে আনি। তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা, তাদের খাবারের ব্যবস্থা পর্যন্ত আমাদের সেনাবাহিনী করে দেয়। অনেকে হয়ত ২০ আগে চলে গেছে, আমি নীতিমালা শিথিল করে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিই। একে একে সব চাহিদা পূরণ করি।
বিএনপি পার্বত্য চুক্তির বিরোধী ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ফেনী পর্যন্ত নাকি ভারতের হয়ে যাবে। আমি পার্লামেন্টে তাকে জিজ্ঞেস করলাম ফেনী পর্যন্ত ভারত হলে তিনি ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য হবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, খাগড়াছড়ি মাঠে অস্ত্র সমর্পণের দিন বিএনপি হরতাল ডাকে। আমি অবাক হয়ে যাই এভাবে শান্তি চুক্তির পর অস্ত্র সমর্পণে বাধা দেয়ার কী কারণ। আমার মনে হয় অস্ত্র বেচাকেনার সঙ্গে তাদের কেউ কেউ জড়িত ছিল, তাদের ব্যবসায় ভাটা পড়বে, তাই বাধা দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী জানান, পৃথিবীর অনেক দেশে শান্তিচুক্তি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফিলিপিন ও আয়ারল্যান্ডের কথা উল্লেখ করে সেখানে অস্ত্র সমর্পণ হয়নি বলে জানান তিনি। যেটা কোনো দেশ পারেনি সেটা তার সরকার পেরেছে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৭০ সালে আমরা পরিবারের সবাই মিলে পার্বত্যাঞ্চলে বেড়াতে যাই। শখ ছিল সাজেকে যাওয়ার। এইচটি ইমাম ছিলেন ডিসি। আমার ফুফা ছিলেন এসডিও। তিনি বললেন, সাজেকে যেতে হলে সাত দিন হাঁটতে হবে। অথচ এখন সোজা গাড়ি করে সাজেকে যাওয়া যায়। শুধু সাজেক নয়, পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প উন্নত হয়েছে।
পার্বত্যবাসীর জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, দীর্ঘদিন পার্বত্যাঞ্চলের মানুষেরা উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। এজন্য তাদের সেই ক্ষতি পূরণের জন্য এখন অন্য এলাকার চেয়ে পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।